Home Blog Page 4616

সম্পাদকের কথা

0

সাইয়েদ মাহফুজ খন্দকার | সম্পাদক ও প্রকাশক : ইনসাফ


আলহামদু লিল্লাহ। ছুম্মা আলহামদু লিল্লাহ। মহান আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে বাংলাদেশের প্রথম ইসলামী ঘরানার অনলাইন পত্রিকা ইনসাফ ষষ্ঠবর্ষ অর্থাৎ অর্ধযুগ পূর্ণ করে সপ্তম বর্ষে পদার্পণ করেছে।

পাঠকদের ভালোবাসা আর সহযোগিতায় ইনসাফের আজ এতদূর আসা। দীর্ঘ এ পথচলাতে পাশে থাকায় ইনসাফ পরিবারের পক্ষ থেকে আপনাদের জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ। আপনাদের ভালোবাসা এবং আস্থার কারণেই ইনসাফ আজ ‘আস্থার প্রতীক’ হয়ে উঠেছে।

প্রিয় পাঠক, গত ৫ মে আপনাদের প্রিয় ইনসাফ ষষ্ঠ বর্ষ পূর্ণ করে সপ্তম বর্ষে পদার্পণ করেছে। অনিবার্য কারণে শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন আমরা ৫ মে’র পরিবর্তে মে মাসের যেকোনো একটি তারিখে করে থাকি। এবারও বড় আয়োজনে অর্ধযুগ পূর্তি অনুষ্ঠানের ইচ্ছে ও পরিকল্পনা ছিলো। কিন্তু দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে তা আর সম্ভব হয়নি। তাই ছোট পরিসরে এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন অনলাইনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

শত শত বছর ধরে স্বীয় অধিকারের প্রত্যাশায় লড়ে যাচ্ছে মুক্তিকামী জনতা। যে ধারা অব্যাহত ছিলো ১৭৫৭ থেকে ১৯৪৭ হয়ে ১৯৭১-এ। কোটি হৃদয়ের সেই আকাঙ্ক্ষাকে পূর্ণ করার চূড়ান্ত সংকল্প এবং ২০১৩ সালের ৫ মে’র চেতনাকে ধারণ করে তার ঠিক এক বছর পর ২০১৪ সালের ৫ মে ‘ইনসাফ’ যাত্রা শুরু করে।

২০১৩ সালের ৫ মে ও তার পরবর্তী ঘটনা প্রবাহে দেশের ইসলামপন্থী দেশপ্রেমিক জনতার মধ্যে নতুন বোধোদয়ের সৃষ্টি হয়। সেই বোধোদয়ের ফসলই আজকের ইনসাফ।

২০১৪ সালে ইনসাফ যখন গণমাধ্যম জগতে আত্মপ্রকাশ করে; তখন কার্যত এ দেশে হলুদ সাংবাদিকতার রাজত্ব চলছিলো। শাহবাগে কথিত জাগরণের প্রতিক্রিয়ায় শাপলা চত্বরে ইসলাম ও দেশপ্রেমী জনতার উত্থান এবং পরবর্তীতে তাদের উৎখাতে সাঁড়াশি অভিযানের ‘সাফল্য’ দেশের ইসলাম বিরোধী চক্রকে অভাবনীয় শক্তিশালী করে তুলে।

ইসলাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয়কে কটূক্তি বা হেয় প্রতিপন্ন করাকে স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে নেয়া হতো গণমাধ্যমগুলোতেও। নামে গণমাধ্যম হলেও কার্যত গণবিরোধীমাধ্যম এর মতোই ছিলো তাদের কার্যক্রম।

আর এসব প্রতিকূলতাই ইনসাফের জন্ম ও বেড়ে উঠার মূল প্রেরণা ছিলো বললে ভুল হবেনা।

প্রতিকূলতাকে যে প্রতিষ্ঠান প্রেরণা হিসেবে নেয়, স্বভাবতই সেই প্রতিষ্ঠানের পথ চলা সহজ হবার নয়। সমস্যা বহুমুখী হলেও সমাধানের রাস্তা ছিলো একেবারেই অজানা। ইনসাফ যাদের নিয়ে কাজ শুরু করে, তারা ইতিপূর্বে এ জগতকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেননি। এছাড়াও গণমাধ্যম জগতের নানা বিষয়ে ছিলো তাদের প্রচণ্ড আপত্তি। তাই সহযোগিতা পাওয়া তো দূরের কথা, সহমর্মিতা আশা করাও বেশ কঠিন ছিলো।

এছাড়াও ইনসাফের পক্ষে দেশ ও বিশ্বে চলমান গণমাধ্যমের ধারাগুলোর আদর্শের মধ্যে কোনোটাকেই পূর্ণ অনুসরণ সম্ভব হচ্ছিলো না। বরং ইনসাফকে বেশির ভাগ সময় পথ চলতে হতো তথাকথিত মূল ধারার গণমাধ্যমের পূর্ণ বিপরীত অবস্থানে।

এজন্য ইনসাফকে কঠিন প্রতিকূলতায় যেমন কদম বাড়াতে হয়েছে; সাথে ইনসাফের মাধ্যমেই তৈরী হয়েছে নতুন এক আদর্শিক ধারার। যাকে বলা যায় গণমানুষের ধারা, মাজলুমের পক্ষের ধারা, ইনসাফ, সাম্য ও মানবিকতার ধারা। এই ধারায় হলুদ সাংবাদিকতার জোরে নির্দোষকে সন্ত্রাসী বানিয়ে দেওয়া হয়না। এ ধারায় সত্যকে সত্য হিসেবেই উপস্থাপন করা হয়, মিথ্যে এবং অন্যায়কে জনতার সামনে তুলে ধরা হয়। এধারায় সেক্যুলারিজমের নামে সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মবিশ্বাসের সাথে তিরস্কার করা যেমন হয়না, তেমনি সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় আবেগ-অনুভূতিকেও পূর্ণ সম্মানের সাথে দেখা হয়। এধারায় কোনও সংঘ বা গোষ্ঠী কাওকে সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা করে দিলেই তাকে মানদন্ড হিসেবে গ্রহণ করা হয়না, আবার ধর্মের নামে চালিয়ে দেওয়া অন্যায়কেও সমর্থন করেনা। এই ধারা ইনসাফের কথা বলে। ন্যায়ের কথা বলে। মজলুমের পক্ষে বলে।

