বশির ইবনে জাফর |ভিপি, মাহসা ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া
দেশের প্রথম ইসলামী ঘরনার অন্যতম জনপ্রিয় অনলাইন পত্রিকা ইনসাফ অর্ধযুগ পেরিয়েছে। তাদের ৭ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে পত্রিকাটির সকল সাংবাদিক, কলামিস্ট, সম্পাদক এবং প্রকাশক সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। পাশাপাশি ইনসাফের পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীদেরও বর্ষপূর্তির শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
ইনসাফ বাংলাদেশের সর্বশ্রেণির পাঠকের কাছে অত্যন্ত প্রিয় একটি পত্রিকা। সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে সবসময় বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে চেষ্টা করে। একই সঙ্গে সত্য তুলে ধরতে আপসহীন ভূমিকা পালন করছে আসছে ইনসাফ।
ইসলামী চেতনা ও সংস্কৃতির প্রসার, এবং দল-মত নির্বিশেষে সংবাদ পরিবেশনে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখায় ইতোমধ্যে সর্বমহলে ব্যপক প্রশংসা অর্জন করেছে ইনসাফ। প্রতিষ্ঠার পর অতি অল্প সময়েই জনপ্রিয়তা অর্জন এবং অর্ধযুগ পেরিয়েও সেই জনপ্রিয়তা বজায়ের মূল কারণ সংবাদ পরিবেশনে পত্রিকাটির আপসহীন অবস্থান ধরে রাখা।
আগামী দিনেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে, এটাই আমার বিশ্বাস। আমি ইনসাফের সাফল্য কামনা করি।
মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব স্থবির হয়ে পড়েছে, মানুষ হয়ে পড়েছে আতঙ্কগ্রস্ত। এই দুঃসময়ে সাংবাদিকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, যদি সাংবাদিকরা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করতেন তাহলে মানুষ সচেতন হতে পারতো না, যার ফলশ্রুতিতে আরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটতো। সেই সাথে বিশ্বজুড়ে দেখা দিত চরম অরাজকতা।
ঠিক এমন সময় অর্ধযুগ পার করে সপ্তম বর্ষে পদার্পণ করেছে বাংলাদেশের ইসলামী ঘরানার সর্বপ্রথম ও জনপ্রিয় অনলাইন নিউজপোর্টাল ইনসাফ। প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করছেন এক ঝাঁক উদ্যমী তরুণ, যারা সবকিছু উপেক্ষা করে মানুষের কাছে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে চব্বিশ ঘণ্টা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
এতো সংবাদ মাধ্যমের ভিড়ে ইনসাফ তার মান বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। ‘আস্থার প্রতীক’ ইনসাফের এই স্লোগান তাই সার্থক হয়েছে বলা যায়।
বর্তমান সমাজে ইনসাফের অভাব। যার দরুন অন্যায়-অবিচার গ্রাস করে ফেলছে সবাইকে, ছড়িয়ে পড়েছে ফিতনা-ফ্যাসাদ। অত্যাচারী গোষ্ঠীর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে গণমানুষের মাধ্যম ‘গণমাধ্যম’। এমন সময় মজলুমের মুখপত্র হিসেবে আশার আলো দেখাচ্ছে ইনসাফ।
কোভিড১৯-এর কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এবার অনলাইনে অনাড়ম্বরভাবেই ষষ্ঠ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করছে ইনসাফ। এই আনন্দঘন মুহূর্তে ইনসাফ পরিবারকে জানাই আন্তরিক মোবারকবাদ।
