বিপ্লবোত্তর সিরিয়ার গ্র্যান্ড মুফতী নিযুক্ত হয়েছেন শায়েখ উসামা আর-রিফায়ী (৮১)।
শনিবার (২৯ মার্চ) দেশটির বিজ্ঞ মুফতী ও স্কলারদের উপস্থিতিতে তাকে এই পদে নিযুক্ত করা হয়।
সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সানার খবরে বলা হয়, সুপ্রিম ফতোয়া কাউন্সিল গঠন ও দেশের প্রধান মুফতী নির্ধারণে প্রেসিডেন্ট আহমাদ শারা আল-জুলানীর আহবানে আজ বিশিষ্ট মুফতী ও স্কলারদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ১৪ জন বিশিষ্ট মুফতীদের নিয়ে সিরিয়ার সুপ্রিম ফতোয়া কাউন্সিল গঠন করা হয় এবং বিজ্ঞ ফকিহ শায়েখ উসামা আর-রাফেয়ীকে দেশের গ্র্যান্ড মুফতী নির্বাচিত করা হয়। যে পদ ২০২১ সালে বিলুপ্ত করে দিয়েছিল খুনী বাশার সরকার।
বৈঠক শেষে সুপ্রিম ফতোয়া কাউন্সিল গঠন, গ্র্যান্ড মুফতী পদ পুনর্বহাল ও নিয়োগের ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট আহমাদ শারা আল-জুলানী বলেন, শাম যতদিন ইলম, জ্ঞান-বিজ্ঞান, সংস্কৃতি ও দাওয়াতের মিম্বার হিসেবে বহাল ছিল ততদিন উম্মাহর জন্য কল্যাণ প্রকাশ পেতো। কিন্তু যখন ফাসাদ সৃষ্টিকারী দুর্নীতিবাজ দলের হাতে এর নিয়ন্ত্রণ চলে যায় এর থেকে অকল্যাণ প্রকাশ পেতে শুরু করে। ব্যাপক বিপর্যয় দেখা দেয়। তারা ক্রমান্বয়ে সিরিয়া ধ্বংসের জন্য কাজ করছিল।
প্রেসিডেন্ট আহমাদ শারা আল-জুলানী আরও বলেন, আজ সিরিয়াকে আমরা এর উলামা, জ্ঞানীগুণী, সকল শ্রেণীর কর্মী ও সন্তানদের সাথে নিয়ে পুনর্গঠনের চেষ্টা করছি। বিশেষত, পূর্বে সীমালঙ্ঘনের জন্য ফতোয়ার আশ্রয় নেওয়ার বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পরে নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণে ফতোয়ার দায়িত্ব, আমানতদারিতা ও গুরুত্ব কারো কাছে অজানা থাকার কথা নয়।
তিনি বলেন, পতিত সরকার সিরিয়ার প্রতিটি ক্ষেত্রকে যেভাবে ধ্বংস করেছে তা পুনর্বহাল ও পুনরুদ্ধার আমাদের উপর আবশ্যক ছিলো। তন্মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিলো আরব প্রজাতন্ত্র সিরিয়ার গ্র্যান্ড মুফতীর পদ ফিরিয়ে আনা। উপযুক্ত ব্যক্তিকে এই পদে নিযুক্ত করা। আলহামদুলিল্লাহ আজ এমন ব্যক্তি এই পদে নিযুক্ত হয়েছেন যিনি শামের উলামাদের মাঝে শ্রেষ্ঠ। তিনি আর কেউ নন, বিশিষ্ট শায়েখ উসামা বিন আব্দুল কারিম আর-রেফায়ী হাফিজাহুল্লাহ।
তিনি আরও বলেন, একইভাবে সুপ্রিম ফতোয়া কাউন্সিল গঠনের মাধ্যমে ফতোয়াকে সম্মিলিত দায়িত্বে ফিরিয়ে আনাও প্রয়োজন। যেন কাউন্সিলে সর্বোচ্চ চিন্তা, গবেষণা ও পর্যালোচনার পরই শুধুমাত্র ফতোয়া জারি হয়। কেননা, ফতোয়া হলো মহান জিম্মাদারি এবং আল্লাহর পক্ষে সাক্ষর। এছাড়াও ফতোয়া কাউন্সিল বাস্তবতার নিরিখে সমসাময়িক ও মৌলিক দ্বীনি আলোচনায় মধ্যপন্থা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করবে, যা বিভক্তির দিকে পরিচালিত করে এমন মতবিরোধ নিরসনে ভূমিকা রাখবে। দ্বন্দ্ব ও অনিষ্টতার দরজা বন্ধ করে দিবে।
প্রেসিডেন্ট আহমাদ শারা আল-জুলানী বলেন, এই সম্মানিত মাসে মহান আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করছি, তিনি যেন আমাদের প্রিয় সিরিয়া পুনর্গঠনে ও একে পুনরায় ন্যায়পরায়ণ, দয়ালু, শক্তিশালী, নিরাপদ রাষ্ট্রে পরিণত করতে সাহায্য করেন। একে এর সন্তানদের জন্য আত্মমর্যাদাশীল রাষ্ট্রে পরিণত করেন।
সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, নবনিযুক্ত সিরিয়ার গ্র্যান্ড মুফতী শায়েখ উসামা রিফায়ী সিরিয়ার প্রখ্যাত রিফায়ী পরিবারের সন্তান। তাঁর বাবা শায়েখ আব্দুল কারিম রিফায়ীও সিরিয়ার শীর্ষ দ্বীনি ব্যক্তিত্ব ছিলেন।
শায়েখ উসামা রিফায়ী ২০১১ সালে বাশার সরকারের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিপক্ষে ও বিদ্রোহী সংগ্রামীদের পক্ষে অবস্থান নিলে বেশ কয়েকবার হত্যাচেষ্টার শিকার হন। এক পর্যায়ে তিনি সিরিয়া ছেড়ে তুরস্কে চলে যান। তুরস্ক সরকার তাঁকে নিজেদের দেশে আশ্রয় দেয়। পরে ২০২৪ এর ডিসেম্বরে বাশার সরকারের পতনের পর সিরিয়া ফিরে আসেন তিনি।