এডভোকেট মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী | সাবেক সংসদ সদস্য ও সহসভাপতি : জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ
দেশের ইসলামী ঘরানার প্রথম ও জনপ্রিয় অনলাইন পত্রিকা ইনসাফ অর্ধযুগ অতিক্রম করেছে। এই আনন্দঘন মুহূর্তে ইনসাফের সম্পাদক প্রকাশক সংবাদকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় ষষ্ঠ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন অনলাইনে সম্পন্ন করায় ইনসাফ পরিবারকে ধন্যবাদ জানাই।
অতীতের মতো আগামীতেও বাতিলের বিরুদ্ধে ও মজলুমের পক্ষে দৃঢ় অবস্থানে অটল থাকবে ইনসাফ এই কামনা করি।
মাওলানা মীর ইদরীস নদভী | সাবেক উপদেষ্টা সম্পাদক : ইনসাফ
ইনসাফ অর্ধযুগ অতিক্রম করেছে আলহামদুলিল্লাহ্। এই আনন্দঘন মুহূর্তে ইনসাফ এবং ইনসাফ পরিবারকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ছোট পরিসরে এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন অনলাইনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যা প্রশংসনীয়।
২০১৩ সালের ৫ মে’র চেতনাকে ধারণ করে তার ঠিক এক বছর পর ২০১৪ সালের ৫ মে যাত্রা শুরু করে ইনসাফ। এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে গণমানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে প্রিয় ইনসাফ।
তথাকথিত মূল ধারার গণমাধ্যমের বিপরীতে অবস্থান নিয়ে ইনসাফের পথ চলাটা মোটেও মসৃণ ছিল না। তবে বাতিলের মোকাবিলায় ইনসাফের অবস্থান সুদৃঢ়। মজলুমের হৃদয়ে করেছে আশার সঞ্চার।
ইতিমধ্যে ইনসাফ দেশের মিডিয়া জগতে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে, যা সুস্পষ্ট।
অগণিত পাঠকের সিক্ত ভালোবাসায় ইনসাফ অতীতের মতো আগামীতেও ইসলাম, দেশ, মাটি ও মানুষের পক্ষে থাকবে এই কামনা করি।
দেশের ইসলামী ঘরানার সর্বপ্রথম গণমাধ্যম ইনসাফ। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে সবসময় সচেতন থাকা এ পত্রিকাটি ২০১৪ সাল থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে পত্রিকাটি অর্ধযুগের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। এ উপলক্ষে ইনসাফ এবং তারসাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন।
শূন্য থেকে শুরু করে ইনসাফ আজ ৭ম বছরে উপনীত হয়েছে। ইনসাফ পরিবার শুধু একটি পরিধিতেই নিজেদের কাজকে সীমাবদ্ধ রাখেনি। এযাবৎকাল পর্যন্ত বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের পাশাপাশি ইসলামেরও বহু কাজ করেছেন তাঁরা।
সংবাদ পরিবেশনের পাশাপাশি ইনসাফ-শো নামে যুগান্তকারী বেশ কিছু অনলাইন টকশো করেছে ইনসাফ। ভিডিও সংবাদ পরিবেশনে মাধ্যমে গণমাধ্যমের ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে এই মিডিয়াটি। মাদরাসা ও সাধারণ শিক্ষিতদের সমন্বয় করে গণমাধ্যমের পথচলার প্রথম সাক্ষী সম্ভবত ইনসাফই।
একটা সময় এদেশে ইসলামপন্থীরা অবহেলিত ছিলো। কুরআনের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের সন্তানগণ বহুবার বিশ্বরেকর্ড করা সত্ত্বেও দেশের মিডিয়াগুলো মূল্যায়ন করার মতো বিষয় মনে করেনি।
এরপর সময় পাল্টেছে। ২০১৪ সালে ইনসাফের যাত্রা শুরু হলো। সততা, সাহসিকতা ও আদর্শের উপর অবিচল থেকে ইনসাফ ইসলামী ঘরানার একমাত্র মুখপাত্র হয়ে জনমনে জায়গা করে নিলো। একই পথের অনুস্মরণ করে আজ ইসলামী ঘরানার বহু মিডিয়া তৈরি হয়েছে। আজ ইসলামী অঙ্গন আর অবহেলিত নয়। কারো তামাশার পাত্র নয়।
ষষ্ঠ বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে ইনাফের প্রতি শুভকামনা থাকবে- শুধু ৬ বছর নয়, হাজার বছর নিষ্ঠার সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়ে যাক ইনসাফ সেই কামনা করি।