মুফতী হাবিবুর রহমান মিছবাহ [কুয়াকাটা] |লেখক, আলোচক, সাংবাদিক ও সমাজকর্মী (পরিচালক, মারকাযুত তাকওয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার ঢাকা)
ইনসাফ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ইসলামিক অঙ্গনে সর্বপ্রথম নিউজ পোর্টাল। সবার কাছে পরিচিত ও জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল ইনসাফ টোয়েন্টিফোর ডটকমক। পোর্টালের সম্পাদকও আমার প্রিয় একজন মানুষ, আমার বন্ধু সাংবাদিক মাহফুজ খন্দকার ।
ছয় বছরে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনায় অসামান্য অবদান রেখেছেন তারা। ইনসাফ টোয়েন্টিফোরের পর ইসলামিক অঙ্গনে অনেকগুলো নিউজ পোর্টাল এসেছে। তবে পথ দেখিয়েছে ইনসাফই।
সংবাদের পাশাপাশি ইনসাফ-শো নামে অনলাইন টকশোতেও বেশ সুনাম কুড়িয়েছে তারা। বেশ আলোচিত ও আলোকিত একটি অনুষ্ঠান ইনসাফ-শো। ভিডিও সংবাদ পরিবেশনে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে ইনসাফ টোয়েন্টিফোর। মাদরাসাছাত্র কিংবা আলেম সংবাদপাঠক হতে পারেন সেটারও প্রথম স্বাক্ষী সম্ভবত ইনসাফই। রয়েছে প্রিন্ট ভার্সন। সব মিলিয়ে একটি কমপ্লিট প্যাকেজ বলবো ইনসাফকে।
সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক, কলাকুশলী ও ফটোগ্রাফার— সবাইকে নিয়ে একটি টিম করতে সক্ষম হয়েছে ইনসাফ সম্পাদক মাহফুজ খন্দকার। এই ধারা অব্যহত থাকলে পোর্টাল বহুদূর এগিযে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।
পাবলিক ভয়েস-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসেছিলেন মাহফুজ ভাই। সংবাদ জগৎ থেকে তিনি যে হারিয়ে যেতে আসেননি তা সেদিন তার জ্ঞানগর্ভ আলোচনা থেকেই বুঝেছি। বন্ধুত্বটা মূলত আরও আগে থেকেই। দিনদিন বন্ধুত্বের জায়গাটা আরও মজবুত হচ্ছে।
প্রায়ই আমরা মোবাইলে আলাপ করি— আমিও একটি নিউজ পোর্টালের সম্পাদক। তাই বলে আমরাদের মাঝে প্রতিদ্বন্দিতা নেই, আছে সহযোগিতা। আমরা একে অপরের সহযোগী হতে চাই। সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি আমরা।
ষষ্ঠ বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে ইনাফের প্রতি শুভকামনা থাকবে— শুধু ৬ বছর নয়, হাজার বছর নিষ্ঠার সঙ্গে সংবাদ জগতে নেতৃত্ব দিয়ে যাক ইনসাফ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
সম্পাদকসহ সংশ্লিষ্ট সকল কলাকুশলীদের প্রতি আমার আন্তরিক ভালবাসা অভিনন্দন ও শুভকামনা।
জনগণের তথ্য জানার অধিকারের পাশাপাশি সত্য জানারও অধিকার রয়েছে। অথচ নানাবিধ কারনে গণমাধ্যম থেকে জণগনের এই অধিকার প্রাপ্তি বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে।
যখনই ইনসাফ কোন সংবাদ পরিবেশন করে, তখন সেই সংবাদের বস্তুনিষ্টতা নিয়ে আমার কোন সন্দেহ থাকে না। কারন আমি বিশ্বাস করি, কোনরকম রাজনৈতিক কিংবা ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে থেকে আলেমদের এই মিডিয়া কখনও মিথ্যা সংবাদ প্রচার করতে পারে না। তাই অল্প সময়ের মধ্যে ইনসাফ মানুষের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে।
