ইনসাফ | শেখ আশরাফুল ইসলাম
অনেকেই দ্রুত মেদ কমানোর ক্ষেত্রে ভীষণ সিরিয়াস। পত্র-পত্রিকায় কিংবা কোন আর্টিক্যালের ওয়েব সাইটে এমন ভিজিটরের সংখ্যা অনেক বেশি। কথায় বলে, ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়। তাহলে দ্রুত মেদ কমানোর উপায় নিশ্চয়ই আছে, তাই নয় কি? এই বিষয়টাই আজ আপনাদের জানাব।
ফ্যাট বার্ন করার বিষয়টাকে দুটো শিরোনামে ভাগ করতে পারি।
১। ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ
২। খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করা
উপরোক্ত বিষয়গুলো যথাযথভাবে খেয়াল রাখতে পারলে এবং এর উপর কিছু বিধি-নিষেধ মেনে চললে মেদ কমানো খুবই সহজ।
১। ব্যায়াম
প্রতিদিন-ই ব্যায়াম করা কাজের কথা নয়। সপ্তাহে ৪ দিন করাই যথেষ্ট। ছোটখাটো ব্যায়াম, যেগুলো কোন রকম যন্ত্রপাতি ছাড়াই করা সম্ভব-এই ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ গুলো খুব উপকারী।
ক) দ্রুত হাঁটা
হাঁটার কথা তো সবসময়ই শোনা যায়। কিন্তু দ্রুত মেদ কমানোর উপায় যদি চিন্তা করেন তবে সেক্ষেত্রে হাঁটার কোন বিকল্প নেই। প্রথমেই ওয়ার্ম আপ করে নিয়ে ৫ মিনিট দ্রুত হাঁটুন, তারপর ৩০ সেকেন্ড এর বিরতি, এই ৩০ সেকেন্ড আস্তে আস্তে হাঁটুন। এভাবে কয়েকবার করতে হবে। প্রথম প্রথম ২০ মিনিট করুন, তারপর আস্তে আস্তে ৫০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা পর্যন্ত করতে পারেন। এই ব্যায়ামে ১ মাসে ১৩ পাউন্ড পর্যন্ত ওজন কমতে পারে।
খ) পুশ আপ
দ্রুত মেদ কমাতে পুশ আপ। এই ব্যায়ামটাও আমাদের খুব পরিচিত। উপুড় হয়ে দেহের ভার হাত আর পায়ের পাতার উপর দিয়ে, একবার নীচে নামুন, আরেকবার উপরে তুলুন। এতে অভ্যস্ত হয়ে গেলে এক পা উপরে তুলে তিনবার করুন, পরবর্তী তিনবার অপর পা উপরে তুলে পুশ আপ করুন।
গ) স্ট্যান্ডিং বার্ড ডগ ব্যায়াম
দ্রুত মেদ কমাতে স্ট্যান্ডিং বার্ড ডগ ব্যায়াম
নাম দেখেই বুঝতে পারছেন, ব্যায়ামটা কেমন হবে। প্রথমে ডান পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়ান, তারপর বাম পা-টি ধীরে ধীরে বুকের কাছে তুলে আনুন। ২ সেকেন্ড পর বাম পা পেছন দিকে, আর দুই হাত উপরে তুলে ধরুন। এটা শেষ হলে বাম পায়ে ভর দিয়ে ডান পা দিয়ে ব্যায়ামটি করুন।
(খ) আর (গ) এর ব্যায়াম এর মাধ্যমে ২ মাসে ২২ পাউন্ড পর্যন্ত ওজন কমতে পারে।
ঘ) সাইড প্লাঙ্ক ব্যায়াম
দ্রুত মেদ কমাতে সাইড প্লাঙ্ক ব্যায়াম
ঙ) বারপি ব্যায়াম
দুই পা একসাথে রেখে দুই হাত মাথার উপরে তুলুন। তারপর ধীরে ধীরে হাত নামিয়ে মাটিতে রাখুন, দুই হাত দুই পায়ের দুই পাশে। এবার প্রথমে বাম পা পেছনে বর্ধিত করুন, তারপর বাম পা আগের অবস্থায় এনে ডান পা পেছনে বাড়ান। তারপর আবার দাঁড়িয়ে দুই হাত মাথার উপরে তুলুন। এভাবে কয়েকবার করুন।
ডান হাত এবং ডান পায়ের কিনার এর উপর ভর দিয়ে আপনার দেহটি শুন্যে তুলে ধরুন, যেন কাঁধ, কোমর আর পা একই লাইনে থাকে। এবার বাম হাতটি উপরে তুলে ধরুন। কিছুক্ষণ পর পার্শ্ব বদল করে নিন।
। খাদ্যাভ্যাস:
ক) গ্রিন টি
দ্রুত মেদ কমাতে গ্রিন টি
গ্রিন টি সম্পর্কে সবাই কম বেশি জানেন। অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে এর কোন জুড়ি নেই। মেটাবোলিজমের হার বাড়িয়ে বাড়তি মেদ জমতেও দেয় না।
খ) আয়রন
দ্রুত শরীরের মেদ কমাতে আয়রন টেবলেট
আয়রন এর অভাব হলে অক্সিজেনের অভাব হয়। তখন মেটাবোলিজমের হারও কমে যায়। এজন্য আয়রন খাওয়া খুবই জরুরী। কচু শাকে ও কলায় প্রচুর আয়রন আছে। প্রয়োজনে আয়রন ট্যাবলেটও খাওয়া যেতে পারে।
