মাওলানা হাফেজ এহছান | সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক, চন্দনাইশ কোরআন প্রচার সংস্থা
বর্তমান সময়ে ইসলামী সংবাদপত্র সাংবাদিকতা, ও মিডিয়ার ক্ষমতা -প্রভাব ও গ্রহণযোগ্যতা অনস্বীকার্য। মিডিয়ার সুবাদে যেকোনো খবর বিশ্বের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে পৌঁছে যায় মুহূর্তে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশের প্রথম ইসলামী অনলাইন পত্রিকা ‘ইনসাফ টোয়েন্টিফোর ডটকম’ ইসলামী কাজের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে।
ইনসাফ টোয়েন্টিফোর ডটকম তার দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় ছয় বছর পেরিয়ে সপ্তম বর্ষে পদার্পণ করায় আন্তরিক শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করছি। উক্ত পত্রিকার সাথে সংশ্লিষ্ট সকল সদস্যবৃন্দ ইসলাম, দেশ ও জাতির অগ্রগতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে এটাই একমাত্র প্রত্যাশা।
নূর হোসাইন সবুজ | প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক : ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ ঢাকা মহানগরী
ইনসাফ একটি ইসলামিক মিডিয়া। অর্ধযুগ আগের ইনসাফ সকল বাধাবিপত্তি পেরিয়ে ইসলামিক ঘরানার শক্তিশালী মিডিয়া হিসেবে রূপ নিয়েছে। হলুদ সাংবাদিকতার মুখোশ উন্মোচনে আপোষহীন ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। অর্ধযুগ আগে কে জানতো ইনসাফ একদিন তাঁর লক্ষ্যে পৌঁছবে? মুখোশ উন্মোচিত করবে সকল বাকশালি হলুদ মিডিয়ার। আজ থেকে অর্ধযুগ পূর্বে ইনসাফ সম্পাদক সাইয়েদ মাহফুজ খন্দকার ভাই যাত্রা শুরু করেন। আল্লাহর অশেষ কৃপায় ইনসাফ আজ সর্ব মহলে স্বীকৃত।
আমরা জানি, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে ইনসাফ অনন্য। বিশেষত ইসলাম বিদ্বেষী সকল অপশক্তির মোকাবেলায় সর্বপ্রথম অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে ইনসাফ। যেকোনো অন্যায়-অত্যাচার, জুলুম ও নির্যাতনের কথা তুলে ধরছে সমাজের কাছে। খেটে খাওয়া মেহনতী মানুষের যৌক্তিক দাবীগুলো তুলে ধরছে রাষ্ট্রের কাছে।
আজ থেকে একযুগ আগেও আমরা যতটা পিছিয়ে ছিলাম। ইসাফের ঐকান্তিক চেষ্টায় আমরা আজ অতটা পিছিয়ে নেই। শায়খ আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেন হিম্মতের নাম ইসমে আজম। যারা হিম্মত করে অটল থাকে তারাই সফল হয়। সফলতা কেবল তাদেরই পদচুম্বন করে।
পরিশেষে, ইনসাফের সার্বিক উন্নতি ও অগ্রগতি কামনা করছি। আল্লাহ তায়ালা ইনসাফকে তাঁর লক্ষ্যে পৌঁছার তৌফিক দান করুক। আমিন।
বর্তমানে আমরা যে সময়টা অতিক্রম করছি, বলতে দ্বিধা নেই যে এটা তথ্য-প্রযুক্তির সময়। জ্ঞান-বিজ্ঞানের সময়। প্রগতিপন্থীরা প্রযুক্তির অপব্যবহার করে মুসলিম উম্মাহকে আজ ভ্রষ্টতার বেড়াজালে আবদ্ধ করছে। নির্মূল-নিঃশক্তি করে ফেলতে চায় ওরা ইসলামকে।
২০১৩ সালের ৫ই মে’র শাপলার ট্রাজেডির কথা কারো অজানা নয়। নজিরবিহীন এক ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছিল সেদিন। মজলুম মুসলমানদের বিব্রতকর অবস্থা করেছিল নাস্তিক মুরতাদরা। কিন্তু আফসোস ও অনুতাপের বিষয় হলো, মিডিয়া অঙ্গনে আলেম-উলামাদের অবস্থান বলতে গেলে ছিলই না। বাহিরের মানুষ জানতেও পারেনি স্পষ্টভাবে তাঁদের কার্যক্রম সম্পর্কে।
সে সুযোগে নাস্তিক-ব্লগারেরা কালো মিডিয়াগুলোতে উলামায়ে কেরামগণের গঠিত অরাজনৈতিক আন্দোলনকে রাজনৈতিক আন্দোলন বলে সাধারণ মুসলিম আমজানতার মাঝে ছড়িয়ে দেয়। সাধারণদের মাঝে তাদের প্রতি হিংসা বিদ্বেষ ছড়াতেও তারা কোন কমতি রাখেনি। উলামায়ে কেরামগণের তখন কোন কিছু করার ছিল না।
কারণ জনসম্মুখে ইসলামের বার্তা দ্রুত পৌঁছানোর পথ ছিল না তাদের আয়ত্ত্বে। যার কারণে অনেক ঝড়-ঝাপটার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাদের।
ঠিক এক বছর পর ২০১৪ সালের ৫ই মে শাপলার শূন্যতাকে উপেক্ষা করে, আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির শূন্যতা পূরণ করার লক্ষে দেশের শীর্ষ স্থানীয় আলেমদের তত্ত্বাবধানে ইনসাফ নামক সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ইসলামি ঘরানার এক মিডিয়ার পথ চলা শুরু হয়।
এই মিডিয়াটি পরিচালিত হয় সম্পূর্ণ আলিমদের তত্ত্বাবধানে। এখানে যেমন কাজ করেন মাদরাসা অঙ্গনের তরুণগণ। তেমনই কাজ করেন ভার্সিটি অঙ্গনের ভাইগণ। নতুন উদ্যমে শুরু হয় তাদের পথচলা।
তাদের উদ্দেশ্য –
★ সত্যকে সত্য এবং মিথ্যাকে মিথ্যা প্রমাণ করে উম্মাহের সামনে পেশ করা।
★ নির্যাতিত নিষ্পেষিত মুসলমানদের আর্তনাদ জনসম্মুখে তুলে ধরা।
★ কালো পর্দার আড়ালে লুকিয়ে থাকা মিথ্যুকদের মুখোশ উন্মোচন করা।
★ নাস্তিক্যবাদদের চেলেঞ্জিং’র মোকাবেলা করা।
এক কথায় সর্বাঙ্গে সর্বাবস্থায় উম্মাহের সামনে সত্যকে তুলে ধরা এবং মিথ্যা প্রতিহত করাই তাদের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
আজ সাফল্য ও বিশ্বস্ততার স্বাক্ষর রেখে অর্ধযুগ অতিক্রান্ত করে ফেলেছে “মিডিয়া ইনসাফ”। ৭ম বছর চলছে এই গণমাধ্যমের এই মিডিয়াটির। লক্ষাধিক পাঠক-দর্শকদের হদয়ে স্থান করে নিয়েছে প্রিয় এই প্রতিষ্ঠান ও তাতে নিবেদিত-প্রাণ জনদরদি আস্থাবাজন প্রিয় ব্যক্তিরা। আগামী প্রজন্মে ইনসাফের মতো এমন আরো অনেক ইসলামি মিডিয়ার প্রয়োজন। সব শূন্যতা যেন পূর্ণ করে দেন রাব্বে কা’বা।
অবশেষে বলি!!
ইনসাফকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে সর্বদা যাদের চেষ্টা-সাধনা ছিল এবং অব্যাহত, আল্লাহ তায়ালা সকলকে জাযায়ে খাইর দান করুন এবং যুগ যুগ ধরে আপনারা আমাদের মাঝে সত্যের পয়গাম নিয়ে আসুন।
সকলকে আল্লাহ তাওফিক দান করুন। ইনসাফ তুমি সত্য ন্যায়ের কণ্ঠস্বর। আধারে আলো ফোটাও তুমি। নতুন প্রভাত উপহার দেয়া তোমার কাজ তুমি হাজারো হৃদয়ের স্পন্দন। কোটি জনতার আস্থা তোমার উপর। যুগ যুগ বেঁচে থাকো লক্ষ মানবাত্মার “ছামিমে ক্বালবে”।
ইনসাফ কিছু কারণে আমার কাছে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম কারণ হচ্ছে ইনসাফ হেফাজতে ইসলাম ঘরানার প্রথম অনলাইন পত্রিকা। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, শত প্রতিকূলতা, প্রতিবন্ধকতা ও সীমাবদ্ধতার মাঝেও ইনসাফ এখন পর্যন্ত তার ধারাবাহিক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এই দুই কারণে ইনসাফকে বিশেষভাবে দেখতে হবে।
ব্যক্তিগত পছন্দের ক্ষেত্রে আমার কাছে ইনসাফের জন্য কিছু জায়গা চিরস্থায়ীভাবে বরাদ্দ থাকবে৷ কারণ অনলাইন কোন পত্রিকায় আমার ধারাবাহিক কাজের সূচনা হয়েছিল ইনসাফ থেকেই। যদিও কাজগুলো নিছক একজন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবেই করেছিলাম। কিন্তু প্রথম যেখানে অফিসিয়ালি লেখক হিসাবে কাজ করার সুযোগ মেলে সে ক্ষেত্রটা বিশেষভাবে আবেগের জায়গা ধরে রাখে।
ইনসাফের সবচেয়ে একটা বড় সফলতা আছে। যেটা নিয়ে আমি গর্ববোধ করি। নিবেদিতপ্রাণ সম্পাদক মাহফুজ খন্দকার ভাই পত্রিকাটি আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর ছায়ায় রেখেছেন। তিনি নিজেও সে ছায়ায় থেকেছেন। বিভিন্ন সময় প্রত্যক্ষভাবে হেফাজতে যেই নেতা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার স্বীকার হয়েছেন, পরোক্ষভাবে এখনো হচ্ছেন তার ছায়ার নিচে টিকে থাকাটা অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং।
এ কথা আস্থার সাথেই বলা যায় প্রধান মুরুব্বি ও উপদেষ্টা হিসেবে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর নাম যতদিন এই পত্রিকার সাথে জুড়ে থাকবে ততদিন এর আস্থার জায়গায় প্রশ্ন তোলাটা সহজ হবেনা। এভাবে শেকড়ের উপর টিকে থাকতে পারাটাকে তাই আমি ইনসাফের সফলতাই বলতে চাই। আগামীতেও আমি ইনসাফকে এই সফলতার উপর দেখতে চাই।
ওবাইদুল্লাহ ওবাইদ | প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক : কওমি ভিশন
খ্রিস্টপূর্ব ৪৯ সালে রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজারের হাত ধরে সংবাদ পত্রের পথচলা শুরু হয়। উপমহাদেশে কাগজে লেখা সংবাদপত্র বের হয় ১৭৮০ সালে ইংরেজ সাংবাদিক জেমস অগাস্টাস হিকির হাতে। প্রথম সংবাদপত্রের নাম ‘বেঙ্গল গেজেট’, যেটি ছিলো ইংরেজি ভাষায় লেখা। আর বাংলা ভাষায় সংবাদপত্র ছাপা শুরু হয় ১৮১৮ সালে ‘রঙ্গপুর বার্ত্তাবহ’-এর মাধ্যমে। (সূত্র : বাংলা সংবাদপত্র ও বাঙালির নবজাগরণ)।
অনলাইন সাংবাদিকতা বা সংবাদ মাধ্যমের পরিচয় দিতে লম্বা কথা বলার প্রয়োজন নেই। প্রচলিত সাংবাদিকতার আধুনিক রূপই হচ্ছে অনলাইন সংবাদপত্র বা অনলাইন সাংবাদিকতা। বাংলাদেশে অনলাইন সংবাদপত্র আসে ২০০৪ সালে। বলা যায় বাংলাদেশে অনলাইন সংবাদপত্র চালু হয়েছে অনেক পরে। দেশের প্রথম অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। বিশিষ্ট সাংবাদিক আলমগীর হোসেন ছিলেন এর প্রধান সম্পাদক ও অন্যতম উদ্যোক্তা
সংবাদপত্রের শুরু থেকে আজকের আধুনিক যুগ পর্যন্ত ইসলাম ও মুসলমানদের পক্ষে কথা বলেছে এমন কোনো মিডিয়ার খোঁজ ইতিহাসের পাতায় পাওয়া যায় না। অথচ ইসলাম মুসলমানদের বিজয় ও শাসনামল কম ছিল না। এক প্রকার বলাই যায়, মিডিয়া অঙ্গনে ইসলাম এবং ইসলামী অঙ্গনে মিডিয়া বরাবরই অবহেলিত ছিল। এখনও সে অবহেলা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এই আধুনিক ও সচেতনতার যুগেও মিডিয়া অঙ্গনে আলেমদের দাপুটে অবস্থান না হওয়ার পিছনে অনেক কারণ রয়েছে। সব বাধাকে পিছনে ফেলে যারা এ পথে নেমে আসেন তাদের শুনতে হয় নানা কথা। কেউ ভাবেন আলেম হয়ে সাংবাদিক হওয়া সাজে না। এটি তুচ্ছ কাজ। আবার কেউ ভাবেন এসব আমাদের দ্বারা সম্ভব নয়। অথচ তাবলিগে দীন ও ইসলামী সভ্যতা সংস্কৃতির প্রচার-প্রসারে মিডিয়ার গুরুত্ব অনেক। এই গুরুত্বটা অনুধাবন করতে না পারাটাই ইসলামী অঙ্গনে মিডিয়া অবহেলিত হওয়ার মূল কারণ।