ইনসাফ দেশের গণমাধ্যম জগতে দুইভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে। আলহামদু লিল্লাহ। প্রথম হচ্ছে ইনসাফ যে ধারার, অর্থাৎ ইসলামী ধারার গণমাধ্যমের একটি রাস্তা খুলে দিতে পেরেছে। ফলে এই ধারার নতুন নতুন গণমাধ্যম বাজারে এসেছে।একটি বাড়ি যত বড়ই হোক না কেন, কেউ গ্রাম বলবে না। তেমনি একটি ধারার একক গণমাধ্যম যতই সমৃদ্ধ হোক না কেন, তাকে ‘ধারা’ হিসেবে গ্রহণ করা হবেনা। তাই নতুন নতুন ইসলামী ধারার গণমাধ্যমের জন্ম হওয়ায় এই ধারাটিকে ‘ধারা’ হিসেবে বিবেচনা করা শুরু হয়।

দ্বিতীয় প্রভাবের বিষয়টি একটু ভিন্ন। এটি আদর্শিক প্রভাব। ইনসাফের আত্মপ্রকাশকালীন দেশের গণমাধ্যমের চরিত্র কেমন ছিলো, তা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। ইনসাফের প্রধানতম কাজ ছিলো দেশীয় গণমাধ্যমে চূড়ান্ত অবহেলিত ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে তুলে ধরা। আলহামদু লিল্লাহ। ইনসাফ আদর্শিক জায়গায় অবিচল থেকে সামর্থ্যের সবটুকু শক্তি দিয়ে চেষ্টা করে গেছে।

ইনসাফের কাজের এই ধরনটা ইসলামী ঘরানার গণমাধ্যমগুলো অনুসরণ করা ছিলো খুবই স্বাভাবিক বিষয়। তবে বড় সাফল্যের বিষয় হলো, এই প্রভাব শুধু ইসলামী ধারার গণমাধ্যমেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, এটি প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে মূল ধারার গণমাধ্যমেও। যেখানে ইসলামী ধারার কোনও সংবাদ মূল ধারার গণমাধ্যমে আনতে এক সময় হাজার চেষ্টাতেও ব্যর্থ হতো, সেখানে ইসলামী ধারার গণমাধ্যমগুলোর চেয়েও এখন মূল ধারার গণমাধ্যমগুলো ইসলামী ধারার আইটেমগুলোকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে! এটাই ইনসাফের সবচেয়ে বড় সাফল্য। আলহামদু লিল্লাহ।

তবে একথা ঠিক যে, তারা ইসলামী ধারার সেটুকুকেই গুরুত্ব দেয়, যেটুকু তাদের পোষায়। যদিও তাদের অনেক বেশি আদর্শিক বলি দিতে হয়।

ইনসাফ ও পরবর্তী ইসলামী ঘরানার গণমাধ্যমগুলোর বর্তমান অবস্থান ও মূল ধারার গণমাধ্যমে এর প্রভাব দেখে আমরা আশা করতে পারি যে, ইন শা আল্লাহ খুব বেশি সময় লাগবেনা, অচিরেই দেশের গণমাধ্যম জগতে আমূল পরিবর্তন আসবে, এবং গণমাধ্যম গণমানুষের মাধ্যমে পরিণত হবে।

আমাদের এতো এতো সম্ভাবনার পরেও সংকটও কিন্তু কম নয়। সবচেয়ে বড় সংকটের জায়গা হচ্ছে পৃষ্ঠপোষকতা না থাকা। এতে আমরা যা করতে চাই, সামর্থ না থাকায় তার খুব সামান্যই করতে পারি। সামর্থের জন্য দরকার পৃষ্ঠপোষকতা, যা একেবারে নেই বললেও ভুল হবেনা। সঠিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ইসলামী ধারার অনেক গণমাধ্যমকে ইতিমধ্যেই বিতর্কিত পথে পা

বাড়াতে হয়েছে। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ইনসাফসহ ইসলামী ধারার গণমাধ্যমগুলো অনেকদূর যেতে পারবে, ইন শা আল্লাহ।

ইসলামী ঘরানার একটি গণমাধ্যম অর্ধযুগ অতিক্রম করা অনেক বড় বিষয়। মহান আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতেই কেবল তা সম্ভব হয়েছে। তা না হলে আমাদের কোনও যোগ্যতাই ছিলো না এতো প্রতিকূলতার মধ্যে একটি ২৪ ঘন্টার গণমাধ্যমকে টিকিয়ে এতদূর নিয়ে আসার।

আজকের এই আনন্দের দিনে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমার সকল সহকর্মী ও সহযোগীদের। যাদের সহযোগিতা না পেলে ইনসাফকে এতদূর নিয়ে আসা সম্ভব হতো না। যারা এখনো কর্মরত আছেন এবং এই দীর্ঘ পথে অতীতে আমাদের সাথে যারা ছিলেন, তাদেরও স্মরণ করছি।

প্রিয় পাঠক। আপনাদের কাছেও আমরা কৃতজ্ঞ, আপনাদের জন্যই আমাদের কাজ করে যাওয়া। আপনাদের দুআ ও ভালোবাসায় আমরা অর্ধযুগ অতিক্রম করে সপ্তম বর্ষে পা দিয়েছি। আমরা আশা করছি অতীতের মতো আপনাদের ভালোবাসা ও সহযোগিতা পাবো। আমাদের জন্য দুআ করবেন, ইনসাফের জন্য দুআ করবেন। আল্লাহ হাফিজ।

ইনসাফের উপদেষ্টা সম্পাদক হলেন সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর

0

দেশের প্রথম ইসলামী ঘরানার অনলাইন পত্রিকা ইনসাফের উপদেষ্টা সম্পাদক পদে মনোনীত হয়েছেন বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মাওলানা সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর। তিনি গত ২ বছর যাবত পত্রিকার পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

আজ (১৫ মে) ইনসাফের পরিচালনা পর্ষদের সকল সদস্যদের সম্মতিক্রমে প্রকাশক তাঁকে এই পদে মনোনীত করেন।

ইনসাফের সম্পাদক ও প্রকাশক সাইয়েদ মাহফুজ খন্দকারের পরিচালনায় বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য শায়েখ মুফতী হারুন ইজহার, মাওলানা গোলাম রাব্বানী ইসলামাবাদী, সদ্য সাবেক উপদেষ্টা সম্পাদক ও পরিচালনা পর্ষদ সদস্য মুসা বিন ইজহার, মাওলানা কামরুল ইসলাম কাসেমী, মাওলানা সানাউল্লাহ হাফেজ্জী ও নির্বাহী সম্পাদক মারজান হুসাইন চৌধুরী।

উল্লেখ্য, ইনসাফের উপদেষ্টা সম্পাদক পদে মাওলানা মুসা বিন ইজহারসহ ইতিপূর্বে তিনজন দায়িত্ব পালন করেছেন। মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী (এপ্রিল ২০১৬ থেকে জুন ২০১৭), মাওলানা মুসা বিন ইজহার (জুন ২০১৭ থেকে মে ২০২০)। এছাড়াও ২০১৪ সালে কিছুদিন এই দায়িত্ব পালন করেন মাওলানা মীর ইদরীস নদভী।

