১৯৮৪ সনে সংঘটিত শিখ গণহত্যা সহ ভারতের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের সকল অপরাধের দায় নিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন দলটির প্রভাবশালী নেতা ও ভারতের লোকসভার বিরোধী দলের নেতা রাহুল গান্ধী।
সোমবার (৫ মে) মুসলিম মিররের খবরে একথা জানানো হয়।
খবরে বলা হয়, আমেরিকার ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি ওয়াটসন ইনস্টিটিউটে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আশুতোষ ভার্শনি ও রাহুল গান্ধীকে নিয়ে একটি উন্মুক্ত সংলাপের আয়োজন করে, যেখানে ভারতীয় নাগরিক ও শিখ সম্প্রদায়ের ছাত্ররা কংগ্রেস ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিষয়ে খোলাখুলি প্রশ্ন ও আলাপের সুযোগ পায়।
সংলাপে তিনি ৮৪-র শিখ বিরোধী দাঙ্গা ও গণহত্যা সহ কংগ্রেস আমলে সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধ নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেন। শিখ গণহত্যা ও কংগ্রেসের সকল অপরাধের দায় নিতে তিনি প্রস্তুত বলে জানান।
এক শিখ ছাত্রের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কংগ্রেসের পক্ষ থেকে যখন এসব ভুল হচ্ছিলো আমি তখন সেখানে ছিলাম না। তবে কংগ্রেস তার আমলে যত ভুল করেছে, এখন তার সদস্য হয়ে সেসবের দায় নেওয়ার সুযোগ পেয়ে আমি অনেক স্বস্তি অনুভব করছি। আমি আগেও প্রকাশ্যে বলেছি এখনও বলছি, ৮০-দশকে যা ঘটেছিলো তা ভুল ছিলো।
সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, ১৯৮৪ সনে ভারতের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তার শিখ দেহরক্ষীদের হাতে নিহত হোন। শিখ দেহরক্ষী কর্তৃক ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার ঘটনায় ভারতজুড়ে শিখ বিরোধী দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষত দিল্লিতে ৩ হাজার শিখকে হত্যা করা হয়। কয়েকজন কংগ্রেস নেতার বিরুদ্ধে এই দাঙ্গা উস্কে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে, যা এক পর্যায়ে গণহত্যায় রূপ নেয়। ইন্দিরা গান্ধীর হত্যাকাণ্ড তাদেরকে শিখদের বিরুদ্ধে নৃশংস হতে ও হত্যায় প্ররোচিত করে।
উল্লেখ্য, কংগ্রেস নেতা ও ভারতীয় লোকসভার বিরোধী পক্ষের বর্তমান প্রধান রাহুল গান্ধী ভারতের ঐতিহ্যবাহী নেহরু ও গান্ধী পরিবারের সন্তান। তার বাবা রাজিব গান্ধী ও দাদী ইন্দিরা গান্ধী দু’জনই ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের ষড়যন্ত্রে পরিকল্পিত হত্যার শিকার হয়েছিলেন।
নামের মাঝে গান্ধী পদবী থাকলেও কিন্তু এই পরিবারটির সাথে ভারতের স্বাধীনতা ও অহিংস আন্দোলনের নেতা মহাত্মা গান্ধীর কোনো রক্ত সম্পর্ক ছিলো না। বরং এই পরিবারটি ছিলো নেহেরু পরিবার।
গান্ধী উপাধির ব্যবহার শুরু হয় ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর একমাত্র কন্যা ইন্দিরার সাথে অন্যতম প্রভাবশালী জরথুস্ট্রি ধর্মাবলম্বী পার্সিক রাজনৈতিক নেতা ফিরোজ গান্ধীর বিবাহের মধ্যদিয়ে। বিবাহের পর তিনি নামের শেষে স্বামীর পারিবারিক উপাধি ধারণ করেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও তিনি ভারতে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। সেই সূত্রে তিনি নেহেরু কন্যা ইন্দিরা গান্ধী নামে ব্যাপক পরিচিতি পান এবং তার পরিবারের সদস্যরা পরিচিত হয়ে উঠেন গান্ধী পরিবার নামে।