১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ের সাথে পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতির তুলনা করেছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ১০ সেপ্টেম্বর আদিয়ালা জেল থেকে পাঠানো এক লিখিত বার্তায় তিনি অভিযোগ করেন, সেনাপ্রধান আসিম মুনির দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফকে ধ্বংস করার জন্য ভুয়া অপারেশন সাজিয়েছেন এবং রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার করে পিটিআইয়ের বিরুদ্ধে দমননীতি চালাচ্ছেন।
ইমরান খান বলেন, “১৯৭১ সালে ঢাকার পতনের মর্মান্তিক ঘটনা যখন ঘটে, তখন দেশ ছিল একনায়ক ইয়াহিয়া খানের চাপিয়ে দেওয়া মার্শাল ল’এর অধীনে। হামুদুর রহমান কমিশনের তদন্তে প্রমাণিত হয়, ইয়াহিয়া নিজের স্বার্থে এবং বেআইনিভাবে শাসন আরও দশ বছর দীর্ঘায়িত করার জন্য যে সিদ্ধান্তগুলো নেয়, তা-ই পাকিস্তানকে দুই টুকরো করে দেয়।
এই কমিশনের প্রতিবেদন তৈরি হয় দীর্ঘ তদন্তের পর। এতে উচ্চ আদালতের বিচারপতি, সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রতিনিধিরা যুক্ত ছিলেন। শত শত মানুষের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল এবং এই জাতীয় বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানে চার বছর সময় ব্যয় হয়েছিল।
এক ব্যক্তির অহংকার ও ক্ষমতার লোভ দেশকে এমন অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগে ঠেলে দেয়, যার ফলে পাকিস্তান স্থায়ীভাবে ভেঙে যায়। ইয়াহিয়ার সবচেয়ে ভয়াবহ ভুল ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগকে দমন করার চেষ্টা। তখনকার সবচেয়ে জনপ্রিয় দল আওয়ামী লীগ ১৬২টির মধ্যে ১৬০টি আসনে জয়ী হয়েছিল। কিন্তু গণরায়কে সম্মান না জানিয়ে দলটিকে কোণঠাসা করা হয়। শেখ মুজিবকে বন্দি করা হয়, পশ্চিম পাকিস্তানে নিজেদের আসন বেআইনিভাবে বাড়ানো হয়। ২৪ মার্চ ১৯৭১-এ শেখ মুজিবের সঙ্গে আলোচনা শুরু হলেও একই রাতে সামরিক অভিযান চালানো হয়। সরকারি হিসাবে ৫০ হাজার প্রাণহানি ঘটে, তবে প্রকৃত সংখ্যাটা তার চেয়ে অনেক বেশি ছিল।”
তিনি বলেন, “আজ পাকিস্তানে আবার সেই ১৯৭১ সালের মতো পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। আসিম মুনির ২০২৩ সালের ৯ মে ভুয়া অপারেশন সাজিয়ে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল পিটিআইকে ধ্বংসের চেষ্টা করেন। মাত্র দুই রাতের মধ্যে দশ হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তদন্ত ছাড়াই কীভাবে এত মানুষকে আটক করা সম্ভব হলো?”
ইমরান খান বলেন, “এরপর পরিকল্পিতভাবে দলকে নিশ্চিহ্ন করার অভিযান শুরু হয়। দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক শক্তির সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়। পিটিআইয়ের পতাকা বহনকারী যে কাউকে অপহরণ করা হয়েছে, প্রার্থীদের ও তাঁদের পরিবারকে তুলে নেওয়া হয়েছে, এমনকি নির্বাচনী প্রতীকও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জনগণ রাস্তায় নেমে জালিয়াতির এই বর্ণনাকে ভেঙে দেয়।
৮ ফেব্রুয়ারি ছিল এক বিপ্লবী দিন, যখন জনগণ অত্যাচারী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ভোট দিয়ে পিটিআইকে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেয়। রাওয়ালপিন্ডির কমিশনার বিবেকের তাড়নায় ভোট কারচুপির স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন এবং লাখ লাখ ভোট জালিয়াতির সত্য প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু তাঁকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে প্রচার চালিয়ে জোর করে গুম করে ফেলা হয়। আজও তাঁর কোনো খোঁজ নেই, কিন্তু আমরা তাঁর স্মৃতি মুছে যেতে দেব না।”
তিনি আরও বলেন, “৯ মে ঘটনার প্রকৃত অপরাধীরা হলো সেই চক্র, যারা সিসিটিভি ফুটেজ চুরি করেছিল। এখন ওই ঘটনার অজুহাতে আমাদের সংসদীয় আসনগুলো কেড়ে নেওয়া হচ্ছে—ভুয়া বিচার দেখিয়ে একের পর এক নেতাকে দশ বছরের সাজা দেওয়া হচ্ছে। নির্লজ্জতার চরম হলো, ইজাজ চৌধুরীর আসন কেড়ে নিয়ে দেওয়া হয়েছে রানা সানাউল্লাহকে, যিনি নিজ নির্বাচনে হেরে গিয়েছিলেন। এসব শাস্তি সম্পূর্ণ বেআইনি।”
ইমরান খান বলেন, “প্রতারণার মাধ্যমে আমাদের আসনগুলো একে একে ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সেই কারণে আমরা উপনির্বাচন বয়কট করেছি। এতে অংশ নিলে এসব ভুয়া সাজাকে বৈধতা দেওয়া হতো। আমি শ্রদ্ধা জানাই তাঁদের, যারা জাতীয় সংসদের কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন এবং সব সুবিধা ছেড়ে দিয়েছেন। আমি নির্দেশ দিচ্ছি, সেনেটের স্থায়ী কমিটিগুলো থেকেও পদত্যাগ দেওয়া হোক। আগামী দিনে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা ঘোষণা করব।”