এসব বাধা বিপত্তি ডিঙিয়ে, অসম্ভবকে সম্ভব করে, অজানা আতঙ্ক ও না-পারার ভয়কে জয় করে, ইনসাফ দেখিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে যে, আলেমদেরও গণমাধ্যম হতে পারে। আলেমরাও সাংবাদিকতা করতে পারেন। ২০১৪ সনের ৫ মে স্রোতের বিপরীত ইনসাফ পরিবারের এমন কালজয়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারাতেই আজকের প্রজন্ম বলতে পারে আমাদেরও মিডিয়া আছে।
এরপর আরো অনেকগুলো ইসলামী মিডিয়া মাঠে এসেছে। প্রশংসার সাথে কাজ করছে। এ পত্রিকাগুলো অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়া যোগ্য।
একটি মিডিয়ার প্রতিষ্ঠার পর অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ সামনে আসে। যার অন্যতম হচ্ছে স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা, নিষ্ঠা, নতুনত্ব ও আস্থা ধরে রাখতে পারা। আমি মনে করি ইনসাফ এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সফল হয়েছে। এর পুরো কৃতিত্ব ইনসাফের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক জনাব সাইয়েদ মাহফুজ খন্দকার এবং তার সুদক্ষ কর্মী বাহিনীর।
তবে একটি কথা নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে হয়, আমাদের যে বিশাল ইউনিটি রয়েছে সবার সমন্বয়ে একটি জাতীয় দৈনিক বের হওয়া কঠিন কোনো কাজ নয়। তিক্ত বাস্তবতা তো এটাই যে, এখানে সবার সমন্বয়টাই সবচে বড় চ্যালেঞ্জ। যার ফলে আমাদের দক্ষ কর্মী বাহিনী, অদম্য উৎসাহী আলেম সাংবাদিকবৃন্দ থাকলেও একটি উল্লেখযোগ্য দৈনিক বা মিডিয়া হাউজ তৈরি করা সম্ভব হয়নি। এখানে সমন্বয়হীনতা অর্থ সংকটই মূল কারণ। যেখানে বিভিন্ন কর্পোরেট কোম্পানি নিজস্ব অর্থায়নে মিডিয়া পরিচালনা করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন সেখানে আয়ের কোনো মৌলিক উৎস ব্যতীত ক্ষুদ্র স্পন্সর ও ডোনেশন নির্ভর হয়ে কাজে নামাটা অত্যন্ত ঝুঁকি সাহসিকতার বিষয়।
তবুও এ ঝুঁকির পথে ইনসাফ সাহসিকতার সাথে পা বাড়িয়েছে।
ইনসাফ তার এ পথচলার অর্ধযুগ পার করেছে। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে ইনসাফ সকল সংকট কাটিয়ে আরো সমৃদ্ধ হয়ে দেশ, জাতি ও ইসলামের কল্যাণে যুগ যুগ ধরে কাজ করে যাবে ইনশাআল্লাহ।
আজকের বিশেষ সময়ে ইনসাফের সকল কলাকৌশলীকে জানাই হৃদয় নিংড়ানো অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।
৫ মে ২০১৩৷ ইতিহাসের নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার হন দেশের তাওহীদী জনতা৷ শাপলা চত্বরে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হই আমি/আমরা৷ সেসময় আমাদের শক্তিশালী মিডিয়া ছিল না৷ যারা যেভাবে পেরেছে, আন্দোলনকে নিজস্ব ধ্যানধারণায় কভারেজ করেছে৷ এখানে মিথ্যা তথ্য তুলনায় বাস্তব চিত্র খুব কমই এসেছে।
এরপর ২০১৪ সালের ৫মে৷ কিছু তরুণ স্বপ্ন দেখেন আমাদের মিডিয়া প্রতিষ্ঠার৷ বলা যতটা সহজ, বাস্তবায়ন ততটা সহজ নয়৷ হাটহাজারি মাদরাসায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে ইনসাফ৷ পুরো কওমী অঙ্গনের প্রথম অনলাইন পত্রিকা৷ দেশের প্রথম সারির সকল আকাবির উলামায়ে কেরামের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে আমাদের ইনসাফ৷ আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী হাফিজাহুল্লাহু তাআলা তো বলেছেন, “ইনসাফ আমার স্বপ্ন পূরণ করছে”৷
আজ ইনসাফ অর্ধযুগ পূর্ণ করেছে৷ চলার পথ মসৃণ ছিল না৷ যোগ্য সম্পাদক সাইয়েদ মাহফুজ খন্দকারকে ধন্যবাদ জানাতে হয়৷ উদ্যমী এই তরুণের হাত ধরে এগিয়ে চলছে ইনসাফ৷
বিশ্বখ্যাত ইসলামিক স্কলার মাওলানা আলি মিয়া নদবি রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, “যে জাতির হাতে প্রেস নেই, তাদের অধিকার রক্ষিত হওয়ার কোনো নিশ্চয়তা নেই৷” তিনি তাঁর সময়ের কথা বলেছেন৷ এখন বেঁচে থাকলে বলতেন, যাদের মিডিয়া নেই, তাদের ভাগ্যে কল্যাণ নেই৷
আসুন, বিরোধীতা ও অহেতুক সমালোচনা তরক করে ইনসাফের পাশে দাঁড়াই৷ অনেক অনেক শুভ কামনা ইনসাফ পরিবারের জন্য৷
১. নিজ ধর্ম ও বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে শক্তিশালী সংস্কৃতি ও সভ্যতার বলয় তৈরী করা। শুধু বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ সরবরাহ করা সাংবাদিকের একমাত্র লক্ষ্য উদ্দেশ্য নয়। বরং এটা নৈতিক দায়িত্ব। ধর্মভিত্তিক সঠিক লক্ষ্য উদ্দেশ্য ছাড়া সাংবাদিকতা চর্চা ক্রমান্বয়ে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে বস্তুবাদী বিশ্বাসের দিকে নিয়ে যায়। লক্ষ্য উদ্দেশ্য ছাড়া সাংবাদিকতা চর্চা করার কারণে অনেক বিশ্বাসী মানুষও অনেক সময় বস্তুবাদী চিন্তা চেতনা দ্বারা প্রভাবিত হন। সঠিক গাইড লাইন না থাকলে অনেকে নাস্তিকও হয়ে যায়। এজন্য প্রত্যেক সাংবাদিকের জন্য যথার্থ অর্থে একজন উপদেষ্টা থাকা একান্ত প্রয়োজন।
একই সংবাদ সাংবাদিকের বিশ্বাসে বৈচিত্র্য থাকার কারণে সংবাদ শিরোনামও বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়। উদাহরণ স্বরূপ গাড়ী এক্সিডেন্টে বহু যাত্রী হতাহত হওয়ার সংবাদ শিরোনাম হয় “সড়ক দূর্ঘটনায় অকালে ঝরে পড়ল বিশটি তরতাজা প্রাণ।” পক্ষান্তরে বিশ্বাসী সাংবাদিক এর শিরোনাম করেন, “সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে বিশজন।” অবিশ্বাসী সাংবাদিক শিরোনাম করে, “তিনি করোনা মোকাবেলা করে অবশেষে হেরে গেলেন বা হার মানলেন।” আর বিশ্বাসী সাংবাদিক শিরোনাম করে তিনি করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। মোটকথা “নিজের ধর্মভিত্তিক বিশ্বাস প্রসারের জন্য সাংবাদিকতা, সাংবাদিকতার জন্য বিশ্বাস নয়।”
২. নিজেদের পরিভাষা তৈরি ও সংরক্ষণ করা। ইতিহাস সাক্ষী দেয় যে জাতি ভাষা নিয়ন্ত্রণ করে তারাই বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করে। বা যারা বিশ্ব শাসন করে তারাই ভাষা শাসন করে। ইসলাম যখন গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ল এবং প্রবল প্রতাপে বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ দখল করল তখন তারা অসংখ্য নতুন ভাষা ও পরিভাষা সৃষ্টি করেছে। ইসলাম আবির্ভাবের পূর্বে পৃথিবী সালাত, সিয়াম, হজ্ব, যাকাতসহ সহস্রাধিক ইসলামিক পরিভাষার সঙ্গে পরিচিত ছিল না। গোটা পৃথিবীতে মুসলমানরাই এই পরিভাষাগুলো পরিচিত করেছে। যেমন আমেরিকা আজ সারা বিশ্বে এইচ, আই, ভি, নভেল করোনা, বিভিন্ন গ্যালাক্সি ও গ্রহের নামকরণ করছে।
সুতরাং ভাষা শাসন করা বা নিয়ন্ত্রণ করার সঙ্গে বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করার এক গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এজন্য নিজেদের ঐতিহ্যপূর্ণ ভাষা ও শব্দ ভান্ডার সংরক্ষণের পাশাপাশি নতুন পরিভাষা ও শব্দ সৃষ্টি করাও সাংবাদিকতা চর্চার একটি মৌলিক লক্ষ্য উদ্দেশ্য। বাম সাংবাদিকরা অত্যন্ত গভীর ষড়যন্ত্র করে ‘আবহাওয়া’ জাতীয় মুসলমানদের আরবি ফার্সি শব্দগুলো পরিবর্তন করে বাবুদের ‘জলবায়ু’ শব্দ দ্বারা পরিবর্তন করে দিয়েছে।
একটি ছোট শিক্ষনীয় ঘটনা। ঢালকানগর মাদরাসায় শিক্ষানবিস থাকাকালীন প্রতিদিনের রুটিন অনুযায়ী বাদ আসর মাওলানা মুহিউদ্দীন খান রহ. এর সান্নিধ্যে গিয়েছি। বাসায় ঢুকে দেখি সোফায় বসে ‘দৈনিক নয়া দিগন্ত’ পড়ছেন। হুযুর পত্রিকার একটি কলাম দেখিয়ে আমার হাতে দিয়ে বললেন, এই কলামটা পড়। আমি কলামটা পড়ে পত্রিকা রেখে দেয়ার পর হুযুর জিজ্ঞেস করলেন, কি বুঝলে? আমি সাদামাটাভাবে সংবাদের খোলাসা বললাম। হুযুর বললেন, কিছুই বোঝার নাই।
সংবাদটা ছিলো, জনৈক সাংবাদিক হাইকোর্টে রিট করেছে “আদালতে বাংলা ভাষা ব্যবহার হয় পঞ্চাশ শতাংশ। আদালতে একশো ভাগ পরিপূর্ণ বাংলা ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।” হুযুর বললেন এইসব বাম সাংবাদিক কলিকাতার বাবুদের বিশ্বস্ত ভৃত্যরা ইসলাম, মুসলমান বা ভারতবর্ষের মুসলমানদের ন্যূনতম ঐতিহ্য সহ্য করতে পারে না। এরা বাংলাভাষার স্বকীয়তা রক্ষার নামে শতাব্দীকাল ব্যাপী চলে আসা প্রচলিত আরবি ফার্সি উর্দু শব্দের বিরুদ্ধে যেমন সোচ্চার, এর বিপরিতে ঠিক এরাই আবার বাংলাভাষার সঙ্গে ইংরেজি মিশিয়ে ভাষার স্বকীয়তা নষ্ট করে জগাখিচুড়ি মার্কা ভাষা সৃষ্টি করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ইসলাম বিদ্বেষী এই বাম সাংবাদিকতা রুখতে সঠিক ধারার বিশ্বাসীদের সাংবাদিকতা চর্চার কোনো বিকল্প নেই।
৩. সাংবাদিককে জাতির বিবেক বলা হয়। বলাবাহুল্য সেটা অবশ্যই বস্তু নিষ্ঠ সাংবাদিক। বস্তনিষ্ঠ সাংবাদিকতার জন্য পেশাদারিত্ব দক্ষতা অর্জনের বিকল্প নেই। আদর্শ ও পেশাদার সাংবাদিক যেমন জাতির বিবেক তদ্রূপ আত্মবিকৃত ও লেজুড়বৃত্তিক সাংবাদিকতা জাতির ক্যান্সার তুল্য। এজন্য সাংবাদিকতা চর্চার তৃতীয় মৌলিক লক্ষ্য উদ্দেশ্য হলো, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচার করা।
পরিশেষে আমার মনে হয়, এই তিনটি মৌলিক লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়েই দেশের প্রথমধারার ইসলামী অনলাইন পত্রিকা ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ইনসাফ গতানুগতিক ধারার বাইরে নিজেদের স্থির একটি লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়েই যাত্রা আরম্ভ করে। ইনসাফ তার অভীষ্ট লক্ষ্য পানে দূর্বার গতিতে এগিয়ে চলুক। উত্তরোত্তর সফলতার শীর্ষে উত্তীর্ণ হোক এই দোয়া করি। সেই সঙ্গে ইনসাফের দক্ষ ও কর্মঠ সম্পাদক সাইয়েদ মাহফুজ খন্দকার ভাইয়ের সুস্থতাসহ দীর্ঘ নেক হায়াত কামনা করছি।
মুহাম্মাদ এহসানুল হক | শিক্ষক, জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া ও সহকারী সম্পাদক, মাসিক রাহমানী পয়গাম
বর্তমান সময়টা প্রযুক্তি নির্ভর। মানুষের সব প্রয়োজন এখন অনলাইনেই পূরণ হয়। করোনা পরবর্তী বিশ্বে এই নির্ভরতা হয়তো আরও বাড়বে। সংবাদ মাধ্যম হিসেবে প্রিন্ট মিডিয়ার জায়গাও এখন দখলে নিচ্ছে অনলাইন গণমাধ্যমগুলো। অনলাইল পত্রিকার চাহিদাও বাড়ছে দিন দিন।
সত্যকে জানার এবং সত্যের পক্ষে লড়াইয়ে মিডিয়ার কোন বিকল্প নেই। মিডিয়ার প্রয়োজনীয়তা কেউ অস্বীকার না করলেও বাস্তবতা হলো, মিডিয়া জগতে ইসলামপন্থীদের কোন বন্ধু নেই। ইসলাম ও আলেম উলামাদের পক্ষে ভূমিকা রাখার মতো গণমাধ্যম নেই। এটা অনেক বড় শূণ্যতা। দুঃখজনক হলেও সত্য এই শূন্যতা পূরণে কার্যকর কোন উদ্যোগও কখনো নেয়া হয়নি।
এমন সংকট মোকাবেলা করেও সাধ্যের সবটুকু দিয়ে ইসলামপন্থীদের পক্ষে যারা ভুমিকা রাখছে তার মধ্যে প্রধানতম হলো, ইনসাফ। দেশের হক্কানী উলামায়ে কেরামের পক্ষে, এবং যে কোন বাতিল বিরোধী আন্দোলনে ইনসাফের ভুমিকা সবসময়ই বলিষ্ঠ। এটা আমার ভালো লাগার কারণ।
ইনসাফ অর্ধযুগ পার করেছে। একটি ইসলামি পত্রিকা এতদিন টিকিয়ে রাখা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। ইনসাফ সেটা সফলতার সাথেই করতে পেরেছে। সেজন্য তাদের পত্রিকার সম্পাদকমন্ডলি, লেখক, পাঠক সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে ইনসাফের অগ্রযাত্রা আরও গতিময় হোক এই কামনা করি।
জিয়াউল আশরাফ | নির্বাহী সম্পাদক : জাতীয় শিশু-কিশোর পত্রিকা মাসিক নকীব
ছোটবেলা থেকেই পত্রিকা পড়ার প্রতি একটা নেশা ছিলো। সে সময়ে কয়েকটি মাসিক ও দুটি সাপ্তাহিক পত্রিকা ছিলো আমাদের। আমাদের বলতে ইসলামী ধারার, যে পত্রিকাগুলো আমাদের কথা বলতো। কিন্তু কোন দৈনিক নেই! কিংবা অনলাইন পত্রিকাও ছিলো না। সংবাদ পড়ার তুমুল আগ্রহ। তাজা নিউজ পড়ার একটি তীব্র তৃঞ্চা। কিন্তু তাজা নিউজ পড়ার কোন মাধ্যম ছিলো না। বাসি নিউজ পড়েই তৃঞ্চা নিবারণ করতাম।
এখন সময় বদলেছে- আলহামদুলিল্লাহ, এখন আমাদের অনেক পত্রিকা। আছে শক্তিশালী অনলাইন। যে অনলাইন থেকে নিয়মিত পাচ্ছি টাটকা খবরাখবর।
এই তাজা নিউজ পড়তে পারা বা তৃঞ্চা নিবারণে সর্বপ্রথম এগিয়ে আসে ইনসাফ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ইসলামিক অঙ্গনে সর্বপ্রথম নিউজ পোর্টাল। ইনসাফ টোয়েন্টিফোর ডটকম- জন্ম থেকেই তারা বস্তুনিষ্ট নিউজ করে আসছে। সাহসের সাথে তুলে আনছে সমাজের অন্যায়-অবিচারের সকলখবর। অসংগতিগুলো বিশ্লেষণ করছে সময়ের আয়নায়। প্রতিদিন তুলে ধরছে আমাদের সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির চিত্র। দক্ষতার সাথে চিত্রায়িত করছে আমাদের জীবনযাত্রার প্রতিটিক্ষণ। প্রতিটি রিপোর্ট ও ফিচার সাক্ষি হচ্ছে সময়ের।
অবশ্যই এর পিছনে আছে সংবাদ কর্মীদের নিরলস চেষ্টা। আর যিনি এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন- তিনি আমার-আমাদের প্রিয় মানুষ ইনসাফ টোয়েন্টিফোর ডটকমক এর সম্পাদক সাংবাদিক খন্দকার মাহফুজুর রহমান। তার নিজ প্রতিভা ও পরিচালনার দক্ষতায় আজ পত্রিকাটি সবার আস্থা অর্জন করেছে।
নিউজ পোর্টালের পাশাপাশি ইনসাফের বিশেষ আলোচিত ও আলোকিত একটি অনুষ্ঠান ইনসাফ-শো। ভিডিও সংবাদ পরিবেশন অবশ্যই পাঠকের জন্য নতুন চমক।
মাদরাসার ছাত্রদেরকে সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় উৎসাহিত করার পেছনেও ইনসাফ পরিবারের আন্তরিকতা প্রশংসার দাবি রাখে। প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীসহ বিশেষ দিবসে প্রিন্টভার্সন পত্রিকাপ্রেমিদের জন্য নতুন উপহার।
ইনসাফ তার বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে টিকে থাকবে পাঠকের হৃদয়ে। সততা ও নিষ্ঠায় জয় করবে মানুষের মন। শুধু একবছর দুবছর বা ছয়বছর নয়- যুগযুগ ধরে তুলে ধরবে দেশ-বিদেশ, মানুষ ও মানবতার বাস্তবচিত্র। কাজ করবে- দেশ, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও মানুষের কল্যাণে। অটল থাকবে ইসলামী নীতি-আদর্শে। আজকের এই শুভক্ষণে ইনসাফকে জানাই আমাদের হৃদয়ের ভালোবাসা। শেষে বলবো সবার আগে এসেছেন! সবার আগে থাকুন- থাকুন সত্যান্বেষী সবার প্রিয় হয়ে।
এক দশক আগেও আজকের কোনো খবর জানতে আমাদের অপেক্ষা করতে হতো পরদিন সকাল পর্যন্ত। একটি সংবাদের বিস্তারিত জানতে আমাদের অপেক্ষা করতে হতো প্রায় ২৪ ঘণ্টা। কিন্তু সেই দিন এখন আর নেই। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে আমরা এখন খরব পেয়ে যাই। দ্রুততার সঙ্গে খবর পাওয়ার মূল মাধ্যম হচ্ছে অনলাইন গণমাধ্যম। টেলিভিশনেও আমরা দ্রুততার সঙ্গে খবর পাই। তবে এতোটা বিস্তারিতভাবে পাই না। তাছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিস্তৃতি বাড়ার কারণে সেখানেও অনেক সংবাদ তাৎক্ষণিকভাবে চলে আসে। তবে এর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থাকে। এজন্য অনলাইন পত্রিকাগুলোই এখন আমাদের দ্রুত সংবাদ পাওয়ার প্রধান মাধ্যম।
বেশ কয়েক বছর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক জরিপে দেখা গেছে, প্রতি ১০ জনের মধ্যে ছয়জনই সংবাদ পেতে অনলাইন পোর্টালের দ্বারস্থ হন। আর বাকি চার ভাগ অন্যান্য গণমাধ্যমের দ্বারস্থ হন। এর দ্বারাই বোঝা যায় অনলাইন সংবাদমাধ্যম কতটা প্রভাব বিস্তার করেছে বর্তমান বিশেষ। পঞ্চাশের দশকে ইন্টারনেট আবিষ্কার হলেও সর্বপ্রথম অনলাইন সংবাদপত্র প্রকাশিত হয় ১৯৭৪ সালে, যার নাম ছিল নিউজ রিপোর্ট। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সংবাদপত্র তাদের ছাপা সংস্করণের পাশাপাশি অনলাইন সংস্করণ চালু করে। তাছাড়া ইন্টারনেটের ক্রমান্বয়ে বিস্তৃতির ফলে শুধু অনলাইনেও অনেক সংবাদপত্র প্রকাশিত হচ্ছে। বর্তমানে অর্থনৈতিক সংকটসহ বিভিন্ন কারণে উন্নত বিশ্বের অনেক প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী পত্রিকা তাদের ছাপা সংস্করণ বাদ দিয়ে শুধু অনলাইন সংস্করণ প্রকাশ করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে।
আমাদের দেশে অনলাইন সংবাদমাধ্যমের যাত্রাটা খুব বেশি দিন আগের নয়। ২০০৫ সালে সর্বপ্রথম বিডিনিউজের মাধ্যমে অনলাইনের যাত্রা শুরু হয়। ২০১০ সাল পর্যন্ত হাতে গোনা দুই চারটি অনলাইন পোর্টাল ছিল। ২০১১ সাল থেকে মূলধারার বেশ কয়েকটি অনলাইন পোর্টাল আত্মপ্রকাশ করে। পরে ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই পোর্টালের সংখ্যা বাড়তে থাকে। বিশেষ করে মোবাইলফোন ইন্টারনেটের বিস্তৃতির সঙ্গে সঙ্গে নিউজপোর্টালের সংখ্যা বেড়েছে অনেক দ্রুত। দেশে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০ কোটি ছাড়িয়েছে। যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন তাদের বেশির ভাগই অনলাইন নিউজ পোর্টালের নিয়মিত পাঠক।
অল্প সময় হলেও আমাদের দেশে অনলাইন নিউজপোর্টালের সংখ্যাটা বেড়েছে বিস্ময়করভাবে। গত কয়েক বছরে দেশে এক হাজারের বেশি অনলাইন পত্রিকা হয়েছে। যদিও এর বেশির ভাগই ভুঁইফোঁড়। মোটামুটি পেশাদারিত্ব বজায় রেখে টিকে আছে এমন অনলাইন পত্রিকার সংখ্যা শ’য়ের কোটা পেরোবে না। অনলাইন পত্রিকার সংখ্যাটা এভাবে রাতারাতি বাড়ার কারণ হলো এটি শুরু করা অনেক সহজ। মোটামুটি এক হাজার টাকা দিয়ে একটি ডোমেইন কিনে কয়েক হাজার টাকা খরচ করে একটি সাইট তৈরি করলেই হয়। বেশির ভাগ সাইটে নিজস্ব কনটেন্ট থাকে খুবই কম। মূলধারার গণমাধ্যমগুলো থেকে কপি করাই তাদের কাজ। অনলাইন পত্রিকার অস্বাভাবিক এই বেড়ে যাওয়ার কিছু ক্ষতিকর দিকও আছে। এর কারণে একটি নৈরাজ্য সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক এ ধরনের অনলাইন পত্রিকা খুলে মানুষকে ব্ল্যাকমেইল করছে বলেও অভিযোগ আছে। এছাড়াও নানা গুজব ছড়ানোর ক্ষেত্রে এসব পোর্টাল বিশেষ ভূমিকা রাখছে। এজন্য সরকার অনেক দিন ধরে একটি অনলাইন নীতিমালা প্রণয়ন এবং অনলাইন পত্রিকাগুলো নিবন্ধনের আওতায় আনার চেষ্টা করছে। যদিও এখনও সেই নীতিমালাটি আলোর মুখ দেখেনি। এই নীতিমালার মাধ্যমে সরকার অনলাইন গণমাধ্যমের বিকাশ রুদ্ধ করতে চায় বলে কারও কারও অভিযোগ আছে। তবে বাস্তবতা হলো, ন্যূনতম একটি নীতিমালা থাকা উচিত। কারণ না হলে এই অঙ্গনে যে নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে তাতে ভুগতে হবে সবাইকে। তাছাড়া এর কারণে মানসম্পন্ন ও পেশাদার সাইটগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
অনলাইন পত্রিকাগুলোর কিছু ভালো দিক আছে। যেমন এখানে সাধারণত পাঠকদের কোনো খরচ নেই। ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে যেকোনো পত্রিকা ফ্রি পড়তে পারেন। অনলাইন মিডিয়া করা তুলনামূলক খরচ অনেক কম। বর্তমানে মিডিয়ার নাম নিলেই যেখানে কোটি কোটি টাকার প্রয়োজন সেখানে অনলাইন লাখের কোঠাতেও করা সম্ভব। অনলাইনে সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে অতি দ্রুত। অনলাইনের কারণে এখন আর কোনো সংবাদ গোপন করার সুযোগ নেই। অনলাইনের কারণে সংবাদপত্র শিল্প আরও বিকশিত হচ্ছে। অনলাইন মিডিয়ার বিস্তৃতির কারণে ব্যাপক হারে সাংবাদিক সৃষ্টি হচ্ছে; অনেকের কর্মসংস্থান হচ্ছে।
তবে এর কিছু নেতিবাচক দিকও আছে। অনলাইন সাংবাদিকতায় প্রতিযোগিতা বেশি, এজন্য ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য বেশি প্রচারিত হয়। পাঠককে আকৃষ্ট করার জন্য অনেকে নীতি-নৈতিকতা পরিপন্থি কাজ করেন। টিকে থাকার জন্য কেউ কেউ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ব্লাকমেইল করে বিজ্ঞাপন আদায় করেন। দ্রুততার কারণে অনলাইন সাংবাদিকতায় সারবত্তা ও কোনো বিষয়ের গভীরে যাওয়ার প্রবণতা কম। কোনো নীতিমালা না থাকার কারণে ব্যাঙের ছাতার মতো অনলাইন পত্রিকা জন্ম নিচ্ছে। এগুলো নানাভাবে পাঠককে বিভ্রান্ত করছে। অনলাইন সংবাদের ওপর পাঠক পুরোপুরি আস্থাশীল হতে পারে না। সর্বোপরি অনলাইনে সৃজনশীলতার চেয়ে কপি-পেস্টের প্রবণতা বেশি।
