বুধবার, এপ্রিল ২, ২০২৫

আজ ঈদুল ফিতর | ঈদ মোবারক

এক মাস সিয়াম সাধনার পর আজ সারাদেশে উদযাপিত হচ্ছে মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার পর রবের দরবারে শুকরিয়া আদায় করে মুসলমানরা এই দিনটিকে পালন করে সম্মিলিত আনন্দের উৎসব হিসেবে।

ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। ‘ফিতর’ অর্থ ভঙ্গ করা বা রোজা শেষ করা। দীর্ঘ এক মাস রোজা, তারাবির নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, জাকাত-ফিতরা আদায় শেষে মহান আল্লাহ তায়ালার কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মুসলমানরা ঈদ উদযাপন করে। ঈদের সকালে মুসল্লিরা ঈদগাহে গিয়ে একসঙ্গে সালাত আদায় করেন। সালাত শেষে সালাম, মুসাফাহা ও মু‘আনাকার মাধ্যমে মুসলিম সমাজে ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্বের দৃঢ় বন্ধন তৈরি হয়।

সামাজিক সৌহার্দ্য ও সহমর্মিতার দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠে এই ঈদ। ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই এক কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে, ঈদের আনন্দ ভাগ করে নেয়। ঈদের পূর্বে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করে দরিদ্রদের মাঝে ঈদের খুশি ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এভাবেই ঈদ পরিণত হয় এক সার্বজনীন ও মানবিক উৎসবে।

ঈদ শব্দটি আরবি, যার অর্থ খুশি, আনন্দ, উৎসব। ইতিহাসে প্রথম ঈদ পালিত হয় হিজরি দ্বিতীয় সনে, ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে, মদিনায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় এসে দেখেন, লোকেরা ‘নওরোজ’ ও ‘মেহেরজান’ নামে দুটি উৎসব পালন করছে। তিনি বলেন, “আল্লাহ তোমাদের জন্য তার চেয়ে উত্তম দুটি দিন দিয়েছেন— ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা।” এভাবেই মুসলমানদের নিজস্ব উৎসবের সূচনা হয়।

রাসূল (সা.) বলেন, “রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ— একটি রোজা ভঙ্গের সময়, অপরটি আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতে।” আরেক হাদিসে এসেছে, ঈদের দিন আল্লাহ ফেরেশতাদের ডেকে বলেন, “আমার বান্দারা দায়িত্ব পালন করেছে, তাকবির উচ্চারণ করে এসেছে। আমি তাদের ক্ষমা করে দিলাম।” এই দিনটি তাই ক্ষমা ও রহমতের দিন।

ঈদের দিন ফজরের পর থেকে ঈদের সালাত আদায় পর্যন্ত সময়টিকে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় সময় বলা হয়েছে। ঈদের নামাজের আগে ও পরে তাকবির বলা, পবিত্রতা রক্ষা এবং সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। সূরা বাকারা-১৮৫-এ আল্লাহ বলেন, “তোমরা রমজানের সংখ্যা পূর্ণ করো এবং আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করো, যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো।”

বাংলাদেশে ঈদুল ফিতর একটি জাঁকজমকপূর্ণ ও ঐতিহাসিক উৎসব। মোগল আমলে এটি জনপ্রিয়তা পায়, সৈন্যদের শিবিরে ঈদের ঘোষণা দেওয়া হতো, ঈদগাহে শোভাযাত্রা বের হতো। ঢাকার জাতীয় ঈদগাহ ময়দান, বায়তুল মোকাররমসহ সারাদেশে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

এ অঞ্চলে মুসলিম সংস্কৃতি প্রচারের জন্য আগত সুফি-দরবেশ ও বণিকদের মাধ্যমেই ঈদের প্রচলন বিস্তৃত হয়। ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম শাসনের সূচনা হলেও এরও আগে থেকেই বাংলার মানুষ ঈদ উদযাপন শুরু করেছিল। আজও শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে প্রতিটি ঘরে ঘরে।

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ইনসাফের সকল পাঠক, দর্শক, শুভাকাঙ্ক্ষী ও মুসলিম উম্মাহকে জানাই ঈদ মোবারক ও আন্তরিক শুভেচ্ছা।

আসুন, ঈদের এই পবিত্র দিনে আমরা সকল ভেদাভেদ ভুলে একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হই, ভালোবাসা ছড়িয়ে দিই পরিবার, সমাজ ও দেশজুড়ে। তাকওয়ার আলোয় আলোকিত হোক আমাদের জীবন। ইনসাফের সাথেই থাকুন।

spot_imgspot_img

সর্বশেষ

spot_img
spot_img
spot_img
spot_img