মসজিদে আকসার সাবেক ইমাম শায়েখ ইকরিমা সাঈদ সাবরী ও বাশারের পতনে মুক্ত সিরিয়ার দীর্ঘতম বন্দী পাইলট রাগিদ আল তাতারীকে (৭১) সম্মাননা প্রদান করলো তুরস্ক।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান তুরস্কের ৮ম আন্তর্জাতিক সৎ কাজের প্রতীক সম্মাননা অনুষ্ঠানে তাদের সম্মানিত করেন।
তুর্কি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ৮ম বারের মতো আয়োজিত অনুষ্ঠানটি এরদোগানের ফেসবুক পেজে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।
তুর্কি ধর্ম মন্ত্রণালয় দিয়ানাতের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ইহুদিবাদী সন্ত্রাসীদের অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের হুমকি, দমন-পীড়ন ও কারারুদ্ধ করা সত্ত্বেও সত্য ও ন্যায়ের উপর অটল থাকায় মুসলিমদের ৩য় পবিত্রতম মসজিদ, মসজিদে আকসার সাবেক ইমাম ও খতিব এবং কুদসের গ্র্যান্ড মুফতী শায়েখ ইকরিমা সাঈদ সাবরীকে ‘আন্তর্জাতিক সৎ কাজের প্রতীকে’ ভূষিত করেছে তুরস্ক। প্রেসিডেন্ট এরদোগান নিজেই সম্মাননা স্বরূপ তার হাতে বিশেষ স্বারক তুলে দেন।
এছাড়া সিরিয়ার বিমান বাহিনীর সাবেক পাইলট রাগিদ আল তাতারীকেও (৭১) আন্তর্জাতিক সৎ কাজের প্রতীকে ভূষিত ও সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন তিনি। রাগিদ আল তাতারি সিরিয়ার সাবেক খুনি প্রেসিডেন্ট হাফেজ আসাদের নির্দেশে ১৯৮২ সনে গণহত্যার লক্ষ্যে বোমা বর্ষণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। যার কারণে তাকে বিমান বাহিনী থেকে বরখাস্ত করেছিলেন সাবেক স্বৈরাচার হাফেজ আসাদ। নিক্ষেপ করেছিলো পৃথিবীর অন্যতম কুখ্যাত কারাগার সাইদু নায়ায়। যেখানে তিনি হাফেজ আসাদের সময় থেকে নিয়ে তার খুনি প্রেসিডেন্ট পুত্র বাশারের পতন পর্যন্ত দীর্ঘ ৪৩ বছর বন্দী ছিলেন। জটিল নির্মাণশৈলীতে ভয়ংকর ভাবে তৈরিকৃত কারাগারটি থেকে ২০২৫ এর শুরুতে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়।
সাবেক আকসা খতিব ও সিরিয় বোমারু বিমানের পাইলট সহ মোট ৭ জনকে এবার এই সম্মাননা জানানো হয়েছে, যার মধ্যে ওমর আসিফ কার নামের এক তুর্কি শিশুও রয়েছে।
ওমর আসিফ কার তার স্কুলে ইসরাইল-আমেরিকার পণ্য বোঝায় ট্রাক প্রবেশে বাঁধা দিয়েছিলো। তার বন্ধুদের নিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে বলেছিলো, আমরা আমাদের দৈনন্দিন খরচা বোমা হিসাবে ফিলিস্তিনে পাঠাতে চাই না। পরবর্তীতে সে বিশ্বকে জুলুমের সামনে মুখে কুলূপ এটে বসে না থেকে ফিলিস্তিনিদে বাঁচাতে কঠিন জবাব দেওয়ারও আহবান জানিয়েছিলো।
সম্মাননা প্রাপ্তদের মধ্যে আরো রয়েছেন ড. গুল হানিম বায়রাক। মাতৃত্ব ও পরিবার বিষয়ে বিশেষ অবদান রাখায় তাকে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়।
আনাতোলিয়ার ইউজে জামে মসজিদের ইমামা শায়েখ হাসান কোজ, যিনি গ্লুটিন মুক্ত রুটি তৈরি ও সেলিয়াক রোগাক্রান্তদের জন্য তুরস্ক জুড়ে বিনামূল্যে তা বিতরণ, প্রতিবন্ধীদের মাঝে ইসলাম ও মসজিদের ভালোবাসা তৈরি করা ও ইসলাম শিক্ষা প্রদানে বিশেষ অবদান রেখে যাচ্ছেন।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও দানবীর হাজ্বি ফাওজি শিনার, যিনি ২০১৩ সাল থেকে ধর্ম মন্ত্রণালয়কে তুরস্ক জুড়ে ১৪০টির অধিক কুরআন শিক্ষা কেন্দ্র খুলতে ও তা পরিচালনা করতে সাহায্য করেছেন। মসজিদ, হাসপাতাল থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামের জন্য অকাতরে দান ও ওয়াকফ করেছেন। তার সহায়তার বদৌলতে এখন পর্যন্ত ১৫ লক্ষ শিশু কুরআন শিক্ষা লাভ করেছে ও কুরআনের হাফেজ হয়েছে।
এই তালিকার অন্যতম ব্যক্তিত্ব হলেন, সম্প্রতি ইন্তেকাল করা বিখ্যাত ক্লাসিকাল উসমানী ক্যালিগ্রাফার হাসান জালেবি। উসমানী ক্যালিগ্রাফিতে বিশেষ অবদান রাখার পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী তা ছড়িয়ে দিয়েছেন যিনি। তার পক্ষ থেকে তার সন্তান এই সম্মাননা গ্রহণ করেন।