আমাদের সবার উচিত সত্য ও ন্যায়ভিত্তিক মিডিয়াকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা। প্রত্যাশা করছি, ইনসাফ কখনও সত্য পথ থেকে বিচ্যুত হবে না। আল্লাহ এই সৎকাজকে সহজ করে দিন।
দেশের ইসলামী ধারার জনপ্রিয় ও নির্ভরযোগ্য প্রথম অনলাইন পত্রিকা ইনসাফ ন্যায় ও নিষ্ঠার সাথে অর্ধযুগ অতিক্রম করলো।
পত্রিকার মাধ্যমে ইনসাফ পরিবার দেশ, জাতি এবং বিশ্ববাসীর সঠিক চিত্র তুলে ধরতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের এই ত্যাগের বিনিময়ে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম উপকৃত হবে, ইন শা আল্লাহ।
হলুদ সাংবাদিকতার ফলে মানুষ যখন সুখ, পরিবার এমনকি দেশ হারাচ্ছে। যুদ্ধের পৃথিবী যখন হারাচ্ছে শান্তি,সমৃদ্ধি, মানবিকতা, মনুষ্যত্ব। তখন সত্যিকারের মিডিয়া-শক্তি মিথ্যা প্রতিরোধে অসম্ভব ভূমিকা রাখতে পারে। ইনসাফ হয়ে উঠুক তেমনই এক সুস্থ মিডিয়া-শক্তি।
ইনসাফ এর অর্ধযুগ পূর্তি উপলক্ষে আমি কাজী আমীনুল ইসলাম ও কিব বাংলার পক্ষ থেকে জানাই আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা। সেই সাথে আমাদের প্রত্যাশা ‘ইনসাফ’ আগামীতেও নির্ভরতার স্বাক্ষর রাখবে।
বাংলাদেশের ইসলামী ধারার প্রথম জনপ্রিয় অনলাইন পত্রিকা ‘ইনসাফ’ এর অর্ধযুগ পূর্তি উপলক্ষে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন সবার খবর পরিবার।
সবার খবর পরিবারের পক্ষ থেকে পাক্ষিক সবার খবর ও সবার খবর টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর সম্পাদক মাওলানা আবদুল গাফফার শুভেচ্ছা বার্তায় বলেন, অর্ধযুগ আগে দেশের এক ক্রান্তিলগ্নে ‘ইনসাফ’ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর আগে ইসলামী ধারায় অনলাইনে কোনো পত্রিকা ছিল না। ইনসাফই প্রথম যে, ইসলামী ধারায় পত্রিকা আকারে আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ করেছে। আত্মপ্রকাশের পর পরই ইনসাফ সম্পাদক সাইয়েদ মাহফুজ খন্দকার- এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় পত্রিকাটি আজ অর্ধযুগ পেরিয়ে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে গিয়েছে। এ সময়ে উপদেষ্টা সম্পাদক হিসেবে তিনজন দায়িত্ব পালন করেন। প্রথমে মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, এরপর মাওলানা মুসা বিন ইজহার চৌধুরী। এবং সর্বশেষ মাওলানা সালাউদ্দীন জাহাঙ্গীর। আমি এই তিন উপদেষ্টা সম্পাদকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। এই অর্ধযুগে ইনসাফ আমাদের যে আশার আলো দেখিয়েছে, তা প্রশংসার দাবি রাখে। এক যুগ পেরিয়ে ইনসাফ এই জাতিকে সঠিক পথ দেখাতে পারবে বলে আশা রাখছি।
সবিশেষ ইনসাফ পরিবারের প্রতি অভিনন্দন জানিয়ে আগামী দিনগুলোতে প্রতিজনকে দ্বীনের যোদ্ধা হিসেবে কবুল করার দুআ করছি।
গণমাধ্যমকে বলা হয় রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। তথ্য-প্রযুক্তির সহজলভ্যতার এই সময়ে এসে সাংবাদিকতায় একটি নীরব বিপ্লব ঘটে গেছে। ফলে বলা চলে, এখন এই স্তম্ভ আরও শক্তপোক্ত। ছাপা পত্রিকার পাশাপাশি, টেলিভিশনগুলো দিনরাত সচিত্র খবর প্রচার করছে, অনলাইনগুলো মুহূর্তে মুহূর্তে খবরের আপডেট দিচ্ছে। কিন্তু এই খবর জনগণের উপকার করছে না অপকার- সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
