ইহুদিবাদী সন্ত্রাসীদের অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইল ও তাদের ত্রাতা আমেরিকার বিশ্বাসঘাতকতা ও হঠকারিতায় গাজ্জা পুনর্গঠন ইস্যুটি বর্তমানে আলোচনার তুঙ্গে।
কথা ছিলো সাক্ষরিত চুক্তি অনুসারে ২ মার্চ থেকে শুরু হবে যুদ্ধবিরতি চুক্তির ২য় ধাপ অর্থাৎ, ১. ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে স্থায়ীভাবে শত্রুতা ও সন্ত্রাসবাদের অবসান, ২. গাজ্জায় আটক থাকা সকল জিম্মির বিপরীতে ইসরাইলের কাছে বন্দী থাকা সকল ফিলিস্তিনির মুক্তি প্রদান, ৩. অবরুদ্ধ গাজ্জা ও ফিলিস্তিনের স্বীকৃত ভূখণ্ড থেকে সম্পূর্ণভাবে ইসরাইলী সেনাদের প্রত্যাহার ও ৪. গাজ্জা পুনর্গঠন শুরু ও এতে কোনো ধরণের বাধা না দেওয়ার বাস্তবায়ন শুরু হবে।
কিন্তু তা না করে ইসরাইল আমেরিকা শুধু কালক্ষেপণই করছে। ইসরাইল নিয়মিত দিয়ে গিয়েছে ও যাচ্ছে যেকোনো মুহুর্তে গাজ্জায় পুনরায় যুদ্ধ শুরুর হুমকি এবং আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দিয়ে যাচ্ছেন, গাজ্জাকে মধ্যপ্রাচ্যের নৈসর্গিক নগরীতে পরিণত করার অনির্ভরযোগ্য আশ্বাস। এর সাথে শর্ত জুড়ে দিচ্ছেন, গাজ্জাকে নৈসর্গিক নগরীতে পরিণত করতে আমেরিকাকে প্রথমে তা খালি করে দিতে হবে ফিলিস্তিনিদের।
আরো দাবী করছেন, পুনর্গঠনের সময় গাজ্জায় মার্কিন সেনাদের উপস্থিতির কোনো প্রয়োজন হবে না। বরং ১৯৯৩ এর অসলো চুক্তি মোতাবেক ফিলিস্তিনের সীমানা ইত্যাদির নিয়ন্ত্রণে থাকা ইসরাইলই মার্কিনীদের গাজ্জা পুনর্গঠন শেষে এর কর্তৃত্ব আমেরিকার হাতে তুলে দিবে।
২ মার্চ যুদ্ধবিরতির ২য় ধাপে না গিয়ে ১ম ধাপ বাড়াতে নাটকও মঞ্চস্থ করে তারা। যেখানে হুট করে মার্কিন প্রেসিডেন্সিয়াল দূতের প্রস্তাবনা হাজির করে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইল। পাশ করায় কেবিনেটে। আর এতে সমর্থন জোগায় আমেরিকা। ফিলিস্তিন স্বাধীনতাকামী ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস যা তীব্র নিন্দা জানানোর পাশাপাশি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মুসলিম বিশ্বকে আহবান জানায় সাক্ষরিত চুক্তি অনুসরণ করতে ইসরাইল ও তাদের মধ্যস্থতাকারী আমেরিকার উপর চাপ প্রয়োগ করার।
এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার (৪ মার্চ) কায়রোতে জরুরী বৈঠকে বসেন আরব নেতারা। আরব নেতারা সম্মিলিতভাবে ইসরাইল-আমেরিকার এমন হঠকারিতার প্রতিক্রিয়া দেখায়। ট্রাম্পের অযৌক্তিক ও অন্যায্য গাজ্জা পুনর্গঠন পরিকল্পনার বিপরীতে পাল্টা পরিকল্পনা উপস্থাপন করে মিশর।
কিন্তু মিশরের ফিলিস্তিনি উৎখাতবিহীন পুনর্গঠন পরিকল্পনাটি প্রত্যাখ্যান করে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইল ও তাদের পিতৃতুল্য আমেরিকা।
এছাড়া হামাসের সাথে বৃহস্পতিবার ৬ মার্চ সরাসরি বৈঠকে বসেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। যেখানে তিনি চুক্তির ২য় ধাপ বাস্তবায়নের পরিবর্তে উল্টো হুমকি দিয়ে বসেন এবং বলেন, হয়তো তোমরা সকল বন্দীদের মুক্তি দিবে নয়তো মৃত্যুর ক্ষণ গণনা শুরু করবে। কালবিলম্ব না করে দ্বিগুণ শক্তিতে তোমাদের উপর হামলা শুরু হবে!
