শুক্রবার | ১২ সেপ্টেম্বর | ২০২৫

কে এই সুশীলা কার্কি?

নেপালে ব্যাপক রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে দেশটির সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কিকে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি পদত্যাগের পর রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পৌডেল, সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে তাকে নির্বাচিত করেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা আরোপকে ঘিরে তরুণপ্রজন্মের নেতৃত্বে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। রাজধানী কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে, সহিংসতায় অন্তত ৫১ জন নিহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী কারফিউ জারি করে। চাপের মুখে কেপি শর্মা অলি পদত্যাগ করেন এবং সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়। রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণে রাষ্ট্রপতি সেনাবাহিনী ও বিক্ষোভকারীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার পর কার্কিকে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করেন।

কে এই সুশীলা কার্কি?

সুশীলা কার্কির জন্ম ১৯৫২ সালের ৭ জুন নেপালের মরাং জেলার বিরাটনগর এলাকায়। মহেন্দ্র মরাং কলেজ ও ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষে তিনি ভারতীয় বারাণসীর বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। পরে ১৯৭৮ সালে ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন।

কার্কি ১৯৭৯ সালে আইন পেশায় প্রবেশ করেন। ২০০৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের অ্যাড হক জাস্টিস এবং ২০১০ সালে স্থায়ী বিচারপতি হন। ২০১৬ সালে তিনি নেপালের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন এবং ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তার দায়িত্বকালে দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান, মানবাধিকার রক্ষা ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত বিচার নিশ্চিতকরণ তাকে আলোচনায় আনে। নাগরিকত্ব আইন ও দুর্নীতি প্রতিরোধে দেয়া রায়গুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

অবসরের পরও তিনি সমাজ ও বিচারব্যবস্থা নিয়ে লিখে গেছেন। তার আত্মজীবনী ‘ন্যায়’ প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালে এবং উপন্যাস ‘কারা’ প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালে। এই দুই গ্রন্থে তিনি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও সামাজিক বাস্তবতা তুলে ধরেন।

রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আন্দোলনের মুখে যখন সমাধান খুঁজছিল দেশ, তখন কার্কির নিরপেক্ষ ভাবমূর্তি ও দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানের কারণে তার নাম প্রাধান্য পায়। রাষ্ট্রপতি ও সেনা নেতৃত্ব, পাশাপাশি বিক্ষোভকারীদের প্রতিনিধিদের আলোচনার পর তাকে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।

অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর তার অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে-
১. দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা।
২. স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া।
৩. দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপ জোরদার করা।
৪. জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা।

জেন জি আন্দোলনের নেতারা বলেছেন, “কার্কির নিয়োগ জনগণের বিজয়। তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেবেন, আমরা সেই প্রত্যাশা করি।” বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাজনীতির বাইরে থেকে আসা একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তিত্বকে নেতৃত্বে আনা রাজনৈতিক আস্থাহীনতার সময়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে রাজনৈতিক চাপ, দ্রুত নির্বাচন আয়োজন এবং সহিংসতা নিয়ন্ত্রণই হবে তার সবচেয়ে বড় পরীক্ষা।

বিক্ষোভোত্তর অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে সুশীলা কার্কির উত্থান নেপালে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল। বিচারপতি থেকে প্রধানমন্ত্রী, তার যাত্রা দেখাচ্ছে, জনগণ সংকটকালে নিরপেক্ষ ও সৎ নেতৃত্বেই আস্থা রাখে। নারীর নেতৃত্বে নেপালের এই অন্তর্বর্তী সরকার দেশটিকে গণতান্ত্রিক সংস্কার ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার নতুন আশায় নিয়ে গেছে।

উল্লেখ্য, শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) দেশটির প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাউডেল তার সরকারি বাসভবন ‘শীতল নিবাসে’ সুশীলা কার্কিকে শপথ পড়ান।


সূত্র : অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস, রয়টার্স, দ্য হিমালয়ান টাইমস, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া, লাইভমিন্ট, উইকিপিডিয়া

spot_img
spot_img

এই বিভাগের

spot_img