মঙ্গলবার | ২৩ ডিসেম্বর | ২০২৫
spot_img

দিল্লিতে সুখে আছি: হাসিনা

দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতে পলাতক সাবেক প্রধনমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দিল্লিতে ‘নিরিবিলি ও স্বাধীনভাবে’ বসবাস করছি। মাঝে মাঝে শহরের লোধি গার্ডেনে তিনি হাঁটতে যাই।

যদিও অতীতে তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার ঘটনার কারণে তিনি সতর্ক আছেন। তিনি জানান, ভারতের বাইরে আশ্রয় নেওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই।

বুধবার (২৯ অক্টোবর) রয়টার্স, এএফপি ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট হাসনার সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে।

দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকার

হাসিনা বলেন, ‘আমি নিহত প্রতিটি শিশু, ভাইবোন, আত্মীয় ও বন্ধুর জন্য শোক জানাই।’ কিন্তু এজন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। তার দাবি, সরকার উৎখাতের জন্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা অস্থিরতা তৈরি করে চক্রান্ত করেছিল।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন না করে লাখো মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করতে যাচ্ছে।

তিনি অভিযোগ করেন, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। এটা জনগণের মত প্রকাশের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে, যা একটি বিপজ্জনক নজির হতে যাচ্ছে’ বলে উল্লেখ করে তিনি।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগসহ প্রধান সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য হবে না। কার্যকর রাজনৈতিক ব্যবস্থা চাইলে, আপনি লাখ লাখ মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারেন না।

অথচ তবে বিগত আমলে বিরোধী দলগুলো ছাড়াই নির্বাচন করেছিল শেখ হাসিনা সরকার, যেগুলোতে লাখ লাখ ভোটার ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছিল।

দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টকে হাসিনা বলেন, তার বিরুদ্ধে মামলাগুলো রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য সাংবিধানিক শাসন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসা জরুরি। দেশের ভবিষ্যৎ কোনো একক ব্যক্তি বা পরিবার নির্ধারণ করে দিতে পারে না।

তিনি আরও বলেন, তার এখন অগ্রাধিকার বাংলাদেশের কল্যাণ ও স্থিতিশীলতা।

যদিও তার দল আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আইনি ও কূটনৈতিক পথ খোঁজার চেষ্টা করছে।

এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকার

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার কিছু অডিও উপস্থাপন করা হয়েছে। যেখানে তিনি গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এএফপির কাছে হাসিনা দাবি করেছেন, অডিওটির কথাগুলো ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, আমি নিজে বাহিনীগুলোকে আন্দোলনে গুলি চালাতে বলেছি, এটা মিথ্যা।

যদিও তিনি স্বীকার করে বলেছেন যে, চেইন অব কমান্ডের ভেতরে কিছু ভুল অবশ্যই হয়েছিল।

এএফপির কাছে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে হাসিনা বলেন, মামলাগুলো কোনো প্রমাণসাপেক্ষে করা হয়নি। ট্রাইব্যুনালটি রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের দ্বারা গঠিত হয়েছে বলেছে মন্তব্য করেন তিনি।

হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের জনগণ যা চায়, সেটা দিতে হলে ইউনূসকে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম পুনর্বহাল করতে হবে।

রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকার

হাসিনা রয়টার্সকে বলেন, ক্যাঙ্গারু কোর্টে মামলা চলছে, অপরাধী বানিয়ে রায় আগেই নির্ধারিত হয়ে গেছে।

মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হলে তিনি ‘অবাক বা ভীত হবেন না’ বলেও উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা শুধু অন্যায় নয়, এটি আত্মঘাতীও।’

উল্লেখ্য, হাসিনা সরকার ২০২৪ সালে পতনের মাত্র কয়েকদিন আগে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করেছিল।

শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিরুদ্ধে চলমান মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তদন্ত চলাকালে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম বর্তমানে নিষিদ্ধ আছে। এই পরিস্থিতিতে কোনো নির্বাচন হলে তা ভবিষ্যতের জন্য বিভেদের বীজ বপন করবে, বলেন শেখ হাসিনা।

হাসিনা বলেন, ‘পরবর্তী সরকারের নির্বাচনের মাধ্যমে বৈধতা থাকা আবশ্যক। দেশের লাখ লাখ মানুষ আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে, বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা ভোট দেবে না।’ ‘সমর্থকদের অন্য দলেও ভোট দিতে’ বলেননি শেখ হাসিনা। তার আশা, নির্বাচনের আগে তার দল কার্যক্রম চালাতে পারবে।

spot_img
spot_img
spot_img

এই বিভাগের

spot_img