নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী নতুন আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন করলো উত্তর কোরিয়া।
শনিবার (১১ অক্টোবর) আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে একথা জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উনের নেতৃত্বাধীন ওয়ার্কার্স পার্টি অফ কোরিয়া (ডাব্লিউপিকে) এর ৮০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানী পিয়ং ইয়ংয়ে শুক্রবার একটি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে দেশটি তাদের নতুন ও সবচেয়ে শক্তিশালী আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের প্রদর্শন করে।
দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম কেসিএনএ, অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচারের সময় একে উ.কোরিয় সামরিক বাহিনীর তৈরি সবচেয়ে শক্তিশালী পারমাণবিক কৌশলগত অস্ত্র ব্যবস্থা বলে বর্ণনা করে, যার নাম ‘হোয়াসং-২০ আইসিবিএমকে’। কুচকাওয়াজে এটিকে ১১-অ্যাক্সেল লঞ্চার ট্রাকে করে প্রদর্শন করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক আন্তর্জাতিক শান্তি সংস্থা কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের অঙ্কিত পান্ডে এবিষয়ে বলেন, ‘হোয়াসং-২০’ এই মুহূর্তে উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী দূরপাল্লার আন্ত:মহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। এটি তাদের দূরপাল্লার পারমাণবিক অস্ত্র সক্ষমতায় উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রতীক। এই বছর শেষ হওয়ার আগে আগেই তারা এটির পরীক্ষা চালাতে পারে বলে আমরা প্রবল ধারণা করছি।
তিনি আরো বলেন, এই সিস্টেমটি সম্ভবত একাধিক ওয়ারহেড সরবরাহের জন্য তৈরি করা হয়েছে। একাধিক ওয়ারহেড, বিদ্যমান মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উপর চাপ বৃদ্ধি করবে। ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে অর্থপূর্ণ প্রতিরোধমূলক প্রভাব অর্জনের জন্য কিম যা প্রয়োজনীয় বলে মনে করেন তাও বৃদ্ধি করবে।
সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, হোয়াসং সিরিজের আইসিবিএম ক্ষেপণাস্ত্রগুলো উত্তর কোরিয়াকে দূরপাল্লার লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার ক্ষমতা এনে দিয়েছে। কিন্তু এর নির্দেশিকা ব্যবস্থার পরিশীলিততা এবং বায়ুমণ্ডলীয় পুনঃপ্রবেশ সহ্য করার ক্ষেত্রে ক্ষেপণাস্ত্রের ওয়ারহেড পেলোডের ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে।
এছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টির ৮০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত কুচকাওয়াজ শেষে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন একটি ভাষণ দেন, যেখানে তিনি উত্তর কোরিয়াকে সমাজতান্ত্রিক শক্তির বিশ্বস্ত সদস্য এবং পশ্চিমা বিশ্বের আধিপত্যের হুমকির বিরুদ্ধে স্বাধীনতার প্রতিরক্ষা কেন্দ্র বলে অভিহিত করেন।
তিনি আরো বলেন, আজ আমরা বিশ্বের সামনে একটি শক্তিশালী জাতি হিসেবে দাঁড়িয়ে আছি। এমন কোনো বাধা নেই যা আমরা অতিক্রম করতে পারি না। মহা অর্জন বলতে কিছু নেই যা আমরা অর্জন করতে পারি না।
পিয়ংইয়ংয়ের এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা বিশিষ্ট জনদের মাঝে রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের উপ-প্রধান এবং প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র দিমিত্রি মেদভেদেভ উপস্থিত ছিলেন।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা জানায়, কিমের সাথে সাক্ষাতে তিনি ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের প্রতি উত্তর কোরিয়ার সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
রাশিয়ার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ম্যাক্সে উ.কোরিয়া সফর ও কিম জং উনের সাথে সাক্ষাত প্রসঙ্গে লিখেন, মানুষ এবং দেশের মধ্যে সম্পর্কের প্রকৃতি পরীক্ষার সময় প্রকাশিত হয়। বিভিন্ন দেশের সাথে আমাদের জোটের ক্ষেত্রেও এটি সম্পূর্ণরূপে প্রযোজ্য।
ইউক্রেনে পশ্চিমা বিরোধী বিশেষ সামরিক অভিযানে অবিচল সমর্থনের জন্য আমরা গণতান্ত্রিক গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞ। আমাদের (উ.কোরিয়া ও রুশ) সৈন্যরা কুরস্ক অঞ্চলকে মুক্ত করার জন্য কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়েছিলো। এই কৃতিত্ব চিরকাল আমাদের হৃদয়ে গেঁথে থাকবে।
কেসিএনএ জানিয়েছে, জবাবে কিম মেদভেদেভকে রাশিয়ার সাথে সহযোগিতা জোরদার করার এবং সাধারণ লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিভিন্ন ধরণের দ্বিপাক্ষিক বিনিময়ে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত থাকার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।