আমেরিকার প্রত্যক্ষ মদদে ইহুদিবাদী সন্ত্রাসীদের অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের ভয়াবহ মাত্রায় গণহত্যা ও অবরোধের ফলে পূর্ণ মাত্রায় দুর্ভিক্ষের কবলে পড়েছে গাজ্জা।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) উত্তর গাজ্জায় কুকুর কর্তৃক ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পঁচা লাশ খাওয়ার অত্যন্ত মর্মান্তিক ভিডিও ভাইরাল হয়।
ভিডিওত, পঁচতে শুরু করেছে এমন একটি পুরুষ লাশ মাটিতে কাত হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। লাশটির মাথা শরীর থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন। একটি কুকুর সেই লাশের বিচ্ছিন্ন অংশ খাচ্ছে তো অপর একটি কুকুর এসে তাতে বাগড়া দিচ্ছে।
এছাড়া চারপাশের ধ্বংসস্তুপে অন্যান্য লাশের বিভিন্ন অঙ্গ, মাথার খুলি ইত্যাদি পড়ে থাকার লোমহর্ষক চিত্রও সেই ভিডিওতে উঠে আসে।যা ইঙ্গিত করে, স্বাধীনতাকামী হামাসকে সন্ত্রাসী ও ইহুদিবাদী রাষ্ট্রের জন্য হুমকি উল্লেখ করে মার্কিন মদদে আত্মরক্ষার নামে কত ভয়াবহ মাত্রায় গণহত্যা ও নৃশংসতা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল।
আল জাজিরায় গাজ্জায় উদ্ধার তৎপরতা চালানো দল ও চিকিৎসকদের সূত্রে বলা হয়, গত ৫০ দিন যাবত কোনো ধরণের উদ্ধার তৎপরতা চালাতে দিচ্ছে না দখলদার ইসরাইলের সেনারা। এমনকি অ্যাম্বুলেন্সগুলোকেও তারা প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান ও লাশ বহন থেকে বিরত রাখতে পূর্ণশক্তি দিয়ে বাঁধা দিচ্ছে। অথচ চারদিকে শত শত লাশ ও প্রাণ যায় যায় এমন ব্যক্তিদের পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে।
জাবালিয়া, বাইতে লাহিয়া ও বাইতে হানুনের সড়কগুলোতে এখনো অসংখ্য নারী-শিশুর লাশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। স্থানীয়দের যারাই সুযোগ বুঝে লাশ কিংবা গুরুতর আহতদের উদ্ধার করতে যান তাদের ড্রোন দিয়ে সরাসরি হত্যা করা হয়।
আরো বলা হয়, ডজনে ডজনে আহত ব্যক্তি দীর্ঘদিন যাবত রক্তক্ষরণ হতে হতে শহীদ হয়ে যাচ্ছেন। ইসরাইলী সেনারা তাদের উদ্ধারে কাউকে যেতে তো দিচ্ছেই না উল্টো এক ফোটা পানি পানেরও সুযোগ করে দিচ্ছে না। যেনো ছটফট করতে করতে তারা মারা যায়।
এর পূর্বে নভেম্বরে দেখা যায়, ইসরাইলী সেনারা গাজ্জায় মানবিক খাদ্য সহায়তাবাহী ট্রাক প্রবেশের অনুমতি তো দিয়েছে কিন্তু সহায়তা গ্রহণের পর গাজ্জাবাসীরা প্যাকেট ও বস্তা খুলে দেখেন যে, তা বালিতে ভর্তি। এসময় তারা প্রচণ্ড কান্নায় ভেঙে পড়েন। বিশেষত লাগাতার অভুক্ত থাকা শিশুদের জন্য ও নারীদের জন্য আহাজারি করতে থাকেন। অভিসম্পাত করতে থাকেন জায়োনিস্ট সেনাদের, যারা খাদ্য লুট করে তাতে বালু ভরে দেয়।
গত জুলাইয়ে মানবিক ও খাদ্য সহায়তাবাহী এয়ার ড্রপ নিতে জড়ো হওয়া অভুক্ত ফিলিস্তিনিদের হামলা করেও হত্যা করে ইসরাইল। যা বিশ্বজুড়ে তুমুল সমালোচনার ঝড় তুলেছিলো।
বিশ্বমানবতার শত্রু অবৈধ রাষ্ট্রটি গত ফেব্রুয়ারি থেকেই কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের তিলে তিলে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়, যখন তারা দেখতে পায় যে হামাসের দেয়া শর্তে বন্দি বিনিময় চুক্তিতে যাওয়ার অর্থ পরাজয় মেনে নেওয়া। মাটির নীচে হামাসের গোপন সুড়ঙ্গ রয়েছে এমন অজুহাতে হাসপাতালগুলোতেও চালাতে থাকে ধ্বংসযজ্ঞ। যার প্রেক্ষিতে গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ মামলার পাশাপাশি কৃত্রিম দুর্ভিক্ষের প্রতিকারে আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালত আইসিজের দ্বারস্থ হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। আবেদন জানায় ইসরাইলের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার। হস্তক্ষেপ কামনা করে যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের ও ইসরাইলকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে। যেনো পূর্ণমাত্রার দুর্ভিক্ষ থেকে রক্ষা পায় ভয়াবহ গণহত্যা ও অবরোধের শিকার অঞ্চলটি।
এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও জাতিসংঘের পক্ষ থেকেও সেসময় সতর্ক করা হয় যে, গাজ্জায় ইসরাইলী অবরোধ ও যুদ্ধ অব্যাহত থাকলে অবিলম্বে পূর্ণমাত্রার দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। ২ লক্ষ ২০ হাজার শিশু অপুষ্টির কারণে প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে প্রাণ হারানোর দ্বারপ্রান্তে রয়েছে বলেও জানায় তারা।
সূত্র: আল জাজিরা