রমজানের শেষপ্রান্তে কদর তালাশে ব্যাপক ইবাদতে মশগুল হতে হবে: চরমোনাই পীর

0

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী রেজাউল করীম চরমোনাই পীর বলেছেন, রমজান মাসের শেষপ্রান্তে আমরা উপনিত। তাই সবাইকে কদর তালাশে বেশি বেশি ইবাদতে মশগুল হতে হবে।

বৃহস্পতিবার (১৪ মে) এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের পয়গাম নিয়ে রমজান মাস এসেছিলে আমাদের মাঝে। দেখতে দেখতে বরকতপূর্ণ মাসের শেষ দশকে এসে হাজির। বাকি দিনগুলো অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে ইবাদতে কাটানো উচিত সকলের।

তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাস দিন দিন আরও ব্যাপক হচ্ছে। বুঝা যাচ্ছে আমরা আল্লাহর কাছে নিজেদেরকে পরিপূর্ণরূপে সমর্পণ করতে পারিনি। এজন্য করোনাও যাচ্ছে না। তিনি সকলকে ধৈর্যধরাণ করে আল্লাহর কাছে বিশেষভাবে তওবা ও ইস্তেগফার করার আহ্বান জানান।

চরমোনাই পীর বিবৃতিতে আরও বলেন, হাদীস শরীফে এসেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি রমজান মাস পেয়েও নিজেদের গোনাহ মাফ করিয়ে নিতে পারেনি, তার চেয়ে হতভাগা আর কেউ হতে পারে না। তাই রমজানের বাকি দিনগুলোতে সবাইকে ইবাদতে মশগুল থাকার জন্য তিনি আহ্বান জানান।

নাটোরে ৪৫০ পরিবারের মাঝে বিএনপির খাদ্যসামগ্রী বিতরণ

0

নাটোরের বাগাতিপাড়ায় ৪৫০ পরিবারের মাঝে বিএনপির উদ্যেগে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণকালে কর্মহীন হয়ে পড়া গরীব দুস্থ মানুষের মাঝে এই খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়।

বৃহস্পতিবার (১৪ মে) সকালে বাগাতিপাড়া গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ প্রাঙ্গনে এই খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়।

উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ভিপি লেনিনের উদ্যোগে এই খাদ্য সহায়তা বিতরণ করা হয়। খাদ্যসামগ্রী বিতরণী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজ, আহবায়ক কমিটির সদস্য শহিদুল ইসলাম বাচ্চু, দেওয়ান শাহিন প্রমুখ।

মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনীকে বি-বাড়িয়ার শীর্ষ আলেমদের অভিনন্দন

0

ইসলামী ঐক্যজোটের সাবেক চেয়ারম্যান, বি-বাড়িয়ার প্রাণ পুরুষ মরহুম মুফতি ফজলুল হক আমিনী রহ. এর সুযোগ্য সন্তান মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী ইসলামী ঐক্যজোটের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় জেলার শীর্ষ উলামা মাশায়েখদের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৪ মে) দুপুর ১২টায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বি-বাড়িয়ার শীর্ষ আলেমদের পক্ষ থেকে এ অভিনন্দন জানানো হয়।

বিবৃতিতে জেলার শীর্ষ উলামা মাশায়েখগণ বলেন, মুফতি আমিনী রহ. ছিলেন দেশের রাজনৈতিক ও ইসলামি আন্দোলনের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি সাধারণ মানুষ অধিকার ও ইসলামের পক্ষে দাবি আদায়ের আন্দোলন করে গেছেন আমৃত্যু। দেশ ও ইসলামের স্বার্থে মুফতি আমিনী রহ. যে আদর্শিক রাজনীতির রূপরেখা তৈরি করে গেছেন, আমরা আশা করবো তার সন্তান মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী সেই রূপরেখার পথ ধরে এগিয়ে যাবে। পাশাপাশি দেশের আপামর জনগণের সেবা, ইসলাম ও মসজিদ মাদ্রাসার কল্যাণে আমৃত্যু নিজেকে নিয়োজিত রাখবে ইনশাআল্লাহ।

বিবৃতি দাতাগণ হলেন, জামিয়া সিরাজিয়া দারুল উলুম ভাদুঘর মাদ্রাসার মুহতামিম ও শাইখুল হাদিস মনিরুজ্জামান সিরাজী, জামিয়া ইউনুছিয়ার ছদর ও শাইখুল হাদিস আশেকে এলাহী ইব্রাহিমী, জামিয়া ইউনুছিয়ার মুহতামিম মুফতি মুবারকুল্লাহ ,জামিয়া ইউনুছিয়ার শাইখুল হাদিস ও জামিয়া দারুল আরকাম-এর মুহতামিম মাওলানা সাজিদুর রহমান, জামিয়া ইউনুছিয়ার সহকারী শিক্ষা সচিব মুফতি আব্দুর রহিম কাসেমী, জামিয়া দারুল আরকাম মাদ্রাসার সহকারী মুহতামিম, মাওলানা আলী আজম কাসেমী, জামিয়া কুরআনিয়া সৈয়দা সৈয়দুন্নেছা দারুল কোরআন মাদ্রাসার মুহতামিম হাফেজ মাওলানা ইদ্রিস, জামিয়া ইসলামিয়া সোনারামপুর আশুগঞ্জ মাদরাসার শাইখুল হাদিস, মুফতি বুরহান উদ্দিন কাসেমী, জামিয়া আইয়ুবিয়া দারমা মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মেরাজুল কাসেমী, জামিয়া হুসাইনিয়া দারুল উলুম উচালিয়া পাড়া মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা জহিরুল ইসলাম প্রমুখ।

করোনায় কাজের চাপের মধ্যেও অফিসে বসে কুরআন তিলাওয়াত করছেন এরদোগান

0

ইনসাফ টোয়েন্টিফোর ডটকম | নাহিয়ান হাসান


পবিত্র রমজানে খতম দেওয়ার উদ্দেশ্যে তুর্কী প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগানের কোরআন তেলাওয়াতের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তুর্কী প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগানের ঘুরে বেড়ানো একটি ভিডিও ক্লিপ নিয়ে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা তুমুল আলাপ -আলোচনা করছেন। সেই ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি পবিত্র রমজান মাসে খতম দেওয়ার জন্য বিশেষ রুটিনে কোরআন তেলাওয়াত করছেন।

তুর্কী প্রেসিডেন্টের ভিডিও ক্লিপটিতে দেখা যায়, তিনি একটি টেবিলের পিছনে বসে সুস্পষ্ট আওয়াজে মহাগ্রন্থ আল কোরআনের ২৫ পারাস্থ সূরায়ে শূরার কিছু আয়াত তেলাওয়াত করছেন। এতে করে তিনি তেলাওয়াতের মাধ্যমে খতম দেওয়ার ক্ষেত্রে কোরআনে কারীমের ছয় ভাগের পাঁচ ভাগে উপনীত হয়েছেন।