মিশরের উৎখাত বিহীন গাজ্জা পুনর্গঠন পরিকল্পনায় যা রয়েছে:
৩টি স্তর বা পর্যায়ে গাজ্জা পুনর্গঠনের পরিকল্পনা পেশ করেছে মিশর। তা হলো, অন্তর্বর্তীকালীন পুনর্গঠন ব্যবস্থা, দীর্ঘমেয়াদি পুনর্গঠন ও পরিচালনা। ১ম পর্যায়টির স্থায়ীত্ব হবে ৬ মাস। বাকি ২টি ৪ থেকে ৫ বছরের মধ্যে তার চূড়ান্ত রূপে পৌঁছবে। ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৩ বিলিয়ন ডলার।
১.অন্তর্বর্তীকালীন পুনর্গঠন ব্যবস্থা ~
◑ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একটি কমিটি গঠিত হবে যারা আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের (পশ্চিম তীরের সরকার) অধীনে পরিচালিত হবে।
◑ এই কমিটি ৬ মাস রাস্তাঘাট ইত্যাদি থেকে ধ্বংসস্তুপ পরিস্কারের দায়িত্ব নিবে। ২ লক্ষ অস্থায়ী আবাস নির্মাণ করবে ও ৬০ হাজার ক্ষতিগ্রস্ত ভবন বসবাসের উপযুক্ত করে তুলবে।
◑ ব্যয় ৩ বিলিয়ন ডলার।
২.দীর্ঘমেয়াদি পুনর্গঠন ~
◑ ধ্বংসস্তুপ পরিস্কার ও নির্মাণ কাজ চলমান থাকবে।
◑ ৪-৫ বছরের মধ্যে ৪ লক্ষ স্থায়ী আবাস নির্মাণের লক্ষ্যে কাজ শুরু হবে।
◑ গাজ্জার সমুদ্র ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পুনর্নির্মাণ করা হবে। মৎস, বাণিজ্য বন্দর ও শিল্পাঞ্চল স্থাপন করা হবে।
◑ বিদ্যুৎ, পানি, টেলিযোগাযোগ পরিষেবা ও বর্জ্য ব্যবস্থা সহ মৌলিক সেবাগুলো বহাল করা হবে।
◑ ব্যয় ২০ বিলিয়ন ডলার।
৩. পরিচালনা ~
◑ গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটিটি মানবিক সহায়তা ও পরিচালনা তত্ত্বাবধান করবে।
◑ বিশেষজ্ঞ কমিটির সহায়তার জন্য স্টিয়ারিং এন্ড ম্যানেজমেন্ট কাউন্সিল নামে একটি তহবিল গঠন করা হবে, যা পুনর্গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের আর্থিক সহায়তা করে যাবে। দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক তহবিল সরবরাহে কাজ করবে।
◑ পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে আগামী বছর নির্বাচন হবে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এমনটিই বলেছেন।
◑ ব্যয় ৩০ বিলিয়ন।
গাজ্জা পরিচালনার দায়িত্বে হামাস না অন্য কেউ?
মিশরের পরিকল্পনায় গাজ্জা পরিচালনার ক্ষেত্রে হামাসকে পাশ কাটানোর চেষ্টা করা হয়েছে, যেমনটি ইসরাইল-আমেরিকা ও ইউরোপও চায়। পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, স্বাধীন ফিলিস্তিনি বিশেষজ্ঞদের একটি দল গঠন করা হবে যা হামাসের বিকল্প হিসেবে গাজ্জার তত্বাবধানে করবে। গাজ্জার মানবিক সহায়তার দায়-দায়িত্বও তাদের কাঁধে বর্তাবে। আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সরকার পিএ যেনো গাজ্জা পরিচালনা করতে পারে তাদের সেই পথ তৈরি করতে হবে।
এছাড়া পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত গাজ্জার শাসনব্যবস্থার তদারকি ও নিরাপত্তার লক্ষ্যে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কাছে একটি শান্তিরক্ষী মিশনের অনুমোদন দেওয়ার আহবান জানিয়েছে দেশটি। নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় ফিলিস্তিনি পুলিশ অফিসারদের মিশর ও জর্ডানে প্রশিক্ষণ দিয়ে গাজ্জায় মোতায়েনের কথাও জানিয়েছে এই দুই দেশের সরকার।
সূত্র: আল জাজিরা