গবেষণাবান্ধব শিক্ষা বাজেট প্রণয়নে প্রস্তাবিত বাজেটের ২০ শতাংশ এবং মোট জিডিপির ৬ শতাংশ বরাদ্দসহ ২০ দফা দাবি নিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে মতবিনিময় ও স্মারকলিপি প্রদান করেছে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ। আলিয়া মাদরাসাসমূহের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বেসরকারি মানসম্পন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারিকরণ এবং কওমি শিক্ষার্থীদের মূল ধারায় কর্মসংস্থানের সুযোগ ও সনদের কার্যকারী মূল্যায়নের দাবিও তুলে ধরা হয়।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) বিকেলে সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরারের সঙ্গে সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের একটি প্রতিনিধি দল এ মতবিনিময় করেন।
দেশের সর্বস্তরের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের শিক্ষা বাজেটের প্রস্তাবনা তুলে ধরেন সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল শেখ মাহবুবুর রহমান নাহিয়ান।
মতবিনিময়কালে ছাত্রসংগঠনটির নেতৃবৃন্দ বলেন, শুধুমাত্র অবকাঠামোগত উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব না দিয়ে গবেষণা, বিজ্ঞানভিত্তিক, কর্মমুখী ও নৈতিক শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবায়নে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
নেতৃবৃন্দ জাতীয়, পাবলিক, প্রাইভেট, মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় ও ল’ কলেজসহ সব ধরণের শিক্ষা ব্যবস্থার মানোন্নয়ন, নৈতিক মূল্যবোধ ও বাস্তবমুখী দক্ষতা অর্জনের সুযোগ সৃষ্টির আহ্বান জানান।
প্রতিনিধি দলে আরও উপস্থিত ছিলেন, সংগঠনের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল ইমরান হোসাইন নূর, যোগাযোগ ও মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পাদক ইউসুফ পিয়াস এবং সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক আব্দুল আজিজ নোমান।
স্মারকলিপিতে ২০ দফা দাবি ও খাতভিত্তিক প্রস্তাবনা পেশ করা হয়।
দাবিগুলো হলো,
১. গবেষণা বান্ধব শিক্ষা বাজেট প্রদান করতে হবে।
২. দেশের সব শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ব্যয়ভার রাষ্ট্রকে বহন করতে হবে।
৩. নৈতিকতা সমৃদ্ধ জাতিগঠনে শিক্ষার সর্বস্তরে কুরআন ও ধর্মীয় শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. প্রাথমিক স্তরে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগের পাশাপাশি শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ নিশ্চিতকল্পে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় বরাদ্দ প্রদান।
৫. শিশুদের জন্য পাঠদানকে আনন্দঘন ও আকর্ষণীয় করার উদ্দেশ্য প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষাদান নিশ্চিতকল্পে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে বরাদ্দ প্রদান।
৬. কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার ৩০ শতাংশে উন্নীত করতে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ প্রদান।
৭. একটি আন্তর্জাতিক মানের মডেল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপনে বিশেষ বরাদ্দ প্রদান।
৮. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার ব্যয়ভার কমাতে প্রস্তাবিত বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
৯. শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহজ শর্তে ঋণগ্রহণ ব্যবস্থা চালু ও তা সহজলভ্য করতে হবে।
১০. নারী শিক্ষার্থীদের অবাধ চলাফেরা, নিরাপত্তা নিশ্চিত ও স্বাতন্ত্র্যতা বজায় রাখতে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আলাদা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে প্রস্তাবিত বাজেটে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
১১. দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যান্টিনে খাবার মান বৃদ্ধি ও হলে যথাযথ সিট ব্যবস্থা করতে হবে।
১২. কওমি মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় উন্নয়নে থোক বরাদ্দ দিতে হবে।
১৩. কওমি মাদরাসার তাকমিল (মাস্টার্স) এর সার্টিফিকেটকে সাধারণ মাস্টার্সের সার্টিফিকেটের মত সমমানের মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে হবে। তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
১৪. কওমি মাদরাসা শিক্ষার্থীদের দেশে ও দেশের বাহিরে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টিতে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
১৫. আলিয়া শিক্ষার অবকাঠামো নির্মাণ ও সম্প্রসারণে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ প্রদান।
১৬. প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কামিল মাদ্রাসার স্থাপনে বিশেষ বরাদ্দ প্রদান।
১৭. প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে বেশি বাজেট প্রদান করতে হবে।
১৮. মৌলিক চাহিদার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিতে হবে।
১৯. মুখস্ত নির্ভর ও সার্টিফিকেট নির্ভর শিক্ষা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
২০. গণমানুষের চিকিৎসার অধিকার নিশ্চিতকল্পে চিকিৎসক তৈরিতে প্রতিটি জেলায় একটা করে মেডিকেল কলেজ স্থাপন করতে হবে ও তাদের কর্মসংস্থান তৈরিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।