ভিডিও ক্লিপটিতে এরদোগানের সমর্থনে কুয়েতের প্রাক্তন জাতীয় সংসদ সদস্য একটি মন্তব্য করেন। মন্তব্যে তিনি বলেন, তার (এরদোগানের) আগে আমি শুধুমাত্র কুয়েতের বাদশা ও তার যুবরাজকে কুরআন তেলাওয়াত করতে দেখেছি। এছাড়া আর কোনো রাষ্ট্রপতিকে কোরআন তেলাওয়াত করতে দেখিনি। কুয়েতের বাদশা নিজ প্রাসাদে একটি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন যেখানে তিনি তার পরিবার ও প্রহরীদের নিয়ে ফরজ নামাজসহ অন্যান্য দৈনন্দিন আমলগুলো আদায় করতেন।

তিনি আরো বলেন, এই রীতির প্রচলন তার পূর্ববর্তী কুয়েতি বাদশা ও যুবরাজদের মাঝেও ছিল। তারাও তাদের ঘরের সামনে বিশালাকৃতির মসজিদ নির্মাণ করে ফরজ নামাজসহ দৈনন্দিন আমল সেখানে সম্পাদন করতেন। আর এরদোগানও তার দৈনন্দিন আমল ও রমজান কেন্দ্রিক কোরআন খতমকে আগলে রেখেছেন। আল্লাহ পাকও উনাকে আগলে রাখুন।

প্রায় সময়ই তুরষ্কের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এরদোগানের ভিডিও ক্লিপ ছাড়া হয়। যেগুলোতে দেখা যায়, তিনি জুমা অথবা জামাতে নামাজ আদায়ের পর কোরআন তেলাওয়াত করছেন।

কিছু সমালোচক রয়েছেন যারা এই ভিডিওগুলি প্রকাশ করাকে ‘ধর্ম ব্যবসা’ নামে আখ্যায়িত করে থাকেন। তবে অধিকাংশ লোকজনই এই ভিডিওগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রকাশকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও নিজেদের আনন্দ এবং সমর্থন প্রকাশ করেছেন।

কারণ টুইটার ব্যাবহার কারীদের ভাষ্যমতে, এরদোগান যা করেন বেশিরভাগ তুর্কি জনগণও তাই করে থাকেন।

টুইটার ব্যবহারকারীদের আরেকজন লিখেছেন, প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগানের কণ্ঠে মহাগ্রন্থ আল কোরআন তেলাওয়াতের ভিডিও প্রকাশের ব্যাপারে যারা সমালোচনা করে তারা জানে না যে আমরা এমন নেতৃত্ব পেয়ে কতটা খুশি যে নেতৃত্ব তুর্কী জনগণ, ধর্ম, ইতিহাস এবং সংস্কৃতির সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত।

তিনি আরো উল্লেখ করেন, আমরা তার (এরদোগানের) পূর্বের প্রেসিডেন্টদেরকে দেখেছি তারা কিভাবে পবিত্র রমজান মাসের দিনগুলোতে উদরপূর্তি ও পানে মত্ত থাকতো। সুতরাং আমরা কেনই বা এই লোককে পেয়ে খুশি হবো না অথচ তিনি আমাদেরই একজন।

এই বছরের রমজানটি করোনার ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে ব্যতিক্রমী পরিস্থিতির শিকার। যার ফলে বিশ্বজুড়ে প্রায় সাড়ে চার মিলিয়নের মত লোক এই মহামারীতে আক্রান্ত হয়েছেন এবং প্রায় ৩ লাখ মৃত্যুবরণ করেছেন। তাছাড়াও বৈশ্বিক অর্থনীতিকে হুমকির মুখে ফেলেছে এই প্রাণঘাতী মহামারী করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯।

ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে স্বল্প পরিসরে

0

পবিত্র মাহে রমজানের বিশ চলে গেছে। বাকি রয়েছে দশ দিন। এর পরই বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৪ থেকে ২৫ মের মধ্যে বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্বে ঈদ উদযাপিত হবে।

তবে প্রতিবছরের ন্যায় এবার আর বড় পরিসরে কোথাও ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে না। মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে ও সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের নামাজ পড়তে হবে। আর তা নিশ্চিত করতে মাঠে থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

আজ বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, বর্তমানে দেশব্যাপী বিদ্যমান বিভিন্ন বিধি-বিধান ঈদুল ফিতরের নামাজের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য থাকবে। বিশেষ করে, উন্মুক্ত স্থানে বড় পরিসরে জমায়েত পরিহার করতে হবে।

শিগগিরই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

হাইআতুল উলইয়ার প্রতি ঈদের পর মাদরাসা খুলে দেয়ার দাবী জানিয়ে ৭২ শীর্ষ আলেমের বিবৃতি

0

শীর্ষস্থানীয় ৭২ জন ওলামা-মশায়েখ এক যৌথ বিবৃতিতে কওমী অঙ্গনের সর্বোচ্চ ফোরাম আল-হাইআতুল উলইয়া বোর্ড কর্তৃপক্ষের প্রতি আসন্ন ঈদুল ফিতরের পর কওমি মাদরাসাসমূহ খুলে দিতে জোর দাবি জানিয়েছেন।

১১ মে সোমবার মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী স্বাক্ষরিত ৭২ জন আলেমের এক বিবৃতি গণমাধ্যমে প্রেরণ করা হয়।

বিবৃতিতে উলামায়ে কেরাম আরো বলেন, করোনা মহামারির কারণে দেশব্যাপী লকডাউন পরিস্থিতি চলায় দেশের প্রায় বিশ হাজার কাওমী মাদরাসার পঁচিশ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী গত শিক্ষাবর্ষের বার্ষিক পরীক্ষা, বেফাক ও আল-হাইআতুল উলইয়ার সেন্টার পরীক্ষা দিতে পারেনি। নিয়ম অনুযায়ী ঈদুল ফিতরের পর থেকে কাওমী মাদরাসাসমূহের নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে যাচ্ছে। এ সময়টা কওমি মাদ্রাসাসমূহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্ববহ।