কারণ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতা বড় জিনিস। সমালোচকদের মতে, সেটা নাকি এই মুহূর্তে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে অনেকাংশেই অনুপস্থিত। এটা অবশ্য অনেক বড় বিতর্কের বিষয়। তার চেয়ে বরং সংবাদ মাধ্যমের চরিত্র, ধ্যান-ধারণা নিয়ে কিছুটা আলোচনা করা যেতে পারে।
বাংলাদেশের কথাই ধরুন। আমাদের দেশের প্রতিষ্ঠিত মিডিয়া হাউজগুলো অনেকটাই কর্পোরেট। তারা সংবাদ প্রচারের প্রতিযোগিতার নামে দায়িত্বশীল সংবাদ প্রচার করছে, নাকি মানুষের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি করছে- সেটা বুঝা খুব কঠিন কিছু নয়। আগেভাগে খবর প্রচারের প্রতিযোগিতায় আমরা প্রায়ই তাদের বেহাল দশা দেখতে পাই। অনেকে সময় অবান্তর, অসত্য ও গুজবও তারা ব্রেকিংয়ের নামে প্রচার করে থাকে। জীবিত মানুষকে মৃত বানিয়ে খবর প্রচারের মতো অর্বাচীন কাজও তাদের থেকে প্রকাশ পেয়েছে। অনেককে আবার খবর প্রত্যাহার করেও নিতে দেখা যায়।
একটি উদাহরণ দেই। ‘আলু’ একটি সহজলভ্য সবজি। এই আলু দিয়ে কোনো গৃহিনী ভর্তা বানান, কেউ ভাজি, ফাস্টফুডের দোকানে চটপটি, চাইনিজে ফ্রেঞ্চফ্রাই, কোম্পানীগুলো চিপস থেকে শুরু করে অনেকে এর গয়রহ ব্যবহার করেন। আলু আসলে কোন কাজে ব্যবহার হচ্ছে সে দায় আলুর নয়, দায় ব্যবহারকারীর। আমাদের দেশের মিডিয়া হাউজগুলোর দশা অনেকটা এমন। খবর প্রচার করে তারা জনগণকে সতর্ক করছে না ভীতি ছড়াচ্ছে, জনমত গড়ছে না কারো পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে, দেশের উপকার করছে না মালিকপক্ষের স্বার্থ উদ্ধার করছে- সেটা বুঝার জন্য অনেক বেশি জ্ঞান থাকার দরকার নেই।
অথচ ডিজিটাল যুগে আলোড়ন তৈরি করার মতো অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সুযোগ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেটার দেখা নেই। কোনো এক অজানা কারণে মিডিয়ার অভূতপূর্ব ক্ষমতা যেনো পানসে হয়ে গেছে। সংবাদ প্রকাশের কৌশলে কোনো নতুনত্ব নেই। চমকে দেওয়ার মতো অনুষ্ঠান নেই। পড়ে তৃপ্ত হওয়ার মতো রিপোর্ট নেই। খবরের পেছনের খবর প্রকাশ হয় না। খবরে নেই কোনো মানবিকতার ছোঁয়া, রহস্য, রোমাঞ্চ। সব চলছে গৎ বাঁধা।
মানছি, মিডিয়া হাউসগুলো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। অতএব এটা মুনাফা অর্জনের ওপর নির্ভরশীল। মিডিয়ায় যিনি টাকা ঢেলেছেন, তিনি তার বিনিয়োগ যেমন তুলে আনতে চাইবেন, তেমনি বিনিয়োগ থেকে মুনাফাও কামাতে চাইবেন। যদি সরাসরি মিডিয়া থেকে তার মুনাফা না আসে তাহলে মিডিয়া তাকে যে বিশেষ ক্ষমতা দেয় তা ব্যবহার করে তার অন্য ব্যবসা থেকে তিনি ফায়দা আদায় করবেন, এটাই স্বাভাবিক। আধুনিক বিপনন কৌশলে বাজার ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীলতার এটা অন্যতম দিক।
অতএব খবরে একটু তেল, দলবাজি, আদর্শের প্রচার না থাকলে চলে না। আর হ্যাঁ, বিজ্ঞাপনের জন্য মিডিয়াকে বড় দেশী কোম্পানি বা বহুজাতিক কোম্পানির ওপর নির্ভর করতে হয়। সরকারের আনুকূল্য পেতে তদবির করতে হয়। এই নির্ভরশীলতা ছাড়া টেলিভিশন, পত্রিকা, রেডিও স্টেশন ও অনলাইন চালানো অসম্ভব। কোনো মিডিয়া টিকে থাকতে চাইলে টাকা আয়ের উৎসগুলোর বিরুদ্ধে তারা দাঁড়াতে পারে না।
কিন্তু গণমাধ্যম যখন নিজেদের ওপর নিজেদের সেন্সরশিপ প্রয়োগ করে গোলটা বাঁধে তখনই। অর্থাৎ কোন খবর ছাপা হবে, কোন লেখককে জায়গা দেওয়া হবে কাকে হবে না, কী ধরণের সম্পাদকীয় নীতি গ্রহণ করা হবে ইত্যাদির মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীনদের জন্য বিপজ্জনক খবর, বিশ্লেষণ, উপ সম্পাদকীয় ইত্যাদি পরিহার করা হয়। নিজেদের স্বার্থের খবরকে প্রধান্য দেওয়া হয় তখন আর সেটা রাষ্ট্রের স্তম্ভ বলে স্বীকৃতি পায় না। তখন মিডিয়া পরিণত হয় স্বার্থের অস্ত্রে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
কিন্তু হালের সাংবাদিকতায় আমরা অহরহ সেই চিত্রই দেখতে পাচ্ছি। এটা শুধু আমাদের দেশের ক্ষেত্রে নয়, সব দেশেই। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে জুথিড মিলারের কথা? না থাকলে একটু মনে করিয়ে দেই।
জুথিড মিলার নিউইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক ছিলেন। তিনি বিস্তারিত প্রমাণসহ (!) প্রকাশ করে দিয়েছিলেন ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের অস্ত্রভাণ্ডার গড়ে তোলার কথা। সেকি ফিরিস্তি! যেন তিনি নিজ চোখে দেখে এসে রিপোর্ট করেছেন। এর বিনিময়ে পুলিৎজারসহ অনেক কিছু তার কপালে জুটেছিল। পরে মার্কিন বাহিনী বাগদাদে উপস্থিত হয়ে সাদ্দামের গোপন সেই অস্ত্রভাণ্ডারের খোঁজে চারদিক লণ্ডভণ্ড করেও সে রকম কোনো কিছুর সন্ধান পায়নি। সেই ফাঁকে জুথিড হাওয়া। পরে অবশ্য তার স্বদেশি আরেক অনুসন্ধানী সাংবাদিক সেইমুর হার্শ পুরো ঘটনার পেছনে সিআইএর খেলার ছক উন্মোচন করেছিলেন, ততদিনে জল অনেকটা গড়িয়ে গেছে। ইরাক রীতিমতো ধ্বংসস্তুপে পরিণত। সেই ইরাক আজও দাঁড়াতে পারেনি। মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে গোটা ইরাক। কিন্তু ইরাক হামলার যৌক্তিকতার বিষয়ে জুথিডে দেওয়া তথ্যমতে পশ্চিমা গণমাধ্যমে যেভাবে ভরসা করেছিল, ঠিক সেভাবে ভরসা না করলেও বিশাল জনগোষ্ঠী এখনও গণমাধ্যমকে সেভাবে বিশ্বাস করে। আর বারবার ধোঁকা খায়।
সাম্প্রতিক সময়ের আরেকটি প্রসঙ্গ মনে করিয়ে দেই। উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন প্রায় ২০ দিনের মতো লোকচক্ষুর আড়ালে ছিলেন। কিন্তু এই কুড়ি দিন ধরে পশ্চিমের সংবাদ মাধ্যমের সংবাদ বিশ্লেষকেরা বিশ্লেষণে মেতে ছিলেন দেশটির ভবিষ্যৎ নিয়ে। কেউ বলেছেন উত্তর কোরিয়ার স্বৈরাচারী শাসনের জাঁতাকল থেকে মুক্ত হওয়া এটাই সুবর্ণ সুযোগ। কেউ বলছেন কিম পরিবারের যে কেউ ক্ষমতার হাল ধরুন না কেন, তার জন্য নতুন পরিস্থিতিতে দেশ শাসন করা সহজ হবে না। কতিপয় বিশ্লেষক আরও এক কাঠি এগিয়ে গিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্বের আভাস খুঁজেছেন। বলেছেন চাচা-ভাতিজির লড়াইয়ে কে জেতে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
