রবিবার, জুন ১, ২০২৫

ভারতে ব্যাপক দূর্নীতি ফাঁস করে চরম বিপাকে মুসলিম সাংবাদিক দম্পতি; করেছেন আত্মহত্যার চেষ্টা

spot_imgspot_img

ভারতে ব্যাপক দূর্নীতি ফাঁস করে অপরাধী ঠিকাদার ও উগ্র হিন্দুত্ববাদী প্রশাসনের রোষানলে পড়েছেন মুসলিম সাংবাদিক দম্পতি ইসরার এবং মিরাজ।

শুক্রবার (৩০ মে) মুসলিম মিররের খবরে একথা জানানো হয়।

খবরে বলা হয়, ব্যাপক দূর্নীতি ফাঁস করে অপরাধী ঠিকাদার ও উগ্র হিন্দুত্ববাদী প্রশাসনের রোষানলে পড়ে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন উত্তর প্রদেশের পিলিভীত জেলার মুসলিম সাংবাদিক দম্পতি ইসরার ও মিরাজ।

একটি রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতির তথ্য ফাঁস করায় স্থানীয় প্রশাসন ও ঠিকাদারের লাগাতার হয়রানির শিকার হয়ে তারা এই চরম সিদ্ধান্ত নেন বলে বিষপানের পূর্ব মুহুর্তের ভিডিও থেকে জানা যায়।

বিষপানের ঠিক আগমুহূর্তে ধারণ করা হৃদয়বিদারক ভিডিওতে তারা স্পষ্টভাবে জানান, তাদের হয়রানি ও নির্যাতনের পেছনে রয়েছেন বিসালপুরের সাব-ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট (SDM) নগেন্দ্র পাণ্ডে, বারখেদা নগর পঞ্চায়েতের চেয়ারম্যান শ্যাম বিহারী ভোজওয়াল এবং ঠিকাদার মঈন।

উত্তর প্রদেশের সাহসী সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত ইসরার ভিডিও বার্তায় বলেন, “কয়েক দিন আগে এক প্রতিবেদনে আমি বারখেদা নগর পঞ্চায়েতের তত্ত্বাবধানে চলা একটি রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতির বিষয়টি ফাঁস করি। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ দূর্নীতির বিষয়টি আমলে নেন এবং তদন্ত শুরু করেন। কিন্তু এর ফলে আমাদের উপর প্রতিশোধমূলক প্রশাসনিক আক্রমণ নেমে আসে।”

তিনি জানান, “১৯ মে রাতে ঠিকাদার মঈনের অভিযোগের ভিত্তিতে আমার বিরুদ্ধে একটি ভুয়া চাঁদাবাজির মামলা রুজু করা হয়। সাব-ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট নগেন্দ্র পাণ্ডে এবং চেয়ারম্যান শ্যাম বিহারী ভোজওয়াল এতে মদদ দেন। এরপর থেকে আমাদের বাড়িতে বারবার পুলিশি হানা ও লাগাতার হয়রানি শুরু হয়।”

কাঁপা কণ্ঠে ইসরার বলেন,
“সাব-ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট নগেন্দ্র পাণ্ডে, চেয়ারম্যান শ্যাম বিহারী ভোজওয়াল এবং ঠিকাদার মঈন আমাদের এমনভাবে নিপীড়ন করেছেন যে আমরা আত্মহত্যা ছাড়া আর কোনো পথ খুঁজে পাইনি।”

তিনি আরও অভিযোগ করেন, ঠিকাদারের করা অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ যখন তাদের বাড়িতে হানা দেয়, প্রকৃত সমাধানের পথে না হেটে পুলিশ তাদের পরিবারের সদস্যদের টার্গেট করে হয়রানি করতে থাকে।

ইসরার উগ্র হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীদের মদদ দেওয়ার জন্য কুখ্যাত মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের কাছে সরাসরি বিচার চেয়ে বিষপানের আগ মুহুর্তে ভিডিও বার্তায় বলেন,“যোগী জি, আমরা নির্দোষ। আমরা শুধু সত্য প্রকাশ করেছি বলে আমাদের ভিকটিম বানানো হয়েছে। আমাদের ন্যায়বিচার প্রাপ্য। যারা আমাদের এই অবস্থায় ঠেলে দিয়েছে, তাদের বিচার হওয়া দরকার।”

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করা মুসলিম সাংবাদিক দম্পতির ভিডিওটি তাদের আত্মীয়স্বজনের নজরে পড়ার সাথে সাথে তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তাদের পিলিভীত জেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন। বর্তমানে তারা সংকটজনক অবস্থায় রয়েছেন। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঠিকাদার মঈন বারখেদা থানায় সাংবাদিক ইসরারের বিরুদ্ধে একটি মামলা রুজু করেন। যেখানে বলা হয়, কাঙ্খিত চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় তাকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিয়ে আসা হচ্ছিলো। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রতিবেদন প্রকাশেরও ভয় দেখানো হয় মর্মে অভিযোগ আনা হয়। মামলা রুজুর পর থেকে ইসরার ও মিরাজ পলাতক ছিলেন।

তবে ইসরারের দাবি, দুর্নীতির প্রতিবেদন প্রকাশ করায় প্রতিশোধমূলকভাবে এই ভুয়া মামলা দায়ের করা হয়েছে।

পুলিশের একাধিক অভিযান ও বাড়িতে তল্লাশির ঘটনায় মানসিকভাবে চরম বিপর্যস্ত হয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে অভিযুক্ত দম্পতি সম্প্রতি আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হন।

বিসালপুরের সিটি অফিসার নিশ্চিত করেছেন যে, এই দম্পতি বর্তমানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। পুরো ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। ভিডিওতে উল্লেখিত অভিযোগ ও মামলার পেছনের প্রকৃত কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এই ঘটনায় স্থানীয় সাংবাদিক সমাজ ও সাধারণ মানুষ তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা সুষ্ঠ তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। অনেকেই মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের হস্তক্ষেপ চেয়ে ন্যায়বিচারের আহ্বান জানিয়েছেন।

ইসরার ও মিরাজ যখন জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন, তখন এই ঘটনা উত্তর প্রদেশের সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও দুর্নীতি ফাঁস করতে গিয়ে তারা যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন, সে বিষয়ে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

সর্বশেষ

spot_img
spot_img
spot_img