উলামায়ে কেরাম আরো বলেন, লকডাউন পরিস্থিতি জারির প্রায় দেড় মাস পর সরকার যখন জনগণের কল্যাণে সবকিছুই শর্তসাপেক্ষে উন্মুক্ত করে দিতে শুরু করেছেন, সেহেতু দেশের শান্তিপ্রিয় সুশৃঙ্খল এবং সবচেয়ে বেশি নিয়ম মেনে চলতে অভ্যস্ত ও আনুগত্যশীল কাওমী শিক্ষার্থীদের আরো একটি শিক্ষাবর্ষে কুরআন ও হাদীসের শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত থাকুক এটা কাম্য হতে পারে না। সুতরাং যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের ছুটির পর কুরআন-হাদীস চর্চার কেন্দ্রস্থল কাওমী মাদরাসাসমূহ খুলে দিতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে কওমী অঙ্গনের সর্বোচ্চ ফোরাম আল-হাইআতুল উলইয়া বোর্ড কর্তৃপক্ষের প্রতি আমরা জোর দাবী জানাচ্ছি।

বিবৃতিদাতা উলামায়ে কেরাম ও পীর-মাশায়েখগণ হলেন, আল্লামা মুফতী আব্দুস সালাম চাটগামী, মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী, মুফতী মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, মাওলানা নুরুল ইসলাম (আদীব সাহেব), আল্লামা হাফেজ আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, মাওলানা শায়েখ জিয়া উদ্দিন, মাওলানা আব্দুল হামীদ (মধুপুর পীর), মাওলানা মুনিরুজ্জামান সিরাজী, মাওলানা আব্দুর রহমান হাফেজ্জী, মাওলানা আরশাদ রহমানী (বসুন্ধরা), মাওলানা নুরুল হক (বট্টগ্রাম হুজুর), অধ্যক্ষ মিযানুর রহমান চৌধুরী (শায়েখে দেওনা), মাওলানা উবায়দুল্লহ ফারুক, মাওলানা মাহমুদুল আলম (সিরাজগঞ্জ), মাওলানা আব্দুল হক হক্কানী (জামিল মাদরাসা), মুফতী মোবারকুল্লাহ (বি-বাড়ীয়া), মাওলানা নূরুল ইসলাম (খিলগাঁও), মাওলানা আব্দুর রব ইউসূফী, মাওলানা জুনায়েদ আল-হাবীব, মাওলানা আবুল কালাম (জামিয়া মুহাম্মাদিয়া), মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া (আরজাবাদ), মুফতী শফিকুল ইসলাম (সাইনবোর্ড), মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী, মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী (হাটহাজারী), মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী,

হাফেয মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী (বারিধারা), মাওলানা খুরশেদ আলম কাসেমী (খতীব, আল্লা করীম), মাওলানা আব্দুল আউয়াল (নারায়ণগঞ্জ), মুফতি মুনির হোসাইন হোসাইন কাসেমী, মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী, মাওলানা সানাউল্লাহ মাহমূদী (বরিশাল) মুফতি বশির উল্লাহ, মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান, মাওলানা আব্দুল বছির (সুনামগঞ্জ), মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী, মাওলানা জামিল আহমদ আনসারী (মৌলভীবাজার), মাওলানা বশির উদ্দিন (নরসিংদী), মাওলানা আব্দুর রহিম, মুফতি রফিকুল ইসলাম, মাওলানা বশির আহমদ (সৈয়দপুর,মুন্সিগঞ্জ), মাওলানা খলিলুর রহমান, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সাদী (ময়মনসিংহ), মাওলানা মাহবুব উল্লাহ, মাওলানা নুরুল আবসার মাসুম, মাওলানা আবুল কাশেম (জামালপুর), মুফতি শামসুদ্দিন, মাওলানা মুহাম্মদুল্লাহ খান, মুফতি আবু তাহের (নেত্রকোনা), মুফতি মুহাম্মদুল্লাহ জামী (কিশোরগঞ্জ)

মাওলানা আতাউর রহমান কাসেমী, মাওলানা লোকমান মাযহারী (কুমিল্লা), মুফতি শামসুল ইসলাম জিলানী, মাওলানা শাহজালাল, মাওলানা আব্দুল আজিজ (টাঙ্গাইল), মাওলানা ইয়াসিন, মাওলানা হেলাল উদ্দিন (ফরিদপুর), মুফতি কামরুজ্জামান, হাফেজ মাওলানা দেলোয়ার, মাওলানা সাখাওয়াত হোছাইন (খুলনা), মুফতি শহিদুল ইসলাম, মুফতি নজরুল ইসলাম (সিরাজগঞ্জ), মাওলানা আব্দুর রউফ, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস মিরপুর-১৪, মাওলানা নূর মোহাম্মদ (মিরপুর), মাওলানা আলী আকবর (সাভার), মাওলানা আব্দুল খালেক শরিয়তপুরী, মাওলানা সুলাইমান নোমানী, মাওলানা আজিমুদ্দিন, মুফতি মুজিবুর রহমান প্রমুখ।

মাওলানা আবদুল লতিফনেজামীর মৃত্যুতে নেজামে ইসলাম পার্টির শোক প্রকাশ

0

দেশের প্রবীণ ইসলামী রাজনীতিবিদ মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আমীর মাওলানা সরওয়ার কামাল আজিজী ও মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইজহার।

এক যৌথ শোকবার্তায় দলের আমীর ও মহাসচিব বলেন, মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী ছিলেন দেশের বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদদের অন্যতম একজন। তিনি ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি একটা সময় মুফতী আমিনী রহঃ, শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রহঃ ও মুফতী ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখদের মত অভিজ্ঞদের সাথেও রাজনীতি করেছেন। সহজ, সরল ও সাদাসিধা জীবন যাপনে ছিলেন অভ্যস্ত আমরা তার বিদেহী আত্নার মাগফিরাত কামনার পাশাপাশি শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।

মহান বদর যুদ্ধ প্রমাণ করে রমজান মুসলমানদের বিজয়ের মাস

0

মূল: ড. আলী মুহাম্মাদ সাল্লাবি
অনুবাদ: নাহিয়ান হাসান


মহান বদর যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয়ের ধারাটি ছিল রমজান মাসে বিজয় পরিক্রমার প্রারম্ভিকতা। রমজান বিজয়, সাহায্য, কল্যাণ এবং ক্ষমতায়নের মাসও বটে। কেননা এই মাসে ঈমানী মূল্যবোধ ও উচ্চমানের নৈতিকতার যা কিছুই রয়েছে তা মুসলমানদের সাথে এমন ধৈর্যের সন্নিবেশ ঘটায় যা নিরবিচ্ছিন্ন। তা এমন সংকল্পের সমাহার ঘটায় যা শেষ হওয়ার নয় এবং এমন পদক্ষেপ নিতে উদ্ভুদ্ধ করে যার কোনো সীমারেখা নেই। আর যদি আপনি রমজান মাসে ঘটে যাওয়া মুসলিম ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলীর কথা স্মরণ করেন তবে প্রথমেই প্রত্যেক মুসলমানের অন্তরে যে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটির কথা স্মরণে আসে তা হল, মহান বদরের যুদ্ধ। যে যুদ্ধে মুসলমানেরা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নেতৃত্বে কাফেরদের সেনাবাহিনী ও কুরাইশদের বাতিল নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করেছিল।

