মঙ্গলবার | ১৬ সেপ্টেম্বর | ২০২৫

বোরখার উপর নিষেধাজ্ঞা ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি লঙ্ঘন করে: ফ্রান্সের আইনজীবী

বোরখা কোন ধরনের ধর্মীয় পোশাক নয়, আর এই ঢিলেঢালা পোশাকের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করার মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিমালা লঙ্ঘিত হয়েছে বলে দাবি করেছেন ফ্রান্সের একজন প্রসিকিউটর। সম্প্রতি দেশটির উচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন তিনি।

চলতি মাসের ৭ তারিখ ফ্রান্সের সরকারি স্কুলগুলোতে মুসলিম শিক্ষার্থীদের লম্বা ও ঢিলেঢালা পোশাক হিসেবে পরিচিত বোরখার উপরে নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখে ফ্রান্সের স্টেট কাউন্সিল। তবে স্টেট কাউন্সিলের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে দেশটির সুড এডুকেশন প্যারিস, লা ভয়েক্স লাইসেন ও লে পোয়িং লেভ লিসি নামের তিনটি সংগঠন।

গত মঙ্গলবার, আদালতে এ রায়ের শুনানির সময় পূর্বের রায়গুলো স্থগিত করার অনুরোধ করেন ইউনিয়নের আইনজীবী ক্লারা গান্ডিন।

আদালতের শুনানি শেষে আনাদোলু নিউজ এজেন্সিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্লারা গান্ডিন বলেন, সাধারণ মানুষের মতে বোরখা কোন ধর্মীয় পোশাক নয়। এ বিষয়টি প্রমাণের জন্য তিনি ধর্মনিরপেক্ষ ইতিহাসবিদ, ইসলামী সংস্কৃতির উপর বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি ও ধর্মীয় বিষয়ে পাণ্ডিত্য অর্জনকারীদের বিভিন্ন ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন।

তার মতে, লম্বা ও ঢিলেঢালা বোরখাকে ধর্মীয় পোশাক হিসেবে নির্ধারণের মাধ্যমে নিজেকে একজন ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের (পন্ডিত) জায়গায় বসিয়েছেন ফরাসি শিক্ষামন্ত্রী গ্যাব্রিয়েল আটাল।

শুনানিতে অংশ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও “লে পোয়িং লেভ” ইউনিয়নের সদস্য আরিয়ান অ্যানেমোয়ানিস এই নিষেধাজ্ঞাকে একটি ‘কেলেঙ্কারি’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তার মতে, মুসলিম শিক্ষার্থীদের লক্ষ্যবস্তু করে জারি করা এই নিষেধাজ্ঞাটি মুসলিম বিরোধী ও ইসলামোফোবিয়া সৃষ্টি করার অন্যতম একটি পদক্ষেপ।

ইয়েলেনা ম্যান্ডেঙ্গু নামে একজন আইনজীবী ও নারী অধিকার কর্মী বলেছেন, সরকার কর্তৃক বোরখার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা নারী অধিকার লংঘন করে।

তবে আদালত সরকারি নিষেধাজ্ঞা বৈধ উল্লেখ করে তার পূর্বের রায়েই (৭ সেপ্টেম্বর) বহাল রয়েছে।

যে রায় ঘোষণার পর এক বিবৃতিতে আদালত জানিয়েছিল, “এই নিষেধাজ্ঞাটি ব্যক্তি জীবন, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও শিক্ষার অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে গুরুতর লঙ্ঘন করেনা। এছাড়াও এটি (নিষেধাজ্ঞা) স্পষ্টভাবে অবৈধ নয়।”

গত ৩১ আগস্ট, মুসলিম রাইটস অ্যাকশন (এডিএম) গ্রুপের একজন আইনজীবী ভিনসেন্ট ব্রেনগার্থ, বোরখার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের উদ্দেশ্যে রাজসভায় আপিল করেন। তার দাবি এই নিষেধাজ্ঞাটি ‘বেশ কিছু মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন’ করে।

বিতর্কিত নিষেধাজ্ঞাটি ফ্রান্স সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। এছাড়াও গত কয়েক বছর ধরে দেশটির মুসলিমদের বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠান ও মসজিদে অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি বিভিন্ন বিবৃতি ও নতুন আইনের মাধ্যমে মুসলিম সম্প্রদায়কে লক্ষ্য বস্তু করার বিষয়টিও সমালোচিত হয়ে আসছে।

সূত্র: মিডল ইস্ট মনিটর

spot_img
spot_img

এই বিভাগের

spot_img