মঙ্গলবার | ৩০ সেপ্টেম্বর | ২০২৫

ইনুর মাথা থেকেই হাসিনার মারণাস্ত্র ব্যবহারের উসকানি আসে: ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউটর

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী হাসিনা, হাসানুল হক ইনুসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীর দ্বিতীয় দিনের সাক্ষ্য দিয়েছেন।

হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো ট্রাইব্যুনালে তুলে ধরেন প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম। অভিযোগগুলো হলো, হাসানুল হক ইনু তৎকালীন ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল জাসদের প্রধান হিসাবে ঊর্ধ্বতন অবস্থানে থেকে গত বছরের ১৮ জুলাই ‘মিরর নাউ’ নামে ভারতের মুম্বাইভিত্তিক একটি গণমাধ্যমে আন্দোলন দমনে এবং আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য আন্দোলনকারীদের বিএনপি, জামায়াত, সন্ত্রাসী ও সাম্প্রদায়িক ট্যাগ দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগের উসকানি দেন। তার মাথা থেকেই হাসিনার মারণাস্ত্র ব্যবহারের উসকানিটা আসে।

সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) হাসানুল হক ইনুকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। ইনুর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগের ওপর শুনানির জন্য এক সপ্তাহ সময় চায় প্রসিকিউশন। তবে আসামির পক্ষে আরও দুদিন বাড়িয়ে সময়ের আবেদন করেন নাজনীন নাহার। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আগামী ১৪ অক্টোবর দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।

জুলাই আন্দোলনে কুষ্টিয়ায় ছয়জনকে হত্যাসহ সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় হাসানুল হক ইনুকে একমাত্র আসামি করে গত বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। এতে তার বিরুদ্ধে মোট আটটি অভিযোগ আনা হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ ৩৯ পৃষ্ঠার এই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ)। এতে ২০ জনকে সাক্ষী রাখা হয়। বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-২ এই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন, বিচারক মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার।

প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ তুলে ধরে আরও বলেন, গত বছরের ১৯ জুলাই শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ও হাসানুল হক ইনুর উপস্থিতিতে গণভবনে ১৪ দলীয় জোটের সভায় কোটা সংস্কার ও ছাত্র আন্দোলন দমনে দেশব্যাপী সেনা মোতায়েন করে নিরীহ, নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ দেওয়া হয় এবং সরকার তা কার্যকর করে। এই নির্দেশের সঙ্গে তৎকালীন ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোট সরকারের অংশীদার জাসদের সভাপতি হিসাবে ইনু তার ঊর্ধ্বতন অবস্থান থেকে সরাসরি সম্পৃক্ত হন। তিনি সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নির্দেশ বাস্তবায়নে সহায়তা করেন। সেই সঙ্গে প্ররোচনা দিয়েছেন, উসকানি দিয়েছেন ও সহায়তা করেছেন। ইনু গত বছরের ২০ জুলাই দুপুরে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনের জন্য তার নিজ জেলা কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপারকে ফোন করেন। আন্দোলনকারীদের ছবি দেখে তালিকা প্রণয়ন ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।

ইনু সার্বক্ষণিক শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে আন্দোলন দমনে মারণাস্ত্র (লেথাল উইপন) ব্যবহার করে, ছত্রীসেনা নামানো, হেলিকপ্টার দিয়ে গুলি করে হত্যা, আটক ও নির্যাতনের ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা করেন। শেখ হাসিনাকে এসব নির্দেশনা দেন। গত বছরের ২৭ জুলাই ইনু নিউজ টোয়েন্টিফোর চ্যানেলে আন্দোলনকারীদের বিএনপি, জামায়াত সন্ত্রাসী, জঙ্গি, সাম্প্রদায়িক ইত্যাদি ট্যাগ দিয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। সেই সঙ্গে কারফিউ জারি করে মারণাস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারের হত্যাকাণ্ড সংঘটনসহ নির্যাতন-নিপীড়নকে কৌশলে সমর্থন করেন তিনি।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা, হাসানুল হক ইনু ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা ও নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী এবং পুলিশ নিরীহ-নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন স্থানে গুলি চালায়। এতে সেদিন আশরাফুল ইসলাম, সুরুজ আলী (বাবু), আবদুল্লাহ আল মুস্তাকিন, মো. উসামা, বাবলু ফরাজী ও ইউসুফ শেখ নামের ছয়জন নিহত হন। গত বছরের ২৬ আগস্ট রাজধানীর উত্তরা থেকে হাসানুল হক ইনুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বর্তমানে বিভিন্ন মামলায় কারাগারে রয়েছেন তিনি।

spot_img
spot_img

এই বিভাগের

spot_img