যুদ্ধের ইতিহাস ও তা সংঘটিত হওয়ার স্থান:

মহান বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল দ্বিতীয় হিজরির ১৭ই রমজান সোমবার সকালে ঐতিহাসিক ‘বদর প্রান্তরে’। বাণিজ্যিক কাফেলাগুলোর জন্য সে জায়গাটি ছিল শাম অভিমুখে সফর করার এবং পবিত্র মক্কা নগরীতে ফিরে আসার একধরনের স্টেশন বা মূলকেন্দ্র। এর ভৌগোলিক অবস্থান মক্কা ও মদিনার মাঝামাঝি সাফরা উপত্যকার নিম্নাঞ্চলে হওয়ায় আরবের প্রসিদ্ধ বাজারগুলোর একটি বাজার হতে একে সাহায্য করেছে।

যুদ্ধের কারণ:

মুসলমানেরা মুশরিকদের পূর্বেই বদরের প্রান্তরে পৌঁছে গিয়েছিল এবং হাব্বাব ইবনে মুনজির রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বদর প্রান্তরের পানির স্থানকে নিজেদের পশ্চাতে রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পরামর্শ কবুল পূর্বক তার মতানুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন।

মাদানি যুগে জিহাদের অনুমতি লাভের পর মুসলমানদের কাছে কুরাইশদের একটি বড় কাফেলার গতিবিধির খবর পৌঁছে যে কাফেলাটি প্রচুর পরিমাণে খাদ্যসামগ্রী ও ধন-সম্পদ বোঝায় করে আবু সুফিয়ান এবং সাখার ইবনে হারবের নেতৃত্বে শাম থেকে মক্কায় ফিরে আসছিল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবীদেরকে বের হওয়ার নির্দেশ দিলেন এবং সাহাবায়ে কেরামগণ আওয়ালীর বাসিন্দাদের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়াই তখন যারা প্রস্তুত ছিল তাদের সাথে নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে গিয়েছিলেন যাতে তারা সেই কুরাইশী কাফেলাকে হারিয়ে না ফেলেন। একারণেই মুসলমানেরা বদরের যুদ্ধে পরিপূর্ণ সামরিক শক্তি নিয়ে বের হতে পারে নি। তারা কাফেলাকে ধরতে বের হয়েছিলেন। কুরাইশের সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হওয়ার খেয়াল তাদের ছিলো না।

মুসলমানদের মধ্যে তিন শত তের জন লোকের একটি দল বের হয়েছিল। তাদের মধ্যে প্রায় ২৪০ দুই শত চল্লিশ জন ছিলেন মদিনার আনসারী সাহাবী। তাদের সাথে শুধুমাত্র ২জন ঘোড়সওয়ারী ছিলেন আর ছিল ৭০ সত্তরটি উট যেগুলোতে তারা পর্যায়ক্রমিক পালা অনুসারে আরোহন করছিলেন। কাফেলা জব্দ করতে মুসলমানদের বের হওয়ার খবর ‘আবু সুফিয়ান’ জেনে গিয়েছিলেন ফলে তিনি পথ পরিবর্তন করে উপকূলবর্তী রাস্তা অবলম্বন করে সাহায্যের জন্য মক্কার কুরাইশদের একত্রিত করতে একজন দূত পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। কুরাইশরা তখনই তাদের কাফেলাকে রক্ষা করার জন্য বেরিয়ে পরতে প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল এবং তারা তাদের সমস্ত শক্তি একত্রিত করে ফেলেছিল। তাদের মধ্যে খুব কমসংখ্যক লোকই এতে দ্বিমত পোষণ করেছিল। কুরাইশরা মুসলমানদের এই দুঃসাহসিকতাকে নিজেদের অবস্থানকে হীন করা, প্রভাবপ্রতিপত্তিকে অপমানিত করা ও অর্থনৈতিক স্বার্থে আঘাত হিসেবে বিবেচনা করেছিল। ফলে তাদের যোদ্ধার সংখ্যা প্রায় ১০০০ এক হাজারে পৌঁছেছিল। এবং তাদের সাথে ছিল ২০০ দুই শত ঘোড়সওয়ার যারা অগ্রভাগে থেকে তাদেরকে নেতৃত্ব দিচ্ছিল।

যুদ্ধ শুরুর আগের ঘটনা:

কাফেলা বেঁচে যাওয়ার পর যুদ্ধে যাতে দুপক্ষের মাঝে যাতে বিদ্রোহের সূত্রপাত না হয় তা নিয়ে পরামর্শ করার সময় মুশরিকদের দলে ‘মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ না করে ফিরে যেতে যারা ইচ্ছুক’ ও আবু জাহেলের মতো যারা মরণপণ লড়াইয়ে প্রস্তুত তাদের মাঝে মতানৈক্য দেখা দেয়। কিন্তু পরিশেষে আবু জাহেলের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল। কুরাইশদের কাফেলা ছেড়ে পালানো উদ্দেশ্য ছিল না বরং উপকূলবর্তী পথ অবলম্বন করে সাহায্য প্রাপ্ত হয়ে মুসলমানদেরকে সাজা দেওয়া এবং বাণিজ্যিক পথটি নিরাপদ করে পুরো আরববাসীদেরকে কুরাইশদের শক্তিসামর্থ্য ও আত্মমর্যাদা সম্পর্কে বার্তা দেওয়াই ছিল তাদের প্রধান উদ্দেশ্য। যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট সংবাদ এলো যে সেই বৃহৎ কাফেলাটি জব্দ হওয়া থেকে বেঁচে গিয়েছে এবং তার(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) সাথে যুদ্ধের জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন তিনি তার সকল সাহাবিদের সাথে একটি বৈঠক করেন এবং খাস আনসারী সাহাবায়ে কেরামের সামনে বক্তব্য রাখেন। অতপর মুহাজিরদের মধ্যে আবু বকর সিদ্দিক, ওমর ইবনুল খাত্তাব ও মিকদাদ ইবনে আমর (রিদওয়ানুল্লাহি আলাহিম) কথা বলেন। তারা অত্যন্ত চমৎকার কথা বলেছিলেন। সাদ ইবনে মুআজ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মানসা বুঝতে পেরেছিলেন এবং তিনিও অত্যন্ত চমৎকার কথা বলেছিলেন। অতপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাদ ইবনে মুআজ (রাঃ) এর কথায় অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিলেন।

যুদ্ধকালীন ঘটনা ও যুদ্ধের সূচনা:

মুসলমানেরা মুশরিকদের পূর্বেই বদরের প্রান্তরে পৌঁছে গিয়েছিলেন এবং সাহাবী হাব্বাব ইবনে মুনজির(রাঃ) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বদর প্রান্তরের পানির স্থানকে নিজেদের পশ্চাতে রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পরামর্শ কবুল করে নিয়ে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধের সকালে বদর প্রান্তরের যোদ্ধাদের নাম স্পষ্ট করে দিতেন। তিনি বলতেন, ইনশাআল্লাহ আগামীকাল যুদ্ধের দিনটি অমুক যোদ্ধার এবং ইনশাআল্লাহ অমুক দিনটি অমুক যোদ্ধার এবং তিনি তার সৈন্যদলকে কয়েক কাতারে সারিবদ্ধ করতেন। এবং সাদ ইবনে মুআজ (রাঃ) এর পরামর্শে তিনি সারিবদ্ধ সেনাদলের কেন্দ্রবিন্দু (আরিশে) অবস্থান করে যুদ্ধ পরিচালনা করতেন। তখন তিনি আপন রবের নিকট এতো বেশি দোয়া করতেন যে তার চাদর মোবারক খুলে পরে যেতো। তারপর আবু বকর সিদ্দিক(রাঃ) এসে বলতেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার রবের কাছে আপনি যথেষ্ট প্রার্থনা করেছেন। নিশ্চয় তিঁনি আপনাকে দেওয়া তাঁর প্রতিশ্রুত বিনিময় দিবেন। অতপর মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তায়ালা এই আয়াত নাজিল করেন,
(إِذْ تَسْتَغِيثُونَ رَبَّكُمْ فَٱسْتَجَابَ لَكُمْ أَنِّي مُمِدُّكُمْ بِأَلْفٍ مِّنَ ٱلْمَلاۤئِكَةِ مُرْدِفِينَ)আনফাল:৯

তারপর নবী(সাঃ)
{سَيُهْزَمُ ٱلْجَمْعُ وَيُوَلُّونَ ٱلدُّبُر}[ক্বমার:৪৫]

এই আয়াতটি বলতে বলতে তাবু থেকে বের হয়ে যান।

এবং তিনি মুশরিকদের মুখ লক্ষ্য করে কঙ্কর নিক্ষেপ করেন। এ ব্যাপারে আল্লাহ পাক কোরআনে কারীমে উল্লেখ করেন,
{وَمَا رَمَيْتَ إِذْ رَمَيْتَ وَلَـٰكِنَّ ٱللَّهَ رَمَىٰ} [আনফাল:১৭]

উতবা ইবনে রবীয়াহ সামনে অগ্রসর হওয়ার মাধ্যমে যুদ্ধের সূচনা হয়। তার দেখাদেখি তার ছেলে ওয়ালিদ এবং আপন ভাই শাইবাও সামনে অগ্রসর হয় এবং দুজনেই তাদের সাথে লড়াই করার জন্য বিপক্ষের সাহসীদের চ্যালেঞ্জ জানাতে থাকে। আনসারীদের কিছু নওজোয়ান সামনে অগ্রসর হলে তারা তাদের সাথে লড়াই করতে অস্বীকৃতি জানায় এবং তাদের চাচাদের গোত্রের বংশধরদের সাথে লড়াইয়ে প্রত্যাশী বলে জানায়। অতপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী ইবনে আবু তালেব, হামজা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব এবং উবাইদা ইবনুল হারেস (রিদওয়ানুল্লাহি আলাইহিম) কে লড়াইয়ের আদেশ দেন। তখন হযরত হামজা(রাঃ) উতবাকে এবং হযরত আলী(রাঃ) শাইবাকে হত্যা করে ফেলেন। হযরত উবাইদা(রাঃ) ও ওয়ালিদের মাঝে প্রচন্ড লড়াই হয় তারা দুজনের লড়াই ফলাফল শূন্য থেকে যায়। তারপর হযরত আলী ও হামজা (রাঃ) ওয়ালিদের দিকে এগিয়ে যায় এবং তাকে হত্যা করে এবং তারা হযরত উবাইদা(রাঃ)কে বহন করে নিয়ে আসে। এই লড়াইয়ের ফলাফল কুরাশদেরকে খুব বিচলিত করে ফেলে এবং শুরু হয় মুহুর্মুহু আক্রমণ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের আদেশ দিয়েছিলেন তারা যেনো মুশরিকদেরকে তীর নিক্ষেপ করে যদি তারা তীরের নাগালে মুসলমানদের কাছাকাছি চলে আসে।

মুসলিমরা আরব উপদ্বীপের অভ্যন্তরে ও বাইরে সামরিক দক্ষতা এবং যুদ্ধের নতুন পদ্ধতিতে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেছিল। আবু জাহল বিন হিশাম এবং উমাইয়া বিন খালাফ নিহত হওয়া ছাড়াও কুরাইশদের ক্ষয়ক্ষতির পাল্লা অনেক ভারী ছিল।

অতপর উভয় দল ব্যাপকভাবে ঘোরতর যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে যায়। যুদ্ধের দিন আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদেরকে ফেরেশতা মারফত সাহায্য করেছিলেন। কোরআনে কারীমে আল্লাহ পাক বলেন,
{إِذْ تَسْتَغِيثُونَ رَبَّكُمْ فَٱسْتَجَابَ لَكُمْ أَنِّي مُمِدُّكُمْ بِأَلْفٍ مِّنَ ٱلْمَلاۤئِكَةِ مُرْدِفِينَ * وَمَا جَعَلَهُ ٱللَّهُ إِلاَّ بُشْرَىٰ وَلِتَطْمَئِنَّ بِهِ قُلُوبُكُمْ وَمَا ٱلنَّصْرُ إِلاَّ مِنْ عِندِ ٱللَّهِ إِنَّ ٱللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ} [আনফাল:৯-১০].

মুখোমুখি তুমুল লড়াইয়ে ৭০জন মুশরিককে হত্যা করে মুসলিম বাহিনী। এবং তাদেরকে হত্যা করেছেন ঐ সমস্ত আহলে বদর যোদ্ধা যাদের নাম রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধের পূর্বে ঘোষণা করে স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছিলেন। তাদের মধ্য হতে কেউই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্ধারণ করা লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হন নি। আর তারা যাদেরকে হত্যা করেছিলেন তাদের মধ্যে কিছু ছিল কুরাইশদের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ। আর তারা হল,,আবু জাহেল,,আমর ইবনে হিশাম। আবু জাহেলকে মোয়াজ ইবনে আমর ইবনুলজুমুহ এবং মুয়াজ ইবনে আফরা নামী দুজন অপ্রাপ্তবয়স্ক দুঃসাহসী সাহাবী হত্যা করেছিলেন তবে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ(রাঃ) তাকে চূড়ান্তভাবে নিঃশেষ করে দেন। হযরত বেলাল ইবনে রাবাহ(রাঃ) আনসারীদের একটি দল ও অন্যান্যদেরকে সাথে নিয়ে উমাইয়া ইবনে খালফ ও তার পুত্রকে হত্যা করেছিলেন। অতপর রাসুল (সাঃ) মৃত মুশরিকদেরকে বদর প্রান্তরের কূপসমূহে অপসারণ করার নির্দেশ দিলে সাহাবায়ে কেরাম তাদের লাশগুলো সেখানে নিক্ষেপ করেন। কুরাইশদের বন্দী সংখ্যাও ছিল ৭০ সত্তর জন আর বাকি মুশরিকরা যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল। তারা যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে পালানোর সময় প্রচুর গণিমতের মাল রেখে গিয়েছিল এমনকি তারা একটিবারের জন্যেও পিছন ফিরে তাকানোর সাহস পায়নি। পরবর্তীতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদের শহীদদেরকে দাফন করেন। আর মুসলিমদের পক্ষে শহীদ হয়েছিলেন ১৪ চৌদ্দ জন সাহাবী।

যুদ্ধের ফলাফল:

অবশেষে মুসলমানদের গোড়া পাকাপোক্ত হল। এবং গোটা আরব উপদ্বীপে তারা হয়ে উঠল অন্যতম পরাশক্তি। এতে মদিনায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবস্থান আরো মজবুত হয়। সেখানে ইসলামের নক্ষত্র আরো উপরে উন্নীত হয়।

যারা নতুন দ্বীনের আহবানে সন্দেহবাদী তারা সন্দেহ পোষন করতে, মদিনার মুশরিকরা তাদের কুফুরী প্রকাশ করতে ও ইসলামের বিরুদ্ধে শত্রুতা পোষণ করার দুঃসাহস করেনি। ফলে কপটতা, ষড়যন্ত্র এবং ধোকাবাজি প্রকাশ পেল। তারা নবী ও সাহাবীদের সামনে ইসলাম জাহির করতো। আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি মুসলমানদের বিশ্বাস দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছিল, মুশরিকীনে কুরাইশদের মধ্য হতে বেশকিছু লোক ইসলামের ছায়াতলে প্রবেশ করেছিলেন। এগুলোর ফলে যারা তখনো মক্কায় রয়ে গিয়েছিলেন তাদের হিম্মত বাড়তে থাকে, তাদের অন্তরাত্মা আল্লাহ’র সাহায্যের আনন্দে ভরে উঠতে থাকে। তারা ভিতরে ভিতরে আশ্বস্ত হচ্ছিলেন যে বিজয় অতি সন্নিকটে। তাদের ঈমান আরো দৃঢ় হতে থাকে এবং তারা তাদের একত্ববাদের ঈমানে অটল থাকে।

মুসলিমরা আরব উপদ্বীপের অভ্যন্তরে ও বাইরে সামরিক দক্ষতা এবং যুদ্ধের নতুন পদ্ধতিতে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেছিল। আবু জাহল বিন হিশাম এবং উমাইয়া বিন খালাফ, উতবা ইবনে রবীয়াহ ছাড়াও আরো কাফের নেতৃবৃন্দ যারা ছিল কুরাইশদের মধ্যে অত্যাধিক সাহসী, শক্তিশালী ও প্রভাবশালী তারা নিহত হওয়া ছাড়াও কুরাইশদের ক্ষয়ক্ষতির পাল্লা অনেক ভারী ছিল। এই পরাজয়ের ফলে মুশরিকীনে কুরাইশদের শুধুমাত্র যুদ্ধলব্ধ ক্ষতিই হয়নি বরং এই যুদ্ধের ফলে তাদের নৈতিক পরাজয়ও ঘটেছিল। আর তা হল, এই পরাজয় শুধুমাত্র উক্ত অঞ্চলে তাদের বাণিজ্যকে হুমকিতে ফেলেনি বরং সমগ্র হেজাজে তাদের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বকে ফেলে দিয়েছিল হুমকির মুখে। এ কারণেই আল্লাহ পাক উক্ত দিনটিকে ‘ইয়াওমুল ফুরকান’ তথা সত্য-মিথ্যার মাঝে পার্থক্যের দিন নামে পবিত্র কোরআনে পাকে অভিহিত করে বলেন,
{وَمَآ أَنزَلْنَا عَلَىٰ عَبْدِنَا يَوْمَ ٱلْفُرْقَانِ يَوْمَ ٱلْتَقَى ٱلْجَمْعَانِ} [আনফাল:৪১]

এই যুদ্ধের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা হক এবং বাতিলের মাঝে পার্থক্য স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন। এবং তিঁনি হকের কালিমাকে বাতিলের কালিমা থেকেও সুউচ্চে উন্নীত করেছেন, তাঁর দ্বীনকে প্রকাশ করে দিয়েছেন এবং তাঁর নবী ও তার যোদ্ধাদেরকে সাহায্য করেছেন।

  • ১~ইমাম তাবারী: তারীখুল উমাম ওয়ার রুসুল ওয়াল মুলূক যা তারীখে তাবারী নামে প্রসিদ্ধ। খঃ২য়। পৃঃ৪০৪।
  • ২~আলী সাল্লাবী: ‘আস সীরাতুন নাবাওয়িইয়্যাহ’ এবং ‘আরজু ওয়াকাইয়ীন ওয়া তাহলীলু আহদাসীন’। পৃষ্ঠা নং যথাক্রমে ৫৫৩ এবং ৫৯০।
  • ৩~মোহাম্মদ আল আবেদ: হাদিসুল কোরআনী আন গাজওয়াতী রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। খঃ১ম। পৃঃ ৯১-৯৯।
  • ৪~মাহমুদ শিত খাত্তব: গাজওয়াতু বদরিল কুবরাল হাসিমাহ। পৃঃ২৩-২৪।
  • ৫~ইমাম মুসলিম: সহীহ মুসলিম।অধ্যায়, কিতাবুল জিহাদ ওয়াস সিয়ার। বাব,ফেরেশতা কর্তৃক বদর যুদ্ধে সাহায্য ও গণিমতের সম্পদের বৈধতার আলোচনা।খঃ৩য়। পৃঃ ১৩৮৪।
  • ৬~মাহদী রিজকুল্লাহ আহমদ: আস সীরাতুন নাবাওয়িইয়াতু আলা দূয়িল মাসাদিরিল আসলিয়্যাহ। অধ্যায়, দিরাসাতু তাহলীলিয়্যাহ।
  • ৭~ইয়াকুত আল হামাওয়ি: মু’জামুল বুলদান। খঃ ১ম। পৃঃ৩৫৭।