সবকিছুর পরও তরুণ প্রজন্মের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে অনলাইন পত্রিকাগুলো। কারণ এর কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন যেকোনো ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই রেডিও টিভির মতো এতে প্রকাশ করা যায়। এমনকি রেডিও টিভি ঘটনার বিস্তারিত জানাতে না পারলেও অনলাইনে তা সম্ভব। অনলাইনে প্রকাশিত রিপোর্টের স্থায়িত্ব অনেক বেশি। প্রকাশিত রিপোর্টগুলো আর্কাইভ করে রাখার ব্যবস্থা থাকায় তা যেকোনো সময় দেখা যায়। অন্য যেকোনো মিডিয়ার (প্রিন্ট, রেডিও ও টিভি) চেয়ে এটা খুঁজে বের করা অনেক সহজ। অনলাইন সংবাদপত্রে লেখার পাশাপাশি গ্রাফিক্স, অডিও, গান, ভিডিও ফুটেজ ও অ্যানিমেশন সংযুক্ত করা সম্ভব। ফলে এটা উপভোগ্য হয়ে ওঠে। তাছাড়া অনলাইন সাংবাদিকতা একটি ইন্টার-অ্যাকটিভ প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে পাঠকের মতামত জানা ও পাঠককে নিজের মতামত দ্বারা প্রভাবিত করার সুযোগ রয়েছে। এখানে একটি লেখার সঙ্গে একই বিষয়ের অন্যান্য লিংকও দেয়া যায়। ফলে পাঠক খুব সহজেই একই বিষয়ে অন্যান্য লেখা সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে পারে।
অনলাইনের আরেকটি বড় সুবিধা হলো এখানে জায়গার কোনো সমস্যা নেই। কিংবা রেডিও টিভির মতো সময়েরও সীমাবদ্ধতা নেই। ফলে একজন অনলাইন সাংবাদিক তার স্টোরিকে বিভিন্ন তথ্যে সমৃদ্ধ করে প্রকাশ করতে পারেন। আবার প্রিন্ট মিডিয়ায় একবার প্রকাশিত হয়ে গেলে তা আর সংশোধনের সুযোগ থাকে না। কিন্তু অনলাইনে এ ধরনের কোনো সমস্যা নেই। এ জগতের সাংবাদিকরা ঘটনা ঘটার সঙ্গেই তা আপডেট করে দিতে পারেন। ভুলভাল কিছু চলে গেলে তা সংশোধনেরও সুযোগ পান।
জেনারেল ধারার অনলাইন পত্রিকার পাশাপাশি গত কয়েক বছর ধরে ইসলামি ধারার বেশ কয়েকটি অনলাইন পত্রিকাও বাজারে এসেছে। সম্ভবত এগুলোর মধ্যে ইনসাফ সবার আগে যাত্রা শুরু করেছে। আলেম-উলামাদের যেখানে কোনো মিডিয়াই ছিল না সেখানে এই পোর্টালগুলো তাদের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। যেহেতু এই অঙ্গনে অনেকগুলো অনলাইন পত্রিকা ইতোমধ্যে হয়ে গেছে এজন্য তাদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতাও আছে। তবে এই প্রতিযোগিতাটা নেতিবাচক কিছু নয়, এগিয়ে যাওয়ার জন্য এটা দরকার। শুনেছি পোর্টালগুলোর সম্পাদকরা মাঝে একসঙ্গে বসেছিলেন। সত্যিই আশা জাগানিয়া খবর। তাদের প্রতি পারস্পরিক যোগাযোগটা আরও বাড়ানোর প্রত্যাশা রাখি। সংশ্লিষ্টদের মনে রাখতে হবে, আপনাদের প্রতিযোগিতাটা নিজেদের মধ্যে যত না এর চেয়ে অনেক বেশি বাইরের জগতের সঙ্গে। সেই প্রতিযোগিতাটা আদর্শের। সুতরাং নিজেদের মধ্যে যেন অসুস্থ প্রতিযোগিতার সৃষ্টি না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
ইসলামি ধারার যে অনলাইন পত্রিকা ইতোমধ্যে বাজারে এসেছে প্রায় সবাই সংকটে আছে। প্রধান সংকটটা অর্থনৈতিক, আর দ্বিতীয় সংকটটা হলো যোগ্য লোকের অভাব। বড় আকারে মিডিয়া করার আগে ইসলামপন্থীদের উচিত ছোট ছোট এই উদ্যোগগুলো টিকিয়ে রাখা। প্রতিযোগিতার বাজারে তারা যেন টিকতে পারে সে ব্যাপারে তাদের সহযোগিতা করা। কোনো ধরনের সহযোগিতা না করে পান থেকে চুন খসলেই সমালোচনার তীরে বিদ্ধ করা উচিত নয়। আজ ছোট ছোট উদ্যোগগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা দিলে একদিন বড় উদ্যোগও বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
আমাদের মিডিয়া নেই এই আক্ষেপ অনেক শুনেছি। যারা এই আক্ষেপগুলো করেন ছোটখাট উদ্যোগগুলো টিকে থাকার জন্য তারা কী ভূমিকা রেখেছেন? জানি, সেটা খুঁজতে গেলে হতাশ হতে হবে। এজন্য আমরা চাই না আর হতাশ হতে। আসুন আমরা প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ইসলামি মিডিয়ার ছোটখাট উদ্যোগগুলোকে যথাসাধ্য সহযোগিতা করি। এভাবেই একদিন কাঙ্ক্ষিত মিডিয়া গড়তে পারবো এবং মিডিয়া নিয়ে আমাদের আক্ষেপ ঘুচে থাকবে।
ইনসাফের ষষ্ঠ বছর পূর্তিতে অনলাইন পত্রিকাটির সম্পাদকসহ সংশ্লিষ্ট সবার জন্য রইল শুভকামনা। ইনসাফ শতায়ু হোক সেই প্রত্যাশা রইল।