সম্পাদক সাইয়েদ মাহফুজ খন্দকারসহ ইনসাফ পরিবারের প্রতি আমার আন্তরিক ভালবাসা, অভিনন্দন ও শুভকামনা।
‘ইনসাফ’-এ লেখা আর ‘ইনসাফ’ নিয়ে লেখা, দুটি ব্যাপারে পার্থক্য বিস্তর। মাঝেমধ্যে ‘ইনসাফ’-এ লিখি, কিন্তু ‘ইনসাফ’-এর অর্ধযুগের যাত্রা সমাপন করে যুগপূর্তির বাকি অর্ধপথের যাত্রারম্ভ উপলক্ষ্যে কিছু লেখাটা নিতান্তই কঠিন।
‘ইনসাফ’-এর সবচেয়ে বড় অবদান যেটা আমি মনে করি, একটা নতুন ধারা তৈরি করা। ‘ইনসাফ’-এর সমবয়স্ক অনেক অনলাইন পত্রিকা রয়েছে। তবে সবগুলো সমপঙ্-ক্তিভোজ্য নয়। ‘ইনসাফ’ কিছুটা আলাদা। সবাই সমপৃষ্ঠে অবস্থান করলেও ‘ইনসাফ’কে কিছুটা ভিন্নভাবে এগোতে হয়েছে। ইসলামি ঘরানার অনলাইন পত্রিকা হিসেবে ‘ইনসাফ’ যাত্রা শুরু করে। এ যাত্রায় ‘ইনসাফ’ই প্রথম। অন্যান্য অনলাইন পত্রিকাগুলো কেউই নিজেদের জায়গায় প্রথম নয়। ‘ইনসাফ’ সমতল পথে তার ছয়টি বছরের যাত্রা সমাপন করেছে, তা নয়। পথ ছিল বন্ধুর। এবড়োখেবড়ো পথ ধরেই এগোতে হয়েছে অর্ধেক যুগ। সেই জায়গায়ই ‘ইনসাফ’ অন্যদের চেয়ে আলাদা। বেশিই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। অন্যেরা যেখানে নিজেদের প্রচার-প্রসারে ব্যস্ত ছিল, ‘ইনসাফ’-কে সেই বিষয়টি যেমন দেখতে হয়েছে, তেমনি ইসলামি ঘরানার অনলাইন পত্রিকা হিসেবে নিজের অবস্থানকে শক্ত করতে হয়েছে। এ মুলুকে শকুনের পরিমাণ নিতান্ত কম নয় কিনা! সেই শকুনগুলোর চোখের সম্মুখে ‘ইনসাফ’কে নিজের শিকড়কে গভীরে আঁকড়ে রাখার ব্যবস্থা করতে হয়েছে।
‘ইনসাফ’কে স্বাগত জানাই। সামনে আরও বিচিত্র অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে এগোতে হবে। শুভেচ্ছা, অভিনন্দন ও সাধুবাদ পাওয়ার সবচেয়ে বেশি দাবিদার ‘ইনসাফ’-এর সম্পাদক শ্রদ্ধেয় সাইয়েদ মাহফুজ খন্দকারের। ‘ইনসাফ’কে একটি অনলাইন পত্রিকা থেকে প্রতিষ্ঠানে এবং প্রতিষ্ঠানকে একটি পরিবারের মতো করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সবচেয়ে প্রশংসা পাওয়ার বিষয়টি হলো, তিনি ‘ইনসাফ’কে এগিয়ে নিচ্ছেন বড়দের পরামর্শের ওপর ভিত্তি করে। ‘ইনসাফ’-এর সঙ্গে রয়েছে বড়দের দুআ ও পরামর্শ। তা-ই পথ চলার পাথেয় বলে আমি মনে করি। এটি ধরে রাখা সবচেয়ে জরুরি।
‘ইনসাফ’-এর কাছে আমার কিছু চাওয়ার রয়েছে। একজন পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী হিসেবে আমি চাইবো, ‘ইনসাফ’ যেমন করে একটু নতুন ধারা আনতে শুরু করেছে, তেমনি বাংলা ভাষায়ও একটি নতুন ধারা চাইলেই আনতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস। ‘ইনসাফ’-এর একটি সাহিত্য পাতা বা বিভাগ থাকা জরুরি। যেখানে যেকেউ তার লেখা পাঠাতে পারবে। সম্পাদনা পরিষদের নিকট গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচ্য হলে তা প্রকাশিত হবে। গল্প, কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, শিশুসাহিত্যসহ অনেক কিছুই স্থান পেতে পারে সাহিত্য বিভাগে। সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিতদের মাঝে ‘ইনসাফ’ জায়গা করে নিচ্ছে। ‘ইনসাফ’-এর সঙ্গে জড়িত সকলের উচিত হবে তাদের আপন করে নেওয়া। তাদের মাধ্যমে পুরো সমাজে ‘ইনসাফ’কে ছড়িয়ে দেওয়া। আরেকটি বিষয়, আমার মনে হয়, ‘ইনসাফ’-এর ইংরেজি সংস্করণ বের করার সময় হয়েছে। এতে একটি অন্যমাত্রা যোগ হবে বলে আমি মনে করি। ইংরেজি ভাষার প্রতি আলাদা কোনো গুরুত্ব দিয়ে নয়, বহুভাষিকতার ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করেই ব্যাপারটি বলছি। ধীরে ধীরে ইংরেজি ছাড়াও অন্যান্য ভাষায় যদি ‘ইনসাফ’ প্রকাশিত হয়, তাহলে বাংলাদেশের বুকে একটি ইতিহাস গড়ে উঠবে বলে আমার বিশ্বাস।
