পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ঘোষণা দিয়েছেন পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ) নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জোটের বিরুদ্ধে সারা দেশে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু করতে যাচ্ছেন তিনি। এই আন্দোলনের নেতৃত্ব তিনি দেবেন কারাগার থেকেই।
শনিবার (৩১ মে) কারাগারে আটক ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাতের পর পিটিআই সিনেটর আলি জাফর এই ঘোষণা সংবাদমাধ্যমে জানান।
আদিয়ালা কারাগারের বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আলি জাফর বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্থির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আর বসে থাকার সময় নেই। এখন থেকে দল সারা দেশে সংগঠিতভাবে রাজপথে নামবে।
তিনি বলেন, “এই প্রতিবাদ কেবল ইসলামাবাদে সীমাবদ্ধ থাকবে না। এটি হবে দেশজুড়ে। চেয়ারম্যান (ইমরান খান) বলেছেন, আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আমাদের সামনে এখন একমাত্র পথ জনগণের কাছে যাওয়া।”
২০২৩ সালের আগস্ট থেকে কারাগারে বন্দি ইমরান খানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং সহিংসতায় উসকানির মতো একাধিক অভিযোগ রয়েছে, যেগুলো তিনি অস্বীকার করে আসছেন। আলি জাফর জানান, ইমরান খান তাকে বলেছেন, তিনি কারাগার থেকেই আন্দোলন তদারকি করবেন এবং দলের শীর্ষ নেতাদের সরাসরি নির্দেশনা দেবেন।
আন্দোলন পরিকল্পনার দায়িত্ব দেওয়ার প্রসঙ্গে আলি জাফর বলেন, “চেয়ারম্যান আমাকে বলেছেন, আমি যেন আন্দোলনের একটি পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা প্রস্তুত করি। এটি আমরা দলের আইনজীবী ও সিনিয়র নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত করব।”
তিনি আরও বলেন, “চেয়ারম্যান দলের নেতৃত্বের ওপর পূর্ণ আস্থা রাখেন, তবে আন্দোলনের নেতৃত্ব তিনি নিজেই দিতে চান। তিনি আমাকে প্রাথমিক কৌশল তৈরি করতে বলেছেন, যা পরবর্তী বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।”
এই ঘোষণাটি এমন এক সময়ে এল যখন দেশজুড়ে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক অচলাবস্থা বিরাজ করছে এবং পিটিআই দাবি করে আসছে যে, তাদের প্রতি সুবিচার করা হচ্ছে না। ইমরান খান ও তার দল বারবার বলছে, তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং তাকে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য পরিকল্পিত।
সাম্প্রতিক সময়ে কারাগার থেকেই ইমরান খান দেশের প্রভাবশালী মহলের প্রতি সংলাপের আহ্বান জানান এবং জাতীয় স্বার্থে ‘দেওয়া-নেওয়ার’ ভিত্তিতে আলোচনা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তবে তিনি স্পষ্ট করেন, এটি কোনো ব্যক্তিগত স্বস্তি বা ছাড় পাওয়ার জন্য নয়।
শনিবারের ঘোষণায় ইমরান খানের অবস্থানে স্পষ্ট পরিবর্তন দেখা যায়। আলি জাফর জানান, “চেয়ারম্যান বলেছেন, আমরা বিচার বিভাগ বা নির্বাহী বিভাগ থেকে কোনো স্বস্তি পাচ্ছি না। আমাদের কোনো বিকল্প নেই, এখন আমাদের রাজপথেই যেতে হবে।”
আন্দোলনের আগের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “চেয়ারম্যান দৃঢ়ভাবে বলেছেন, এবারের আন্দোলন অতীতের মতো হবে না, যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও বহিরাগত চাপের কারণে ভেস্তে গিয়েছিল। তিনি চান একটি পরিকল্পিত, কার্যকর ও দৃঢ় আন্দোলন গড়ে তুলতে।”
আলি জাফর বলেন, “তিনি জানেন সামনে বাধা আসবে, তবে বিশ্বাস করেন, সেগুলো পার হওয়ার কৌশলও আমাদের জানা আছে।”
এই ঘোষণার ফলে পিটিআই ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন আরও তীব্র হতে পারে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। ইমরান খানের পূর্ববর্তী সংলাপ আহ্বান সত্ত্বেও পারস্পরিক সম্পর্ক এখনও শীতল।
বিশেষ করে সম্প্রতি পাকিস্তান-ভারত সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে পরিচালিত ‘অপারেশন বুনিয়ান উল মারসুস’-এর সফলতা উদযাপনে সেনাবাহিনীর আয়োজিত নৈশভোজে পিটিআই নেতাদের অনুপস্থিতি এবং খাইবার পাখতুনখাওয়া মুখ্যমন্ত্রী আলি আমিন গান্ডাপুরের না যাওয়া সেই দূরত্বকেই স্পষ্ট করে তুলেছে।
এদিকে, ক্ষমতাসীন জোট সরকারের মন্ত্রীরা পিটিআইয়ের আন্দোলনের পরিকল্পনাকে অবজ্ঞা করে বলছেন, ইমরান খানের গ্রেফতারের পর দলটি উল্লেখযোগ্য জনসমর্থন অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।
তবে কারাগার থেকে ইমরান খানের এই আহ্বান হয়তো তার অনলাইন ও জনসমাবেশে সক্রিয় থাকা কর্মীদের উজ্জীবিত করতে পারে। দলীয় নেতারা কয়েক সপ্তাহ ধরেই ইঙ্গিত দিয়ে আসছিলেন, বড় কিছু আসছে।
আলি জাফর বলেন, “এইবারের আন্দোলন প্রতীকী নয়, এটি হবে চূড়ান্ত। এবং চেয়ারম্যান নিজেই এটিকে নেতৃত্ব দেবেন, কারাগার থেকে।”
সূত্র: দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন