শুক্রবার, জুন ২০, ২০২৫

হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প ও পাক সেনাপ্রধানের বৈঠক; আলোচনা হয়েছে ইরান-ভারতসহ যেসব বিষয়

spot_imgspot_img

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ আসিম মুনীর বুধবার (১৮ জুন) ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাউসে এক বৈঠকে মিলিত হন। হোয়াইট হাউসের ক্যাবিনেট রুমে লাঞ্চন সময় এই বৈঠক শুরু হয় এবং পরে তা ওভাল অফিস সফরে বিস্তৃত হয়। এক ঘণ্টার জন্য নির্ধারিত এই বৈঠক দুই ঘণ্টারও বেশি সময় স্থায়ী হয়।  পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বৈঠকটিকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি বলেন, “আমি আজ তাকে (ফিল্ড মার্শাল মুনীর) পেয়ে সম্মানিত বোধ করেছি। তিনি আমার সঙ্গে একমত হয়েছেন। আমি তাকে এখানে এনেছি কারণ আমি তাকে ধন্যবাদ জানাতে চেয়েছি যে, তিনি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের দিকে না গিয়ে শান্তির পথ বেছে নিয়েছেন। আমি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানাই, যিনি মাত্র কয়েকদিন আগে এখানে এসেছিলেন।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা এখন ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কাজ করছি। এই দুইজন অত্যন্ত বুদ্ধিমান ব্যক্তি যুদ্ধ চালিয়ে না গিয়ে পরমাণু যুদ্ধ থেকে নিজ নিজ দেশকে বিরত রেখেছেন। পাকিস্তান ও ভারত, দুইটিই বড় পরমাণু শক্তিধর দেশ।”

এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, “এই মানুষটি (জেনারেল মুনীর) পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ থামাতে অত্যন্ত প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করেছেন।”

ইরান প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, “তারা (পাকিস্তান) ইরানকে খুব ভালোভাবে চেনে, বেশিরভাগ দেশের চেয়ে ভালো। তারা কিছুতেই খুশি নয়। এটি এমন নয় যে তারা ইসরাইলের বিরুদ্ধে; বরং তারা উভয়কেই চেনে, তবে ইরানকে বেশি ভালো চেনে।”

পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর গণমাধ্যম শাখা আইএসপিআর জানায়, এই বৈঠকে দুই দেশ সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা জোরদার, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে বিশদ আলোচনা করে। ট্রাম্প ফিল্ড মার্শাল মুনীরের “জটিল আঞ্চলিক বাস্তবতায় তাঁর নেতৃত্ব ও দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা”র প্রশংসা করেন।

বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পাকিস্তানের আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানান এবং সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতায় দুই দেশের সম্পর্ককে শক্তিশালী ও ফলপ্রসূ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, “আমি পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত মিল এবং অভিন্ন স্বার্থের ভিত্তিতে একটি পারস্পরিক লাভজনক বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী।”

আলোচনায় শুধু সন্ত্রাস নয়, বরং বাণিজ্য, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, খনিজ ও খনি সম্পদ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, জ্বালানি, ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং উদীয়মান প্রযুক্তি নিয়ে সম্ভাব্য সহযোগিতা নিয়েও মতবিনিময় হয়।

আইএসপিআর জানায়, ফিল্ড মার্শাল মুনীর সরকারের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ জানান, যা দ্বিপাক্ষিক উষ্ণ সম্পর্কের প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ফিল্ড মার্শাল মুনীর বলেন, “সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে গঠনমূলক ও ফলপ্রসূ ভূমিকা পালন করেছেন, তার জন্য আমরা গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।”

তিনি বলেন, “বর্তমান বৈশ্বিক জটিল প্রেক্ষাপটে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের রাষ্ট্রনায়কসুলভ দূরদর্শিতা ও সমস্যা বোঝার ক্ষমতা প্রশংসার যোগ্য।”

বৈঠকে ইরান ও ইসরাইলের মধ্যকার চলমান উত্তেজনাও আলোচনায় উঠে আসে। দুই নেতা এই সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের ওপর জোর দেন।

এই বৈঠক সম্পর্কে আইএসপিআর বলেছে, “এটি দুই দেশের দীর্ঘস্থায়ী অংশীদারিত্বকে আরও জোরদার করার একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত, যার ভিত্তি হলো শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির প্রতি অভিন্ন প্রতিশ্রুতি।”

সূত্র : আল জাজিরা

সর্বশেষ

spot_img
spot_img
spot_img