‘ইনসাফ’-এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা বা এ পরিবারের প্রতিটি সদস্যের প্রতি আমার সালাম ও ভালোবাসা রইল। সবার প্রতি একটি যুগের অর্ধের পেরিয়ে আসায় শুভেচ্ছা এবং সম্মুখের যাত্রায় অনেক শুভকামনা। আল্লাহ তাআলা কবুল করে নিন। আমীন।
বহুদিন থেকে অনলাইন পত্রিকা ইনসাফের সঙ্গে পরিচিত। বস্তুত ইনসাফ এর কার্যক্রম দেখে যারপরনাই আমি আনন্দিত। আমার নিকট বিশেষভাবে ভালো লেগেছে:
১. রাজনৈতিক মতবিরোধের ঊর্ধ্বে উঠে সকল ঘরানার উলামা ও বুদ্ধিজীবীদের বিভিন্ন উপলক্ষে একই প্লাটফর্মে নিয়ে আসতে পেরেছে ইনসাফ।
২. বিগত দিনগুলোতে ‘ইনসাফ শো’ শিরোনামে একটি সাক্ষাতকার পর্ব চালু হয়েছিলো। যা বোদ্ধামহলে বেশ সাড়া জাগিয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমিও মুগ্ধ হয়েছি এসব শো থেকে।
৩. মিথ্যা ও ভুয়া তথ্যের অবাধ ছড়াছড়ির এইসময়ে যখন অনেকেই শুধু সস্তা খ্যাতি ও প্রচার লাভের আশায় ধর্মীয় ও সাংবাদিকতার নীতি-নৈতিকতা উপেক্ষা করে চলছে, সেখানে ইনসাফ অত্যন্ত সচেতনতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে বলে আমার বিশ্বাস।
ইনসাফ সফলতার সহিত অর্ধযুগ অতিক্রম করতে পেরেছে জেনে আশান্বিত হলাম। আশা করি, ইনসাফ আগামীতেও বিচক্ষণতার সাথে তার কর্মতৎপরতা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হবে ইনশাআল্লাহ।
আমি ইনসাফের এই ষষ্ঠ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সম্পাদক শ্রদ্ধেয় সাইয়েদ মাহফুজ খন্দকার ভাই সহ পত্রিকার উপদেষ্টা মণ্ডলী, কর্মী, কলাকৌশলী, বিজ্ঞাপনদাতা ও পাঠকবৃন্দ সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। ইনসাফ আমাদের মাঝে বেঁচে থাকুক হাজার বছর। এই কামনা করি।
আহমদুল হক | উপদেষ্টা সম্পাদক: টাইমস রিপোর্ট টোয়েন্টিফোর ডটকম
অর্ধযুগ পেরিয়ে সত্যের সন্ধানে সপ্তম বছরে পা দিল আমাদের সবার প্রিয় ইনসাফ। গণমাধ্যমের কাজই হল সত্য অনুসন্ধান করা। একটি সমাজ বা রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিকনির্দেশনা আমরা খুঁজে পাই গণমাধ্যমে। সেই সত্য যদি নেতিবাচক হয় তাহলে তা তুলে ধরা হয় পরিশোধনের লক্ষ্যে; আর তা যদি হয় ইতিবাচক তাহলে তা তুলে ধরা হয় অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ জোগাতে।
কিন্তু বলা যতটা সহজ বাস্তব ততটাই বন্ধুর। সে সত্য তুলে ধরার ক্ষেত্রে নানারকম বাধা-বিপত্তি আসে। সবাই তা সামলে উঠতে পারে না; সাহসী, নির্মোহ এবং সত্যের প্রতি নিষ্ঠাবান হতে হয়।
সেদিক বিবেচনায় ইনসাফ গত অর্ধযুগ ধরে সন্তোষজনক ভূমিকা পালন করতে সমর্থ হয়েছে- এ কথা বলতে কোনো দ্বিধা নেই; ইনসাফ সে কৃতিত্বের দাবি রাখে। তারপরও ‘বর্ষপূর্তি’ মানেই এক ধরনের হালখাতা। এক বছর ধরে আমি যা চেয়েছি তার কতটুকু করতে পেরেছি, কেনই বা বাকিটুকু করতে পারিনি তার একটা স্বচ্ছ ব্যাখ্যা খোঁজার চেষ্টা করা উচিত এই দিনে। তেমনটি হলে ভবিষ্যৎ পথচলা আরও বেশি সফল ও সার্থক হবে। ইনসাফ সে রকমটি করতে পারবে- এ বিশ্বাস আমাদের আছে। বর্ষপূর্তিতে ইনসাফের সম্পাদক পরম প্রিয় জনাব মাহফুজ খন্দকার ভাই সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এবং সম্মানিত পাঠকদের প্রতি রইল নিরন্তর শুভ কামনা। ইনসাফ পথচলা নিষ্কণ্টক হোক।
খন্দকার মুহাম্মাদ হাবিবুল্লাহ | লেখক ও প্রাবন্ধিক, দোহা কাতার
বাংলাদেশের মিডিয়া জগত বলতে গেলে অনেকটাই সেক্যুলারগোষ্ঠী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। আর এরা অনেক সময় পত্রিকা ও টেলিভিশন টিকিয়ে রাখার স্বার্থে ভিনদেশী স্বার্থকে বাংলাদেশী স্বার্থের উপরে প্রাধান্য দেয় এবং ভিনদেশী সংস্কৃতিকে বাঙ্গালী সংস্কৃতির নামে চাপিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা করে থাকে। তারা দেশবিরোধী কাজগুলো সূক্ষ্মভাবে করলেও ইসলামবিরোধী কাজগুলো প্রকাশ্যে করার চেষ্টা করছে ইদানীং। ইসলাম ও মুসলমানদেরকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা ছাড়াও ইসলামী ব্যক্তিত্বদের নিয়ে ভিত্তিহীন সংবাদ ও মাদ্রাসা-মসজিদ নিয়ে অপপ্রচার চালাতে এরা ইদানীং আগের মত আর রাখঢাক রাখছে না। এরা ইসলামবিরোধী কথাবার্তা প্রচার করার পরে আবার জনগণের চাপের কারণে ক্ষমা চাওয়ার নজিরও আছে। তাদের দেশবিরোধী ও ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড অনেক মানুষ ধরতে না পারলেও দেশপ্রেমিক জ্ঞানী মানুষেরা বুঝতে পারে। এরই মধ্যে আবার গত কয়েক বছর আগে হঠাৎ করে উদয় হয়ে কিছু মানুষ শাহবাগে অবস্থান নিয়ে প্রকাশ্যে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে কথাবার্তা বলতে লাগলো এবং অনলাইনে তা প্রচার করতে লাগলো। যে কারণে হেফাজতে ইসলামকে মাঠে নামতে হয়েছিল সেইসব ইসলামবিদ্ধেষী লোকগুলোর ইসলাম অবমাননার প্রতিবাদ করতে। সেই সময় দেশপ্রেমিক ও ইসলামপ্রিয় মানুষেরা এমন একটি পত্রিকার অপেক্ষায় ছিল, যা দেশীয় স্বার্থকে রক্ষা করবে, সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে এবং ইসলামী ভাবধারাকে সমাজে ফুটিয়ে তুলবে। তাদের সেই অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আলোর মুখ দেখেছিল ইনসাফ ২০১৪ সালে।
সেক্যুলার পরিবেষ্টিত মিডিয়া জগতে ইসলামী ভাবধারার একটি পত্রিকা টিকে থাকা কতটা কষ্টের তা অনেকেই হয়ত বুঝতে পারবে না। তাছাড়া কওমি ঘরানার লোকজন মিডিয়া জগতকে একসময় দুনিয়াবি বিষয় বলে এড়িয়ে যেতো। এমনকি বাংলা ভাষার গুরুত্ব বুঝতেই আমাদের অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। মিডিয়া জগতের গুরুত্ব সবাই এখনো ঠিক বুঝতে পারছেন তা বলা যাবে না। যে কারণে আজ পর্যন্ত কোনো আলেম, কোনো মুফতি সাহেব একটু বড় করে বলেননি যে, এই যুগে ইসলামী মিডিয়াতে দান করা ছওয়াবের কাজ। অথচ এই কথাটি মুফতী সাহেবদের বলা উচিৎ ছিল। আমরা যখন বুঝতে পারলাম যে, মাতৃভাষা ও মিডিয়া এ যুগে শক্তিশালী হাতিয়ার, তখন পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার জল অনেক গড়িয়ে গেছে। দেশের চালকের আসন ও মিডিয়া জগত তখন এক একচেটিয়া সেক্যুলারদের দখলে।
হাতেগোনা কিছু প্রিন্ট মিডিয়া তখনো অনেক প্রতিকূলতা পেরিয়ে টিকে ছিল একমাত্র মানুষের ভালবাসার কারণে। তার মধ্যে ছিল দৈনিক ইনকিলাব আর মাসিক মদীনাসহ হাতেগোনা কয়েকটি পত্রিকা। এক সময় মানুষ অনলাইন মিডিয়ার প্রতি ঝুঁকল এবং ফেসবুক, টুইটার, ওয়াটসাপ ইত্যাদি চালু হওয়ার আগে মানুষ অডিও চ্যাট ও ব্লগের মাধ্যমে নিজেদের মতামত ও ভাব প্রকাশ করতো। তখনও বলতে গেলে ইসলামবিরোধী মহলের জয়জয়কার পুরো নেট দুনিয়া জুড়ে। কওমিরা তখনো এ জগত নিয়ে বেখবর ছিল। তবে কিছু সচেতন কওমি তরুণ তখনো সেইসব ইসলামবিদ্ধেষী ব্লগগুলোতেও যোগ্যতা বলে নিজেদের উপস্থিতির জানান দিতো স্বল্প পরিসরে হলেও। সেইসব সচেতন তরুণদের মধ্যে একজন ছিলেন ইনসাফ এর সম্পাদক মাহফুজ ভাই। যিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, পিছিয়ে থাকা কওমিদেরকে টেনে নিয়ে আসতে হবে এখানে। বলা যায় তাঁর সেই স্বপ্ন ও চেষ্টার অপর নাম হল।
শুরুর দিকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে বললে ভুল হবে। বরং বলতে হবে ইসলামী মিডিয়ার জন্য টিকে থাকা আগেও কষ্টের ছিল এখনো কষ্টের। তবে সুখের বিষয় হল এখন কওমি জগত আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন এবং তারা নিজেদের যোগ্যতা বলে অল্প দিনেই দীর্ঘদিনের অপূর্ণতাকে পূরণ করে দিয়েছে অনেকটাই। ইদানীং কওমি ছাত্র-শিক্ষকরা মিডিয়া জগতে সগৌরবে উপস্থিত, সচেতন এবং কর্মঠ। দাওয়াতি কাজ, ফিকহি আলোচনা, ফতোয়া, তালিম, সাংবাদিকতা সবখানেই এখন তারা সরব আলহামদু লিল্লাহ। অনলাইন মিডিয়াতে কওমিদের টেনে আনতে যেসব ব্যক্তিত্ব অসাধারণ অবদান রেখেছেন তাদের সবার নাম নিলে এই লেখা অনেক লম্বা হয়ে যাবে। তবে দুইজন মুরব্বির নাম না নিলে সেটা অকৃতজ্ঞতা হয়ে যাবে, যারা অনলাইন মিডিয়াতে কওমি জগতের জন্য রাহবার হিসেবে কাজ করেছেন ও করে যাচ্ছেন। তাদের একজন হলেন হযরত মাওলানা ডক্টর আফম খালিদ হোসেন সাহেব, আর অন্যজন হলেন মুহতারাম মাওলানা শরিফ মুহাম্মদ সাহেব। তাদেরকে আল্লাহ উত্তম বিনিময় প্রদান করুন।
সেই থেকে একে একে অনেক ইসলামী পত্রিকার আবির্ভাব ঘটেছে আলহামদু লিল্লাহ। যেমন ইসলাম টাইমস, উম্মাহ, ফাতেহ, আওয়ার ইসলামসহ আরো অনেক। এভাবেই পথ চলা। এভাবেই আমারা নিজেদের উপস্থিতির জানান দিতে পেরেছি ইসলামী পত্রিকাগুলোর মাধ্যমে। যোগ্য, সচেতন, জ্ঞানী, মেধাবী কওমি আলেমদেরকে আল্লাহ উত্তম বিনিময় প্রদান করুন, যারা অল্প দিনেই মিডিয়া জগতে তাদের সরব উপস্থিতির মাধ্যমে দেশ ও জাতির পক্ষে অবদান রেখে যাচ্ছেন।
কওমি জগত সচেতন হলে এদেশের স্বাধীনতা সুদৃঢ় হবে তা সন্দেহাতীতভাবে বলা যায়। কারণ কওমি জগতের ওলামায়ে কেরাম সব সময় দেশের পক্ষে জান বাজি রাখতে প্রস্তুত ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। বিভিন্ন দুর্যোগের সময় তারা সাধারণ মানুষকে যেভাবে নিঃস্বার্থভাবে সাহায্য করেছেন তা বলতে গেলে নজিরবিহীন। বর্তমানে করোনা মহামারির এই দুঃসময়ে যখন মানুষ নিজেদের আত্মীয়স্বজনদেরকে পর্যন্ত দূরে ঠেলে দিচ্ছে, সন্দেহজনক রোগীদেরকে বাড়ী থেকে বের করে দিচ্ছে আর মৃতদের কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করতে ভয় পাচ্ছে, ঠিক তখনই একদল কওমি আলেম নিজেদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে হলেও মানবতার সেবায় এগিয়ে এসেছেন। তারা হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে করোনা রোগে মৃত যে কোনো মানুষকে তাদের ধর্মীয় রীতিনীতি অনুযায়ী কাফন-দাফন ইত্যাদি করে যাচ্ছেন। কারণ ইসলাম মানুষকে মানুষের মর্যাদা দিতে শেখায়। এমনকি মৃত মানুষের মর্যাদা দেয়ার বিষয়টিও ইসলামের শিক্ষা। সর্বোপরি তারা দেশপ্রেমিক। দেশপ্রেমিক বলেই তারা যে কোনো দুর্যোগের সময় দেশ ও জাতির সেবায় এগিয়ে আসে। এই কওমি জগতের বিপক্ষে যখনই যারা যে কোনো ধরণের বিরোধিতায় লিপ্ত হবে তারা নিঃসন্দেহে দেশের শত্রু হিসেবে প্রমাণিত হবে।
ইনসাফের ষষ্ঠ বর্ষ পূর্তিতে আমি ইনসাফসহ সমস্ত ইসলামী পত্রিকার দীর্ঘায়ু কামনা করছি এবং ইসলামী পত্রিকাগুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সাথে সাথে কওমি ছাত্রদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি একটি দরকারি বিষয়ে। আর তা হলো আপনারা অনলাইনে কী লিখবেন? আর কী লিখবেন না? কীভাবে লিখবেন? আর কীভাবে লিখবেন না? ফিকহি ও ইখতেলাফি বিষয়াদিতে কীভাবে কী বলবেন? আর কী বলবেন না? কোনও ইসলামী ব্যক্তিত্ব বা দাঈর ব্যাপারে অথবা কোনো ইসলামী দলের ব্যাপারে কতটা কী বলবেন? কীভাবে বলবেন? আর কী বলবেন না? এইসব বিষয়ে অভিজ্ঞদের কাছ থেকে আগে শেখার চেষ্টা করবেন। মনে রাখবেন আপনারা এদেশের স্বাধীনতা ও দীন ইসলামের রক্ষক। আপনার কথাবার্তা কেমন হওয়া উচিৎ আর কেমন হওয়া উচিৎ নয় তা অভিজ্ঞদের কাছ থেকে অবশ্যই জেনে নেয়ার চেষ্টা করবেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তার দীনের খেদমত করার তাওফিক দান করুন।
যখন আমি এইচএসসি পড়ি তখন ইংলিশ ফর টুডে বইতে পাওয়ার অফ মিডিয়া শিরোনামে একটা গল্প ছিলো। গল্পটা এমন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় যখন চারিদিকে যুদ্ধের ঘনঘটা সেই সময় রেডিও অনুষ্ঠানে এমন কিছু কথা প্রচার করা হয় যা জনমনে ভীতির সৃষ্টি করে। চারিদিকে যুদ্ধের আতংক ছড়িয়ে পড়ে।
সারা দেশের মানুষ দ্রুত নিজের বাড়ি ফিরতে মড়িয়া হয়ে উঠে। রাস্তায় দীর্ঘ ট্র্যাফিক জ্যামের সৃষ্টি হয়। কিন্তু আসলে পরবর্তীতে জানা যায় যে রেডিওতে যুদ্ধে সংক্রান্ত একটি কবিতা পড়া হয়েছিল। কিন্তু মানুষ সেটাকে ভুল বুঝে। এর কারন ঐ সময় সকলের কাছে রেডিও ছিলো একমাত্র প্রচার মাধ্যম। মানুষ রেডিওর ঘোষণা অনুযায়ী যুদ্ধের পরিস্থিতি অনুধাবন করতে পারতো।
তো দেখা গেলো রেডিওর অসতর্কভাবে কিছু অনুষ্ঠান প্রচারের ফলে পুরো দেশে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
ঐ গল্পের মূল যে ম্যাসেজ আমাদের জন্য ছিলো সেটা হলো মিডিয়া বা প্রচার মাধ্যমের গুরুত্ব। প্রচার মাধ্যমের ক্ষমতা। একটি প্রচার মাধ্যম চাইলেই একটি জাতির রাতের ঘুম হারাম করতে পারে।
আসলেও প্রচার মাধ্যম তরিৎ গতীতে মানুষকে প্রভাবিত করে। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রর অবদান সকলেরই জানা রয়েছে।
এতো গেল অতীতের কথা, বর্তমানেও আমার মিডিয়ায় গুরুত্ব নিজ চোখ দেখতে পাই। তুর্কীতে বহিশত্রুর দ্বার যে সেনা বিদ্রোহ হয়েছে তা ভন্ডুল করে দেয় প্রেসিডেন্ট এরদোগানের কয়েক মিনিটের ইউটিউবে এবং পরবর্তীতে বিশেষ ব্যাবস্থায় টিভিতে দেয়া বক্তব্য। আরও লক্ষণীয় তুর্কীর বীদ্রোহীরাও প্রথমে যেসকল জিনিস নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিলো তার মধ্যে সকল ইলেকট্রনিকস এন্ড প্রিন্ট মিডিয়া ছিলো।
মিডিয়ার গুরুত্ব আমরা অনেক দেরিতে বুঝতে পারলেও ইহুদি এবং খৃষ্টানরা তাদের মিডিয়াকে আমাদের বিরুদ্ধে ব্যাবহার করে আসছে বহু আগে থেকেই। উসমানী খেলাফতের পতন মূহুর্তে সুলতান আব্দুল হামিদ ইহুদি প্রভাবিত এবং মালিকানাধীন পত্রিকার দ্বারা নিজ জনগণের কাছেই হয়েছে রক্ত পিপাসু সুলতান। এমনকি ইহুদিদের পত্রিকার মিথ্যা সংবাদের কারনে সুলতান তার জনগণের আস্থা হারায়। পত্রিকাগুলো তাদের লেখনির মাধ্যমে জনমনে খেলাফতের বিরুদ্ধ উসকে দেয়। গনতন্ত্রের উদারতাকে তাদের চোখে উন্নতির মোড়কে তুলে ধরে। এমনকি আরব তুর্কী বিদ্রোহের জন্য ঐসব পত্রিকার মিথ্যা সংবাদ ছিলো অন্যতম মৃল কারণ।
বর্তমানেও বিশ্ব মিডিয়ার প্রায় সিংহ ভাগই ইহুদিদের দখলে। এর দ্বারা তারা আমাদের সাংস্কৃতিক আগ্রাসন করছে। মিশরের হোসনি মোবারকের পতনের পিছনেও শক্তিশালী সামাজিক প্রচার মাধ্যম ফেসবুকের ভূমিকা ছিলো। সবচেয়ে অবাক হবেন মুসলিম বিশ্বের বিষফোড়া ইসরায়েলের স্বপ্নদ্রষ্টা থিওড্রো হ্যারজাল যাকে ইসরায়েল তাদের রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে তিনি সাংবাদিক ছিলেন। তার সংবাদপত্রের কলাম পড়ে খোদ খলিফা আব্দুল হামিদের ঘরেও খেলাফত বিরোধী লোক তৈরি হয়েছিল।
আসলে পাওয়ার অফ মিডিয়া নিয়ে বলতে গেলে বলে শেষ করা যাবে না। আর এটাকে অস্বীকার করা হবে দিনের বেলা সূর্যকে অস্বীকার করার মতো। আমাদের সকলের শ্রদ্ধেয় হাফেজি হুজুরের মানিক মিয়া এভিনিউর জনসমাবেশে কোন মিডিয়ার প্রচার না করার পরে উনি বলেছিলেন আমাদের কিছু মিডিয়াও দরকার। উনি বুঝতে পারলেও আমাদের শুরুটা হয়েছে অনেক দেরিতে, যদিও লেটার ইজ বেটার দ্যেন নেভার। ইনসাফ এই দিকে দেশের ইসলামী ঘরানার প্রথম পত্রিকা হিসেবে পথপ্রদর্শক হয়েছে। তার ধারাবাহিকতায় এখন আরও অনেকগুলো পত্রিকা যাত্রা শুরু করেছে। যদিও সবগুলোর আরও বহু মান উন্নয়নের দিক রয়েছে। কিন্তু যেহেতু শুরু হয়েছে ইনশাআল্লাহ আজ না হয় কাল পূর্ণতা পাবেই।
আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো যেগুলো রয়েছে সেগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা করা। যাতে আমাদের মিডিয়াগুলো নক্ষত্রের পতনের মতো না হয়। সকলের নিজ নিজ অবস্থান থেকে আমাদের সকল মিডিয়াগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা করা অতি জরুরি নিজেদের অস্তিত্বের লড়াইয়ের জন্যই।
হাটি হাটি পা পা করে ইনসাফ আজ ৬ষ্ঠ বছর থেকে ৭ম বছরে পর্দপন করেছে। ইনসাফের জন্য দোয়া এবং শুভকামনা। সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে ইনসাফের সাথে সংবাদ প্রচারেে ধারাবাহিকতা বজায় থাকুক।
বাংলাদেশ ৯০ ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত একটি দেশ। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের রাষ্ট্রাচারে ইসলাম ও মুসলিম স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আগ্রহবোধের কেবল ঘাটতিই নয়, বরং বৈরি আচরণও কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যায়। শিক্ষা, সংস্কৃতির পাশাপাশি আমাদের মূল ধারার মিডিয়া জগতেও এই ধারা প্রবলভাবে বিদ্যমান। অথচ বিশ্বের কোন দেশেই সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের নীতি-দর্শন ও ধর্মীয় মূল্যবোধ নিয়ে এমন অবহেলা ও বৈরিতার নজির নেই।
এমন শত প্রতিকূলতার মধ্যেও বাংলাদেশের আলেম সমাজ সাধারণ মুসলমানদের সহযোগিতা নিয়ে স্ব উদ্যোগেই একমাত্র আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল (সা.)এর সন্তুষ্টির মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে নিয়ে ইসলাম ধর্মীয় প্রচার-প্রচারণা এবং মুসলিম স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন। কিন্তু মূল ধারার মিডিয়ার বৈরি মনোভাবের কারণে উলামায়ে কেরামের ভূমিকা, অবদান, কার্যক্রম ও নানান প্রশংসনীয় ভূমিকা সম্পর্কে জাতীয় পর্যায়ে সর্বসাধারণের জানার কোনই সুযোগ ছিল না। শত শত পত্রিকা, টিভি মিডিয়া থাকা সত্ত্বেও এসব গণমাধ্যম অঘোষিতভাবে আলেম-উলামা ও তৌহিদী মুসলমানদের জন্য অনেকটাই নিষিদ্ধের মতো আচরণ করে এসেছে।
বামপাড়ার ইসলামের প্রতি দৃশ্যমান বৈরি মনোভাবাপন্ন সেক্যুলারকূলের জনাবিশেক লোকের সমাগম হাস্যকরভাবে জাতীয় পত্রিকায় বড় হেডিং এ অহরহ প্রচারিত হতে দেখা গেলেও লক্ষাধিক লোকের বিশাল জমাতের তাফসীর মাহফিল, ইসলামী সম্মেলন অথবা তৌহিদী জনতা ও আলেমদের বড় আয়োজনের সমাবেশের নিউজ পত্রপত্রিকা ও টিভিতে স্থান পেতো না। কাদাচিৎ ছাপানো হলেও সেটা থাকতো ভেতরের ৭ বা ৮ নং পাতার এক কোণায় সিঙ্গেল কলামে। যে কারণে উলামা-মাশায়েখদের পক্ষে বড় বড় প্রোগ্রাম করেও কাঙ্খিত জনমত তৈরি করা ছিল বড়ই কঠিন কাজ।
২০১৪ সালে অনলাইন জগতে ‘ইনসাফ’ পত্রিকা পদার্পণ করেছে। আলহামদুলিল্লাহ, এরপর থেকে আস্তে আস্তে মিডিয়া জগতে আমাদের এই বিশাল ঘাটতি পুরণ হতে শুরু করল। ইনসাফের সেই উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে আমিও ছিলাম। ইনসাফ নিয়ে শীর্ষ উলামায়ে কেরাম সেদিন যে বিশাল আকাশ ছোঁয়া আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন, পরম করুণাময় আল্লাহর অশেষ শোকরিয়ায় ইনসাফ সেই প্রত্যাশা পুরণের দিকেই সুস্থির কদমে এগিয়ে চলেছে। এখন ইসলাম ও মুসলিম স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে শুধু নিউজই প্রচার হয় না। দেখা যায় গুরুত্বপূর্ণ প্রোগ্রামগুলোর লাইভ প্রচারণাও সম্ভব হচ্ছে। বিরূপ মনোভাব রাখা টিভি মিডিয়া আলেমদের না ডাকলেও জাতীয় ও ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে ইনসাফ লাইভ ভিডিও বক্তব্য, আলোচনা ও টকশো প্রচারের উদ্যোগ নিয়ে এই ঘাটতিটাও সুন্দরভাবে পুরণের উদ্যোগ নিয়েছে। ইনসাফের দেখানো পথে এখন আরো অনেককে এগিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে। এটা অত্যন্ত ইতিবাচক ও প্রশংসনীয়।
হাঁটি হাঁটি পা পা করে আজ ‘ইনসাফ’-এর বয়স ছয় বছর হয়ে গেছে। আলহামদুলিল্লাহ, এই ছয় বছরে ইনসাফের অর্জন অনেক কিছু, ইনসাফের সফলতা আশাব্যাঞ্জক। আমরা এখন জোর দিয়ে বলতে পারি, উলামা-মাশায়েখ ও তৌহিদী জনতার যে কোন প্রোগ্রাম, যে কোন আয়োজন ও সংবাদ অনায়াসেই জাতির কাছে পৌঁছানো পথ তৈরি করে দিয়েছে ইনসাফ। এই ইনসাফ পত্রিকা থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে অনলাইন জগতে আরো কয়েকটি নিউজ সাইট চালু হয়েছে। এমনকি, আমি নিজেই ‘উম্মাহ’ নামে যে অনলাইন পোর্টাল চালু করেছি, আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি, সেটাও ইনসাফ থেকে উদ্বুদ্ধ হয়েই করেছি। আমি মনে করি, এটা ইনসাফের সফলতা, ইনসাফের অবদান।
বাংলাদেশে ইসলামী ধারার সাংবাদিকতা ও সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্র তৈরিতে ‘ইনসাফ’-এর অবদান ও ভূমিকা পথনির্দেশক তুল্য। ইনসাফের জন্য এটা অনেক গৌরবের।
বর্ষপুর্তির এই শুভক্ষণে ইনসাফ সম্পাদক সাইয়্যেদ মাহফুজ খন্দকার ভাইকে প্রাণঢালা অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ধন্যবাদ জানাচ্ছি পেছন থেকে, আড়ালে থেকে যেসব গুণীজন ইনসাফকে এগিয়ে নিতে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন, তাঁদের সকলকে।
আর একটা বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়, ইনসাফ গতানুগতিক ধারার কোন পত্রিকা নয়। তারা অন্ততঃ যে কোন সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে বস্তুনিষ্ঠতা ও প্রচার উপযোগিতার মান নির্ণয়ের দায়বদ্ধতা গুরুত্ব দিয়েই বিবেচনা করে।
সবশেষে ইনসাফ পরিবারকে এবং পত্রিকাটির সকল পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। ইনসাফের উত্তরোত্তর সফলতা ও ব্যাপক প্রচার-প্রসার কামনা করি। আমি জোর আশাবাদি, ইনসাফ শুধু অনলাইন পোর্টালেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। একটা সময় আমরা দেখতে পাব, প্রিন্ট সংস্করণেও ‘দৈনিক ইনসাফ’ পত্রিকা দেশব্যাপী নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। নিয়মিত ইলেক্ট্রনিক প্রচারেও তারা আসবে। ইনসাফ টিভি চালু হবে। ইনসাফের পথধরে বাংলাদেশে ইসলামী মিডিয়ার ব্যাপক প্রসার এবং জোয়ার বইতে শুরু করবে। ইনসাফ পত্রিকা আগামীতে আরো সুদৃঢ় হোক, জাতি ও দেশ গঠনে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখুক এবং দায়িত্বশীল সাংবাদিকতায় নজির স্থাপন করুক; এই কামনা ও দোয়া করি। আল্লাহ হাফিজ।
বাংলাদেশের যে কয়টি অনলাইন ইসলামিক মিডিয়া আমার খুব প্রিয়, তন্মধ্যে ইনসাফ অন্যতম৷ দাজ্জালি ফিতনার এই যুগে অধিকাংশ সংবাদপত্র দাজ্জালের প্রতিনিধিত্ব করছে৷ এহেন দুর্যোগকালীন ইসলামের উপর টিকে থেকে ইসলামের পক্ষে এককভাবে মিডিয়াযুদ্ধে টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব বললে চলে৷ এহেন দুঃসময়ে কণ্টকাকীর্ণ পথ বেয়ে ইনসাফের সঙ্গে ইনসাফ-এর ছয় বছর পূর্ণ হওয়া সামান্য কথা নয়৷
আজকাল মিডিয়ার উপর আস্থা রাখা অত্যন্ত কঠিন৷ এমতাবস্থায় পাঠকের কাছে সততার সঙ্গে সত্যনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের কাজে যারা সদা ব্যস্ত তারা রীতিমতো অসম যুদ্ধের ময়দানে নিরস্ত্র দন্ডায়মান বলা চলে৷ বাংলাদেশের অনলাইন ইসলামী সংবাদপত্র হিসেবে ইনসাফের দায়িত্বশীলরা সেই সততা শতভাগ বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন মাশাআল্লাহ৷ এক্ষেত্রে ইনসাফের দায়িত্বশীলদের সাধুবাদ না দিয়ে পারা যায় না৷
লাখো পাঠকের মধ্যে আমিও একজন নগণ্য পাঠক হিসেবে ইনসাফের আগামী পথচলা সুগম নির্ঝঞ্ঝাট ও নিষ্কণ্ঠক হোক এই প্রত্যাশা করছি৷