সোমবার | ১৩ অক্টোবর | ২০২৫

মামলার কবলে পড়তে যাচ্ছে টেলিনর; অভিযোগ মায়ানমারের জান্তা সরকারকে তথ্য সরবরাহের

জনগণকে দমন-পীড়নে জান্তা সরকারকে তথ্য সরবরাহের অভিযোগে নরওয়ের আন্তর্জাতিক টেলিকম কোম্পানি টেলিনরের বিরুদ্ধে মামলা করতে যাচ্ছে মায়ানমারের নাগরিক সমাজের একটি দল।

মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে একথা জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দমন-পীড়নের জন্য মায়ানমারের সামরিক সরকারের কাছে গ্রাহকদের তথ্য পাচারের অভিযোগে নরওয়েজিয়ান টেলিকম কোম্পানি টেলিনরের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির নাগরিক সমাজের একটি দল।

নেদারল্যান্ডস-ভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অন মাল্টিন্যাশনাল কর্পোরেশনস (এসওএমও) তেমনি একটি দলের পক্ষ থেকে মামলা করতে যাচ্ছে মর্মে আন্তর্জাতিক টেলিকম কোম্পানিটির কাছে গত সোমবার (৬ অক্টোবর) একটি নোটিশ পাঠায়।

মামলার নোটিশে বলা হয়, ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে মায়ানমারের সেনাবাহিনী টেলিকম জায়ান্টের শেয়ার করা তথ্য অভ্যুত্থান বিরোধী বেসামরিক নাগরিকদের খুঁজে বের করতে এবং তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করার কাজে ব্যবহার করেছিলো।

নরওয়েজিয়ান সরকারের মালিকানাধীন টেলিনর লক্ষ লক্ষ গ্রাহকের তথ্য সামরিক কর্তৃপক্ষের কাছে প্রকাশ করে, যা দেশটির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করার পর ব্যাপক আকারে সহিংসতা ও দমন-পীড়ন অভিযান শুরুতে ভূমিকা রাখে। হাজার হাজার অভ্যুত্থান বিরোধী বেসামরিক লোকজনের নির্যাতন ও নিপীড়নের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আটক একজনের মৃত্যুদণ্ডও কার্যকর করা হয়েছিলো সেই সময়।

নরওয়েজিয়ান ফার্ম সাইমনসেন ভোগ্ট উইগের আইনজীবী জ্যান ম্যাগনে ল্যাংসেথ বলেন, জান্তা সরকারের কাছে টেলিনর কর্তৃপক্ষের তথ্য হস্তান্তর মোটেও উচিত হয়নি। এর জন্য অবশ্যই কোম্পানিটিকে জবাবদিহি করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, যদিও তারা চাপের মুখে লেবাননের বিনিয়োগ সংস্থা এম১ গ্রুপ ও সংখ্যাগরিষ্ঠ শেয়ারের মালিক শোয়ে বায়াইন ফিউয়ের কাছে নিজেদের মায়ানমারের স্বত্ব বিক্রি করে দেশটি থেকে বিদায় নিয়েছিলো। কিন্তু বিদায় নেওয়ার আগে সমস্ত সংবেদনশীল তথ্য মুছে ফেলা উচিত ছিলো।

রয়টার্স সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া এক বিবৃতিতে টেলিনর কর্তৃপক্ষ বলেছে যে, তাদের বিশ্বাস, আইনি নোটিশটিতে এমন কিছু বিষয় উত্থাপন করা হয়েছে যা ইতিমধ্যেই সমাধান করা হয়েছে, যার মধ্যে নরওয়ের পূর্ববর্তী পুলিশ এবং আদালতের তদন্তও অন্তর্ভুক্ত।

কোম্পানিটি আরো বলেছে যে, সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারে তারা একটি ভয়াবহ ও দুঃখজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলো। যাদের কাছে যেভাবে স্বত্ব বিক্রি করা হয়েছে মায়ানমার থেকে বেরিয়ে যেতে হয়েছে, তা ছাড়া আর কোনো ভালো বিকল্পও ছিলো না। কারণ সামরিক সরকারের আদেশ অমান্য করা তখন সন্ত্রাসবাদ এবং নাশকতা হিসাবে বিবেচিত হতো এবং নিজেদের কর্মীদের সরাসরি বিপদের মুখে ঠেলে দিতো।

অন্যান্য দেশের অপারেটরগুলোর মতোই ‘টেলিনর মায়ানমারকে’ আইনত কর্তৃপক্ষকে ট্র্যাফিক ডেটা সরবরাহ করতে বাধ্য করা হয়েছিলো।

উল্লেখ্য, নরওয়েজিয়ান আন্তর্জাতিক টেলিকম কোম্পানি টেলিনর মায়ানমার ছাড়া বাংলাদেশ ও রাশিয়াতেও ইতোপূর্বে তথ্যগত ও অর্থ-আইনের কারণে মামলার কবলে পড়েছিলো।

খোদ নরওয়েতেই কোম্পানিটির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ‘তথ্য-প্রযুক্তির অপব্যবহার’ মামলা চলমান ছিলো।

spot_img
spot_img

এই বিভাগের

spot_img