অর্থাৎ পশ্চিমের সাংবাদিকরা ধরেই নিয়েছিলেন কিম জং-উন মারা গেছেন কিংবা মারা না গেলেও এতটাই গুরুতর অসুস্থ যে, তার পক্ষে দেশ শাসন করা তো দূরের কথা, দুই পায়ে ভর করে দাঁড়ানোরই সুযোগ নেই। কিন্তু তিনি যখন সুস্থ অবস্থায় ফিরে এলেন, সংবাদকর্মীরা তখন হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। তবে সেটা ছিলো ক্ষণিকের নীরবতা।
এই যে দু’টো দৃশ্যপটের কথা বললাম, তা আবারও দেখিয়ে দিচ্ছে পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমের প্ররোচনায় কত সহজে আমরা প্রতারিত হই। শুধু পশ্চিমা নয়, আমাদের দেশেও আমরা প্রতারিত হই। সাম্প্রতিক বিশ্বে বারবার এই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকলেও এর থেকে কোনো শিক্ষা আমরা পাইনি এবং পশ্চিমের সংবাদ মাধ্যমকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সংবাদের সবচেয়ে বড় উৎস হিসেবে ধরে নিয়ে ব্যস্ত থেকেছি এবং থাকছি। তারা যা দেখাচ্ছে, দেখছি। যা পড়তে দিচ্ছে পড়ছি। যা পড়তে দিচ্ছে না, তা ধেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছি, অনুসন্ধানের প্রয়োজন ভেতরে জাগরুক হচ্ছে না।
এখানেই সাংবাদিকতার নৈতিকতা জড়িত। কোন সংবাদ কিভাবে পরিবেশন করবো, কতটুকু প্রকাশ করবো- সেটার সীমারেখা থাকতে হবে। সেটা কিতাবে থাকলেও বাস্তবে নেই। কিম জং-উন ফিরে এসেছেন। আর সাদ্দাম? সাদ্দামের বিষয়ে বিশ্ববাসী প্রতারিত হয়েছে। বিনা ব্যাখ্যায় পশ্চিমাদের সংবাদ বিশ্বাস করে একটি দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে। মানবিকতা, সতত্য, কল্যাণকামীতা, শান্তি প্রচেষ্টা পায়ে দলে আরও একবার আমরা ঠকে গিয়েছি সাংবাদিকতার নৈতিকতা ও দায়বদ্ধতা সামনে।
পশ্চিমের সংবাদমাধ্যম যে সবসময় ধোয়া তুলসীপাতা, তা একেবারেই নয়। বিশেষ করে বিতর্কিত অনেক প্রশ্নেই, এমনকি গোপনে সিআইএর হয়ে কাজ করতেও পিছপা হয় না তারা। আমরা জানি দূর বিদেশের সংবেদনশীল কোনো সংবাদের ক্ষেত্রে সত্য-মিথ্যা যাচাই করার সামর্থ্য আমাদের নেই। ফলে পশ্চিমারা যা আমাদের খেতে দিচ্ছে, তাই আমরা খেয়ে নিচ্ছি।
যেহেতু জবাবদিহিতামূলক সাংবাদিকতা বলতে যা বোঝায় তা আসলে কোথাও শতভাগ প্রতিষ্ঠিত করা যায়নি। তাই এই একচ্ছত্র নির্ভরশীলতা থেকে কীভাবে বের হয়ে আসা যায়, তা নিয়ে মনে হয় চিন্তাভাবনা করা দরকার। সেটা দেশ-বিদেশের সব ক্ষেত্রেই হতে পারে।
আমাদের দেশীয় প্রেক্ষাপটে সাংবাদিকতার নৈতিক গুণাগুণ, বিচার বিশ্লেষণের ক্ষমতা, নিরপেক্ষতা ইত্যাদি নিয়ে কথা বলার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। তার পরও নতুন নতুন মিডিয়া আসছে, কেউ কেউ মিডিয়া গড়ার স্বপ্ন দেখছেন। এসব স্বপ্নের এক বাস্তবায়ন ‘ইনসাফ’।
২০১৪ সালের ৫ মে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয় পত্রিকাটির। বয়স হিসেবে অর্ধযুগ পেরিয়েছে তারা। অনেক সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ছয় বছর টিকে থাকা বেশ কঠিন। প্রয়োজনীয় জনবল, সাপোর্ট, বাজেট ও পরিকল্পনার হয়তো অনেকে কিছু তারা করতে পারেনি। কিন্তু সীমিত পরিসরে হলেও সত্য উচ্চকিত করার কাজটি কিন্তু অনেকটাই করেছে বুক ফুলিয়ে। তাদের পথচলার এই সংগ্রাম চলতে থাকুক, ইনসাফ তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাক; প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই মাসে এটাই আমার আন্তরিক চাওয়া।
