মসজিদে এলাকার বাইরের লোকজনের নামাজ আদায়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকারের নেতৃত্বাধীন পুনে জেলার গ্রাম পঞ্চায়েত।
সম্প্রতি নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলার দোহায় দিয়ে মসজিদে নামাজ আদায়ে নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত আইনটি পাশ করা হয়।
সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, আইনটি পাশে প্রথমে পুনে জেলার মুলশী তহসিলভূক্ত গ্রামগুলোর পঞ্চায়েতের সম্মিলিত বৈঠকে প্রস্তাবনা রাখা হয়। এতে পাহেলগাঁওয়ের প্রশ্নবিদ্ধ সন্ত্রাসী হামলার প্রসঙ্গ টেনে গ্রামের নিরাপত্তা জোরদার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কারণ দেখিয়ে গ্রামের বাইরের মুসলমানদের স্থানীয় মসজিদে, বিশেষত জুম’আর নামাজ আদায় করতে না দেওয়ার প্রস্তাব পেশ করা হয়।
পরবর্তীতে এই প্রস্তাবনা পাশ হলে জনমনে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি অনলাইনে উঠে আসলে সেখানেও তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে। অমুসলিমদের মাঝেও দেখা দেয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
ইতিমধ্যে পুনের ঘোটাওয়াড়ে, পিরানহুট, ওয়াদকি ও লাভলে গ্রামের মতো স্থানে এই নিষেধাজ্ঞার নোটিশও ঝুলিয়ে দিতে দেখা যায়। নোটিশে “শুধুমাত্র স্থানীয়রাই এলাকার মসজিদে নামাজ পড়তে পারবে” বলে লেখা থাকতে দেখা যায়। নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলার সমস্যাকে এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
পিরানহুট গ্রামের এক পুলিশ কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, শুক্রবার গ্রামের মসজিদগুলোতে বাইরের লোকজনের সংখ্যা বেড়ে যায়। নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলার জন্য যা সম্ভাব্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। তাই শুধুমাত্র স্থানীয়দের মসজিদে নামাজ পড়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।
এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নেটিজেনরা ব্যাপকভাবে সমালোচনা করছেন। তারা বলছেন, সিদ্ধান্তটি এমন সময়ে আসলো, পেহেলগাঁওয়ের প্রশ্নবিদ্ধ সন্ত্রাসী হামলায় মুসলিমরা যেখানে শুরু থেকেই বৈষম্য ও বিদ্বেষের শিকার, সেখানে এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সমাজে তাদের আরো সংকুচিত করা হলো। আরো বৈষম্য ও বিদ্বেষের বহিঃপ্রকাশ ঘটানো হলো।
অপরদিকে ভারতীয় মুসলিমদের ধর্মীয় ও জনপ্রতিনিধিরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এই সিদ্ধান্ত ধর্মীয় জীবন এবং সামাজিক সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এটি ব্যবসায়ী ও সফররত মুসলিমদের জন্যও অনেক অসুবিধার সৃষ্টি করবে।
এই ঘটনার প্রতিবাদে, পুনে জেলার অল ইন্ডিয়া মাজলিসে ইত্তেহাদুল মুসলিমীনের (AIMIM) সভাপতি ফয়েজ শেখ বলেন, গ্রাম পঞ্চায়েতের গৃহীত প্রস্তাবনাটি অসাংবিধানিক। এটি মুসলিমদের জনবিচ্ছিন্ন করার ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় উসকানির অপচেষ্টা।
স্থানীয় বলছেন, পুনের মুসলিম সম্প্রদায় ও তাদের প্রতিনিধিদের সাথে কোনো ধরণের পরামর্শ না করেই এই প্রস্তাবনা গ্রহণ করেছে জেলার পঞ্চায়েতগুলো। তারা এখন পর্যন্ত এবিষয়ে কোনো অভিযোগ দায়ের করেননি।
সূত্র: মুসলিম মিরর