গ) পানি
দ্রুত শরীরের মেদ কমাতে পর্যাপ্ত পানি পান
পানি পান না করে তো বাঁচা যায় না, কিন্তু পানি যে ওজন-ও কমায়, এটা হয়তো অনেকেই জানি না। এখন দিনে আপনি যতটা পানি পান করেন তার চেয়ে যদি দেড় লিটার প্রতিদিন বেশি পান করেন, তবে বছরে ১৭,৪০০ অতিরিক্ত ক্যালরি বার্ন করা সম্ভব।
ঘ) দুধ জাতীয় খাবার
দ্রুত শরীরের মেদ কমাতে দুধ জাতীয় খাবার উপকারী
দুধ এবং দইজাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। এতে যে ক্যালসিয়াম থাকে, তা ফ্যাট বার্ন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে চিনি এড়িয়ে চলুন।
ঙ) মাছ
দ্রুত শরীরের মেদ কমাতে খাবার তালিকায় মাছ
বেশি করে মাছ খান, কারণ মাছ খাওয়ার দরুন লেপ্টিন নামক হরমোন এর লেভেল কমে যায়। লেপ্টিন হরমোন বেশি থাকলে মেদ বাড়ার প্রবণতা থাকে।
চ) পিনাট বাটার
অবাক হয়ে ভাবছেন, বাটার কেন খাবেন? ব্যাপারটা হলো এই বাটারে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম থাকে। আর এ কারণে আপনার মেটাবোলিজমের হার-ও বাড়িয়ে দেয়। ইচ্ছে করলে আপনি শুধু চিনাবাদাম-ও খেতে পারেন। ৩২০ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম-ই প্রতিদিন যথেষ্ট।
ছ) সকালের নাস্তা
অনেকেই মেদ ঝরাতে সকালে না খেয়ে থাকেন। এটা কখনোই করবেন না। সকালে না খেলে মেটাবোলিজমের হার অনেক কমে যায়। তাই ফ্যাট-ও বার্ন হয় না।
জ) প্রোটিন
প্রোটিন জাতীয় খাবার প্রতি বেলাতেই কিছু না কিছু খেতে হবে। এতে করে মেটাবোলিজমের হার বেড়ে যায়।
ঝ) স্টার্চ
স্টার্চ জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন। রিফাইন্ড ময়দা, সাদা চাল, আলু এগুলো এড়িয়ে চলুন। ব্রাউন আটা খেতে পারেন। কার্বোহাইড্রেট বাদ দেয়া যাবে না। কার্বোহাইড্রেট এর চাহিদা পূরণ করবেন শাকসবজি, ডাল, ব্রাউন আটা এগুলো থেকে।
ঞ) দ্রুত মেদ কমানোর উপায় – অন্যান্য
আরও কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে দ্রুত মেদ ঝরাতে আর বাড়তি মেদ না জমতে দিতে। যেমন-
ট) মেটাবোলিজম: আপনার মেটাবোলিজমের হার কম মনে হয় যদি, সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের সাহায্য নিন। আপনার থাইরয়েড গ্রন্থির পরীক্ষা করে নিশ্চিত হোন।
ঠ) স্ট্রেস : যতটা পারেন স্ট্রেস এড়িয়ে চলুন। স্ট্রেস কন্ডিশনে করটিসল হরমোন বাড়ে। ক্ষুধা বাড়ে, মেটাবোলিজমের হার কমে। তাহলে মেদ তো জমবেই। তাই সবসময় হাসিখুশি থাকুন, দরকার হলে ম্যাডিটেশন করতে পারেন।
ড) দৈনিক খাবার: দৈনিক যে খাবারগুলো খাবেন, সেগুলো একবারে না খেয়ে বার বার করে অল্প অল্প করে গ্রহণ করুন। এতে করে আপনার ব্রেনকে ফাঁকি দেয়া হবে, তখন আপনার মেটাবোলিজমের হার-ও বাড়তেই থাকবে। একটি রুটিন করে নিয়ে তা ফলো করতে পারেন। যেমন-
সকাল ৮টা – নাস্তা
সকাল ১১টা – হালকা স্ন্যাকস
দুপুর ১টা – দুপুরের খাবার
বিকাল ৪টা – হালকা খাবার
রাত ৯টা – ডিনার
রাত ১০/১১টা – এক গ্লাস দুধ।
এভাবে আপনার রুটিন আপনার পছন্দ অনুজায়ী বানিয়ে নিতে পারেন। লক্ষ্য করুন, এই রুটিনে সকালের দিকে বেশি খাবারের তালিকা দেয়া হয়েছে। কেননা সারা রাত ঘুমের পর মেটাবোলিজমের হার খুবই কম থাকে।
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে স্ট্রেস হরমোন আর ইনসুলিন লেভেল বাড়ে। মেটাবোলিজমের হারও কমে। তাই নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুমের অভ্যাস করুন।
এভাবেই আপনি খুব সহজে বাড়তি মেদ ঝরিয়ে ফেলতে পারবেন।