অর্ধযুগ পেরিয়ে সফলতার পথে এগিয়ে চলছে অনলাইন পত্রিকা ‘ইনসাফ টোয়েন্টিফোর ডটকম’। এই কঠিন সময়ে একটি সত্য ধারার গণমাধ্যমকে কতগুলো বাধা অতিক্রম করে পথ চলতে হয়, টিকে থাকতে হয়। এটা কেবল তারাই বুঝেন, যারা কোনো-না-কোনোভাবে গণমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত।
সকল বাধা বিপত্তি পেরিয়ে আর আদর্শের পথে অবিচল থেকে এগিয়ে যেতে পারা নিঃসন্দেহে একটি কঠিন বিষয় এবং সময়ের কষ্টিপাথরে লেখা সাফল্যের গল্প। এ গল্প ইতিমধ্যে ‘ইনসাফ’ রচনা করতে পেরেছে। এজন্য ‘ইনসাফ’ পরিবারকে আমার পক্ষ থেকে অনেক অনেক মোবারকবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
তবে একটি কথা না বললেই নয়, সফলতার পথে যখন আপনি এগিয়ে যাবেন, আস্থা -দায়িত্ব ও পাঠকদের প্রতি আন্তরিকতার জায়গাটি, দায়বদ্ধতার জায়গাটি আরও শক্তিশালী হবে। তাই ‘ইনসাফ’ স্বপ্নের পথে, সাফল্যের পথে এগিয়ে যাবে সততার সাথে এবং দায়বদ্ধতার সাথে। আমরা ইনসাফ এর সকল কাজের শুভাকাঙ্ক্ষী। ইনসাফ পরিবারের প্রতি অনেক অনেক কল্যাণ ও মোবারকবাদ।
মাওলানা শহীদুল ইসলাম ফারুকী | পরিচালক: শায়খ আবুল হাসান আলী নদভী ইসলামিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট, চেয়ারম্যান: ফিলিস্তিন সলিডারিটি কাউন্সিল, ও রিসার্চ ফেলো: ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া।
দেশের প্রথম ও সর্বাধিক জনপ্রিয় ইসলামী ঘরানার অনলাইন পত্রিকা ইনসাফ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী চলমান মিডিয়া আগ্রাসন মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। হাজারো বাতিলপন্থী মিডিয়ার ভিড়ে ইনসাফ দীর্ঘ অর্ধযুগ ইসলামের পক্ষে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। ইনসাফের অর্ধযুগ পূর্তির এই মাহেন্দ্র ক্ষণে আমি তার দক্ষ ও নিষ্ঠাবান সম্পাদক সাইয়েদ মাহফুজ খন্দকারসহ পোর্টালের লেখক, সাংবাদিক, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীদেরকে অর্ধযুগ পূর্তির শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
আমরা জানি বর্তমানে মিডিয়া কিভাবে আমাদের জীবনে স্থান করে নিয়েছে। মিডিয়ার হামলা আর আগ্রাসন থেকে আজ কেউই নিরাপদ নই। সবার ঘরে ঘরে মিডিয়া ঢুকে পড়েছে। প্রতিটি বাড়িতেই টিভি নামের আধুনিক আবিষ্কার জায়গা করে নিয়েছে। শুধু বাড়িতে কেন, প্রতিটি দোকানে দেখা যাচ্ছে টিভি। শহর বলেন আর গ্রাম বলেন- সর্বত্র আজ আধুনিক মিডিয়া থাবা বিস্তার করেছে। মোবাইল-কম্পিউটার এসে মিডিয়ার পালে আরও হাওয়া দিয়েছে। সবার ঘরে ঘরে ঢোকার পর মিডিয়া এখন ঢুকে পড়েছে সবার পকেটে পকেটে। পৌঁছে গেছে শিক্ষিত-অশিক্ষিতের হাতে হাতে। এসব মিডিয়ার কোনোটিই ইসলামের পক্ষের না।
এই পরিস্থিতিতে ইনসাফ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর পক্ষে আশার আলো প্রজ্বলিত করেছে।
ইনসাফ এগিয়ে যাক দুর্দমনীয় গতিতে! তাদের কাজগুলো হোক একমাত্র দ্বীনের স্বার্থে—এই কামনা করি।