সম্প্রতি আফগানিস্তান সফর করেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি। তালেবানের আফগান বিজয়ের পর এটি ছিল দুই দেশের মধ্যে প্রথম উচ্চ পর্যায়ের সফর।
সফরের অংশ হিসেবে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠক করেছেন আফগান প্রধানমন্ত্রী মোল্লা হাসান আখুন্দ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী মাওলানা ইয়াকুব মুজাহিদ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাওলানা আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে। বৈঠকে সীমান্ত নিরাপত্তা, শরণার্থী সংকট, পানি বণ্টন ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়।
সীমান্ত নিরাপত্তা ও শরণার্থী ইস্যু
বর্তমানে ইরানে প্রায় ৩৫ লাখ আফগান শরণার্থী রয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের দেশে ফেরানোর বিষয়ে আলোচনা করেন। তবে তালেবান প্রশাসন চায়, তাদের সঙ্গে সম্মানজনক আচরণ করা হোক।
আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “তাদের অবস্থা যেন ভালো হয়, সে ব্যাপারে ইরানকে নজর দিতে হবে। আমরা চাই, তারা সম্মানের সঙ্গে দেশে ফিরে আসুক। তবে এটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার, এজন্য ইরানের সহযোগিতা প্রয়োজন।””
বৈঠকে ইরানে আফগান নাগরিকদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, গত তিন বছরে ইরান সরকার ১১৬ জন আফগান নাগরিককে ফাঁসি দিয়েছে। তবে ইরান আশ্বস্ত করেছে, তারা আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না।
পানি বণ্টন চুক্তি
বৈঠকে হেলমান্দ নদীর পানি বণ্টন নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। ইরান চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নের দাবি জানায়, যাতে দুই দেশের মধ্যে পানির ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত হয়।
আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পুরো অঞ্চল খরার শিকার হয়েছে। আমরাও ভুগছি। আমরা চাই, হেলমান্দ, নিমরোজ, সিস্তান ও বেলুচিস্তানের সবাই পানি পাক। তবে এটি নির্ভর করছে বৃষ্টির ওপর।”
অর্থনৈতিক সহযোগিতা
বৈঠকে তেহরান ও কাবুল রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারে একমত হয়েছে। ইরান আশা করছে, ভবিষ্যতে নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব আরও সম্প্রসারিত হবে। তালেবান সরকারও ইরানের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমাদের মধ্যে অনেক মিল আছে। স্বার্থ রক্ষা করতে হলে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও বাড়াতে হবে। তালেবান সরকার আসার পর আফগানিস্তানের নিরাপত্তা উন্নত হয়েছে। দীর্ঘ যুদ্ধের পর দেশ এখন শান্ত। এটি পুরো অঞ্চলের জন্যই ভালো।”
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি বলেন, “আফগানিস্তানে শান্তি বজায় থাকলে সেটি ইরানের জন্যও ভালো। তালেবান সরকার তিন বছরে অনেক উন্নতি করেছে। এই সফর দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নেবে।”
তিনি আফগান সরকারের মাদকবিরোধী অভিযানের প্রশংসা করেন এবং বলেন, “এই বিষয়ে দুই দেশের সংস্থাগুলোর একসঙ্গে কাজ করা উচিত।”