ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ভাই মুহাম্মদ সিনওয়ারকে হত্যার নামে গাজ্জার ইউরোপিয়ান হাসপাতালে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইহুদিবাদী সন্ত্রাসীদের অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইল।
বুধবার (১৪ মে) মিডল ইস্ট মনিটরের খবরে একথা জানানো হয়।
খবরে বলা হয়, দখলদার ইসরাইলের বর্বর বাহিনী গতকাল গাজ্জার খান ইউনিসের পূর্বে অবস্থিত ইউরোপিয়ান হাসপাতালকে লক্ষ্য করে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে। হামলায় ২৮ জন সাধারণ ফিলিস্তিনির নির্মম মৃত্যু হয়।
আন্তর্জাতিক হাসপাতালটিতে হামলার জবাবদিহিতায় ইসরাইলী বাহিনী জানায় হামাসের অন্যতম নেতা মুহাম্মদ সিনওয়ারকে হত্যার উদ্দেশ্যে তারা হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে।
গাজা স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় ও সিভিল ডিফেন্স পৃথক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইসরাইলী বোমা হামলায় ইউরোপিয়ান হাসপাতালে ৬ জন এবং হাসপাতাল সংলগ্ন আল-আফগানী পরিবারের ঘরগুলোতে ২৮ জন মোট ৩৪ জন ফিলিস্তিনি শাহাদাত বরণ করেছেন। এক্ষেত্রে আগুনে বেল্ট বোমা ব্যবহার করেছে বর্বর ইসরাইলী সেনারা।
সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, ইসরাইলী দখলদার বাহিনী স্বীকার করেছে যে তারা হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে। তবে তারা দাবি করছে সাধারণ ফিলিস্তিনি ও চিকিৎসা নিতে আসা লোকজনকে হত্যা তাদের উদ্দেশ্য ছিলো না। বরং হামাস যোদ্ধারা ছিলেন তাদের লক্ষ্যবস্তু, যার মধ্যে ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ভাই মুহাম্মদ সিনওয়ারও ছিলেন।
অপরদিকে ইসরাইলী সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেত অপর এক যৌথ বিবৃতিতে দাবি করেছে যে, গাজ্জার ইউরোপিয়ান হাসপাতালের নিচে ভূগর্ভে গড়ে উঠা হামাসের কমান্ড ও কন্ট্রোল কম্পাউন্ডের অবকাঠামো ছিলো তাদের হামলার লক্ষ্য উদ্দেশ্য। যে ধরণের দাবির ইতোপূর্বেও কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
ইসরায়েলি আর্মি রেডিও জানিয়েছে, এই হামলা ছিলো মুহাম্মদ সিনওয়ারকে হত্যা করার দুর্লভ সুযোগ। তবে হামলায় তিনি নিহত হয়েছেন কি না তা এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ইসরাইলী নিরাপত্তা সূত্রগুলো জানিয়েছে, তারা ধারণা করছে মুহাম্মদ সিনওয়ার তাদের হামলার সময় ওই কম্পাউন্ডে অবস্থান করছিলেন। হামলায় স্থাপনাটির অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যদি সিনওয়ার সেখানে থেকে থাকেন তবে তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।
তারা আরও জানায়, নির্ধারিত স্থানে কোনো ইসরাইলী বন্দী না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হামলার পূর্বে ইসরাইলী গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। তবে তারা এও স্বীকার করেছে যে, সর্বোচ্চ চেষ্টা সত্ত্বেও এবিষয়ে তারা শতভাগ নিশ্চিত হতে পারেনি। যা তাদের বক্তব্যের সাথে সাংঘর্ষিক। কেননা একদিকে দাবী করা হয়েছে যে, তা ছিলো হামাসের আন্ডারগ্রাউন্ড কম্পাউন্ড, যেখানে মুহাম্মদ সিনওয়ার ও হামাস সদস্যরা অবস্থান করছে। আবার অপরদিকে দাবী করা হচ্ছে যে, বন্দী না থাকার বিষয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা সত্ত্বেও তারা শতভাগ নিশ্চিত নয়।
এছাড়া মুহাম্মদ সিনওয়ারের ব্যাপারে ইসরাইল দাবী করে, মুহাম্মদ দেইফকে হত্যা পরবর্তী সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তিনিই সংগঠনের সামরিক শাখার নেতৃত্ব গ্রহণ করেছিলেন। অতীতে ইসরাইলী সৈনিক গিলাদ শালিতকে আটকের মতো গুরুত্বপূর্ণ অভিযানে তিনি সম্মুখভাগে ছিলেন।
ইসরাইলী গণমাধ্যমের তথ্যমতে, বন্দী বিনিময় চুক্তির সবচেয়ে কট্টর বিরোধীও হলেন এই মুহাম্মদ সিনওয়ার।
ইসরাইলের মুহাম্মদ সিনওয়ারকে নিয়ে বিভিন্ন দাবী করলেও হামাস এখনো এই হামলা ও মুহাম্মদ সিনওয়ারের হতাহতের দাবী প্রসঙ্গে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি।