বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক সম্পন্নকারীদের সনদ প্রদান ও সম্মাননা অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।
অনুষ্ঠানে উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী মাওলানা নিদা মুহাম্মদ, স্বররাষ্ট্রমন্ত্রী মাওলানা সিরাজুদ্দীন হক্কানী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোল্লা ইয়াকুব মুজাহিদ।
হাইয়ার এডুকেশন মিনিস্টার নিদা মুহাম্মদ
আজ আপনাদের শিক্ষা জীবনের ইতি ঘটতে যাচ্ছে। আপনাদের সামনে এখন ২টি পথ। নিজেকে উচ্চতর শিক্ষায় নিয়োজিত করা নয়তো কর্মে। আপনাদের উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা আমরা উপলব্ধি করতে পারি। তাই দেশেই সকলকে মানসম্মত মাস্টার্স ও ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ করে দিতে পূর্ণ উদ্যোমের সাথে কাজ করছি আমরা। আমাদের লক্ষ্য হলো, ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের শিক্ষা ব্যবস্থাকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যেনো উচ্চতর শিক্ষার জন্য কোনো আফগানকেই বাইরে যেতে না হয়। দেশেই যেনো সকলের শিক্ষা ও মেধার বিকাশ ঘটে। ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠে। বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়।
আপনারা জেনে আনন্দিত হবেন যে, আপনাদের কাজের সুযোগ করে দিতে, শিক্ষা ও মেধা কাজে লাগাতে ইমারাতে ইসলামিয়ার সরকার এবছর মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পদে ২৫০০ জনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ঘোষণা করেছে, যার প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়াও ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। উপযুক্ত প্রার্থী বাছাইয়ে মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়গণ অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ইতিমধ্যে অনেক মেধাবী যুবকের নিয়োগও চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। আপনারা দেশের ভবিষ্যত। আপনাদের পেশাগত সক্ষমতা ও দক্ষতা ইমারাতে ইসলামিয়ার অগ্রগতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই দেশেই আপনাদের সকলের চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা চাই, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টায় আপনারাও আমাদের সাথে শরীক হোন
স্বররাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজুদ্দীন হক্কানী
আল্লাহ পাকের অনেক শুকরিয়া যে তিনি আমাদের সকলকে মহামূল্যবান স্বাধীনতা দিয়ে এহসান করেছেন। প্রকৃত স্বাধীন জাতি হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়ানোর ও স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের অপূর্ব সুযোগ দান করেছেন। তাই স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে কাজে লাগিয়ে আমাদের পর-নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এবিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়াকে আগামীর জন্য রেখে দেওয়ার অর্থ বর্তমানকে হারানোর ঝুঁকি তৈরি করা। জাতীয় অগ্রগতি নিশ্চিত করতে ব্যক্তি ও সমাজের উচিত নয় কারো আহ্বান কিংবা আমন্ত্রণের অপেক্ষায় বসে থাকা। ইমারাতে ইসলামিয়ার বাছাইকৃত ব্যক্তি হিসেবে আমাদের উচিত দেশের অগ্রগতি হবে এমন কাজগুলো চিহ্নিত করা এবং নিয়মিত তাতে অবদান রেখে যাওয়া, তা যত ছোট হোক না কেনো! এছাড়া কোন কাজই ছোট কিংবা লজ্জার নয় বরং ইসলামী বিশ্বাস ও মূল্যবোধ মোতাবেক বৈধ সব কাজই সম্মানজনক ও গুরুত্বপূর্ণ। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এমন কাজের মুখোমুখি হলে নির্দ্বিধায় তা পালন করা উচিত।
দেশজুড়ে বিস্তৃত স্কুল,কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয়, আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ভিন্ন চোখে দেখা যাবে না বরং এগুলোর সহাবস্থানকে সম্মিলিত শক্তি হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। সকলে মিলেই আমরা পূর্ণ একটি দেহ। পূর্ণ একটি জাতি। এক পক্ষ ছাড়া অপর পক্ষ অসম্পূর্ণ। তাই ভেদাভেদ দূরে ঠেলে দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিতে আমাদের সম্মিলিত ভাবে কাজ করতে হবে। দেশের অগ্রগতি উলামা, প্রফেসার, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ছাত্র ও শিক্ষক সহ সকলের সমন্বয়ের উপর নির্ভরশীল। স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্য, চিন্তাগত বৈচিত্র্য ও ঐক্য আমাদের উন্নত ও শক্তিশালী রাষ্ট্র গড়ার পথে নিয়ে যাবে। তবে অগ্রগতি অর্জন সময় সাপেক্ষ বিষয়। গ্রেজুয়েটদের অবদান এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চাই সে মাদরাসার গ্রেজুয়েট হোক কিংবা জাগতিক ও আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের।
আজ আপনাদের যে ২৫০০ জন শিক্ষার্থী স্নাতক শেষ করেছেন, নিজ শিক্ষা, প্রতিভা ও যোগ্যতাকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে দেশের অগ্রগতি, সমাজের উন্নয়ন ও ইসলামী শাসনব্যবস্থার স্বার্থে একনিষ্ঠভাবে সেবা করে যাবেন বলে আমরা আশা রাখি।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোল্লা ইয়াকুব মুজাহিদ
আপনাদের আমাদের সকলের লক্ষ্য একই। এখন সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে আমাদের সম্মিলিত ভাবে প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা নিজেদেরকে পূর্ণ দেহের ভিন্ন ভিন্ন অঙ্গের সাথে তুলনা করতে পারি, যেখানে প্রতিটি অঙ্গের কাজ ভিন্ন ও স্বতন্ত্র কিন্তু দেহকে সচল রাখতে সেগুলো সম্মিলিতভাবে কাজ করে যায়। মানব সমাজও অনুরূপ। এতে একজন হৃৎপিণ্ডের, আরেকজন চোখের, কেউ হাতের, কেউ পায়ের আবার কেউ বা ভাষা ও মনের ভূমিকা পালন করে। আমাদের এটা বুঝা গুরুত্বপূর্ণ যে, যে কোনো একটির উপর নির্ভর করা যথেষ্ট নয়। যেমন, শুধু মনের উপর নির্ভর করে বসে থাকা যথেষ্ট নয়। কেননা হৃৎপিণ্ড অন্য অঙ্গের সাহায্য ব্যতীত তার কার্যক্রম পরিচালনা করতে সক্ষম নয়। অনুরূপভাবে চোখ এবং শরীরের বাকি অঙ্গগুলোরও একই সমস্যা। তারা একে অপরকে ছাড়া ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। তাই প্রতিটি অঙ্গই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটিরই নির্ধারিত কাজ রয়েছে। হাতকে অবশ্যই তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে। অনুরূপভাবে পা এবং চোখকেও নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে। যদি প্রতিটি অঙ্গ সুস্থ থাকে, নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে তবেই একটি মানব দেহ পরিপূর্ণ ভাবে সচল হয়ে উঠে। ব্যক্তিকে কাজে, অপরের সেবায় ও নিজ লক্ষ্য উদ্দেশ্য পূরণে সক্ষম করে তোলে।
সূত্র: আরটিএ








