ক্ষমতা দখল করা মিশরের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জেনারেল সিসি কর্তৃক সংঘটিত মুরসি বিরোধী সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়ে গ্রেফতার হওয়া মিশরীয়-ব্রিটিশ মানবাধিকার কর্মী ও লেখক আলা আব্দুল ফাত্তাহকে ক্ষমা ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) দেশটির বিতর্কিত ও স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্ট তাকে ক্ষমার ঘোষণা দেয়।
মিশরের গণমাধ্যমে জানানো হয়, জাতীয় মানবাধিকার কাউন্সিলের আপিলের পর ২০১৫ সালে আটক হওয়া মিশরীয়-ব্রিটিশ মানবাধিকার কর্মী ও লেখক আলা আব্দুল ফাত্তাহকে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে, যা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে।
মিশরীয়-ব্রিটিশ এই এক্টিভিস্ট ২০১১ এর আরব বসন্তে মিশরের স্বৈরাচারী শাসক হোসনি মোবারকের পতন ও ইখওয়ান নেতা শহীদ মুহাম্মদ মুরসির নির্বাচনী উত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি মিশরের আরব বসন্তে অবদান রাখা শীর্ষ ব্লগার ছিলেন।
২০১৯ সালে জুডিশিয়াল হত্যাযজ্ঞের শিকার কুদস প্রেমিক মিশরের ইতিহাসের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট শহীদ মুহাম্মদ মুরসি ২০১২ সালে জনগণের বিপুল সমর্থন ও ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসলেও তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল সিসি (বর্তমান প্রেসিডেন্ট) কর্তৃক সেনা অভ্যুত্থানের কবলে পড়ে ২০১৩ সালের জুলাইয়ে ক্ষমতাচ্যুত হোন। ২০১৪ সালে প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে মিশরের ক্ষমতায় আসেন প্রেসিডেন্ট, জেনারেল সিসি। অপরদিকে মুরসির বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপও জোরদার করেছিলেন।
মিশরীয়-ব্রিটিশ এক্টিভিস্ট আলা আব্দুল ফাত্তাহ এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে জনমত ও আন্দোলন জোরদার করতে এবং মুরসিকে মুক্ত করতে তার ব্লগিং দক্ষতা ও জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছিলেন। যার ফলে তাকে প্রথমে অন্যায়ভাবে আটক করা হয় এবং পরবর্তীতে ২০১৫ সালে ৫ বছর কারাদণ্ডের সাজা শুনানো হয়। এই সাজার পেছনে মিথ্যা সংবাদ ছড়ানোকে কারণ হিসেবে দেখানো হয়। ২০১৩ সালে মুরসির পক্ষে সংঘটিত সেনা অভ্যুত্থান বিরোধী বিক্ষোভে তিনি মিশরের বিক্ষোভ আইন ভঙ্গ করেছেন বলেও অভিযোগ আনা হয়।
২০১৯ সালের মার্চ পর্যন্ত বন্দী থাকার পর প্রবেশনে মুক্তি পেলেও ৬ মাসের মধ্যে পুনরায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে ২০২১ সালে মিথ্যা সংবাদ ছড়ানোর অভিযোগ এনে পুনরায় ৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
সিসি সরকারের এমন কর্মকাণ্ডে ব্রিটেন ও তুরস্ক সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা বিভিন্ন সময়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। অবিলম্বে গণতন্ত্রবাদী এই মানবাধিকার ও সমাজকর্মী ব্লগারের মুক্তি কামনা করে। আব্দুল ফাত্তাহ নিজেও কারাগারে বিভিন্ন সময় এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে অনশন করে প্রতিবাদ জানান।
আব্দুল ফাত্তাহর পরিবার এও জানিয়েছিলো যে, মুক্তির লক্ষ্যে তাদের সন্তান মিশরের নাগরিকত্ব ত্যাগ করতেও রাজি আছেন।
সূত্র: আল জাজিরা