বিদেশিদের জন্য স্থাবর সম্পত্তির মালিকানা লাভের একটি আইনের অনুমোদন দিয়েছে মক্কা-মদিনার দেশ সৌদি আরব।
বুধবার (৯ জুলাই) মিডল ইস্ট আইয়ের এক প্রতিবেদনে একথা জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সৌদি আরব এক নতুন আইন অনুমোদন দিয়েছে, যা বিদেশিদেরকে রিয়েল এস্টেটের মালিকানা লাভের অনুমতি দেয়। এটি দেশটির অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করে তোলার ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের পরিকল্পনার অংশ।
এর ফলে বিদেশিরা এখন থেকে রাজধানী রিয়াদ ও লোহিত সাগরের উপকূলে অবস্থিত জেদ্দার নির্দিষ্ট এলাকায় স্থাবর সম্পত্তি ক্রয়ের অবাধ সুযোগ পাবে। তবে দুই পবিত্রতম নগরী মক্কা ও মদিনায় বিশেষ শর্তসাপেক্ষে স্থাবর সম্পত্তির মালিকানা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
স্থাবর সম্পত্তি বিষয়ক এই আইন অনুমোদনের পর দেশটির রিয়েল এস্টেট শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বগতি দেখা গিয়েছে।
সৌদি রিয়েল এস্টেট জেনারেল অথরিটি জানায়, আইনটি ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। শীঘ্রই এই নতুন আইনের নিয়ম-কানুন ও প্রয়োগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হবে বলে আশাবাদও প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ।
সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, সৌদি আরবের প্রপার্টি মার্কেটকে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া দেশটির ‘ভিশন ২০৩০’ পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যেখানে পর্যটনের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। বিশেষত, লোহিত সাগরের উপকূলে।
তবে এই উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনার কিছু প্রকল্প উচ্চ ব্যয় ও তেলের দাম কমে যাওয়ার কারণে বিলম্বিত হয়েছে। দেশটির সরকার ইতিমধ্যেই ভবিষ্যতের শহর ‘নিওম’-এর পরিকল্পনা ছোট করতে বাধ্য হয়েছে। যেখানে ২০৩০ সালের মধ্যে ১৫ লাখ বাসিন্দা থাকার কথা ছিলো, সেখানে এখন কর্মকর্তারা মনে করছেন বাসিন্দার সংখ্যা ৩ লাখেরও কম হবে। পাশাপাশি, ২০৩০ সালের মধ্যে মাত্র ২.৪ কিলোমিটার শহর নির্মাণ সম্পন্ন হবে।
তবুও সৌদি আরবে নির্মাণ খাত ব্যাপক প্রসারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সরকার ২০২৪ সালে রাজধানী রিয়াদে ‘মুকাব’ (একটি ঘনক আকৃতির স্থাপনা) নির্মাণ শুরু করে, যা বিশ্বের বৃহত্তম কাঠামো হিসেবে গড়ে উঠবে। এটি ‘নিউ মুরাব্বা’ নামে একটি বড় উন্নয়ন প্রকল্পের কেন্দ্রবিন্দু হবে।
লোহিত সাগরের উপকূলে বিলাসবহুল রিসোর্ট নির্মাণেও হাত বাড়ায় দেশটি। সদ্য চালু হওয়া ‘রিটজ-কার্লটন রিজার্ভ’ এই বিলাসবহুল রিসোর্ট নির্মাণ পরিকল্পনারই একটি অংশ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সৌদি আরবের রিয়েল এস্টেট ও পর্যটন শিল্প দুটি দিককে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে। দেশের মধ্যবিত্ত ও ধনীদের অর্থ যেনো বিদেশে না যায় বরং দেশেই ব্যয় হয়, সেদিকে উৎসাহিত করতে চায়। অপরদিকে বিদেশিদের জন্য সম্পত্তি মালিকানা লাভের সুযোগ তৈরি করে সৌদিকে ওমান, কাতার ও অন্যান্য উপসাগরীয় দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতিযোগিতায় পাল্লা দিতে চায় বিশেষত, অবকাশযাপন এবং দ্বিতীয় আবাসনের বাজার ধরতে।
এই ক্ষেত্রে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এখনো তাদের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। আমিরাতের অন্তর্গত দুবাই ও আবুধাবি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দ্বিগুণ হারে আবাসিক সম্পত্তির মূল্যবৃদ্ধি দেখেছে।
আন্তর্জাতিক রিয়েল এস্টেট সংস্থা ফ্র্যাঙ্ক নাইট তাদের ২০২৪ সালের জুনের এক প্রতিবেদনে বলেছে, দুবাইয়ে আবাসিক সম্পত্তির মূল্য ১৯ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। সৌদির ধনীদের মধ্যে, তারপর যুক্তরাজ্য ও পূর্ব এশিয়ার নাগরিকদের মধ্যে এর চাহিদা সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে।
বিশেষ করে, ফ্র্যাঙ্ক নাইট জানিয়েছে, বর্তমানে দুবাইয়ে ১০ মিলিয়ন ডলার বা তার বেশি মূল্যের ঘরের বাণিজ্য লন্ডন ও নিউ ইয়র্ক সিটির সম্মিলিত লেনদেনের সমান হয়ে উঠেছে।
যদিও পশ্চিমা মিডিয়া সৌদি আরবের পর্যটন আকর্ষণে সামাজিক সংস্কারকে লক্ষ্য করে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে, তবে গবেষণা বলছে, বৈশ্বিক দক্ষিণের অনেক ধনী মুসলিম ব্যক্তি সৌদি আরবে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।
ফ্র্যাঙ্ক নাইট আরো তাদের প্রতিবেদনে আরো জানায়, তাদের জরিপে উঠে এসেছে যে, ৭৯ শতাংশ ধনী মুসলিম মক্কা বা মদিনায় আবাসিক সম্পত্তি কিনতে চান এবং তাদের বাজেট ৪ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি।