ফিলিস্তিনের গাজ্জা উপত্যকার বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্ববাসীর কাছে মানবিক বিপর্যয়ের আরেক প্রতিচ্ছবি। দুই বছর ধরে দখলদা ইসরাইলের অবিরত হামলায় উপত্যকার ধ্বংসপ্রাপ্ত অসংখ্য ভবন আজও নৃশংসতার নির্মম সাক্ষ্য বহন করছে। গাজ্জা শহরের সেই রকমই একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকেই একই পরিবারের ৪৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
গত অক্টোবরে আমেরিকার মধ্যস্ততায় ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস ও ইসরাইয়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি শুরুর পর গাজ্জা বিভিন্ন জায়গা থেকে সরে যায় ইসরাইলি সেনারা। এরপর থেকে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়া ফিলিস্তিনিদের মরদেহ উদ্ধারের কাজ শুরু করে গাজ্জা কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার গাজ্জা সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেছেন, ‘যদি আমাদের কাছে বড় এক্সকেভেটর থাকত। তাহলে উদ্ধার অভিযানে কম সময় লাগত। ইস্যু হলো, যদি এভাবে উদ্ধার অভিযান চলে, তাহলে উদ্ধার কার্যক্রম শেষ করতে আমাদের তিন বছর সময় লাগবে।’
এদিকে সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) গাজ্জা সিটিতে যাদেন দেহাবশেষ বের করা হয়, তাদের এক আত্মীয় আবু মুহাম্মদ সালেম নামে জানিয়েছেন, ইসরাইলি সেনারা বোমাবর্ষণ করার পর তাদের বাড়িটি ধ্বংস হয়ে যায়। আর যারা বাড়ির ভেতর ছিলেন তাদের চাপা পড়ে মৃত্যু হয়।
তিনি বলেছেন, ‘আমার ইচ্ছা হলো ধ্বংসস্তূপ থেকে পরিবারের সবার মরদেহ উদ্ধার করা যাবে এবং তাদের দেঈর আল-বালাহর কবরস্থানে সমাহিত করার, যেখানে তাদের স্মৃতির শেষ চিহ্নটুকু অন্তত থাকবে।’
প্রসঙ্গত, দুই বছরের ইসরাইলি আগ্রাসনে ফিলিস্তিনের গাজ্জায় প্রায় ২ লাখ ৮২ হাজারের বেশি বাড়িঘর ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করা সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ।
গাজ্জার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরাইলি বোমা হামলায় ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া ৯ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনির মরদেহ এখনও উদ্ধার করা হয়নি। কর্মকর্তারা বলছেন, ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবন থেকে ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করার জন্য তাদের কাছে পর্যাপ্ত ভারী যন্ত্রপাতি নেই। এই পরিস্থিতিতে হাজার হাজার ফিলিস্তিনির মরদেহ উদ্ধারের প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার জন্য ভারী যন্ত্রপাতি ও বুলডোজার পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে।
তবে জাতিসংঘের অনুমান, ইসরাইল গাজ্জায় বুলডোজার প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে – যা যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে। তারা বলছে, ভারী যন্ত্রপাতিকে অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে হামাস।
সূত্র: আলজাজিরা










