রাষ্ট্রীয়ভাবে কাদিয়ানীদের ‘সংখ্যালঘু অমুসলিম’ ঘোষণার দাবিতে ঐতিহাসিক ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খতমে নবুওয়ত মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলন থেকে ৬ দফা ঘোষণা করা হয়।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) মহাসম্মেলন থেকে এই ঘোষণা পত্র পাঠ করেন বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ইসলাম ধর্মের মৌলিক আকিদা ‘খতমে নবুয়ত’কে অস্বীকার করার কারণে কাদিয়ানীরা মুসলিম উম্মাহর সর্বসম্মতিক্রমে ইসলাম বহির্ভূত কাফের বা অমুসলিম। তাই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম নাগরিকের ধর্মীয় স্বাতন্ত্র্য ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং দেশের অভ্যন্তরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রাখতে অবিলম্বে এই ঘোষণা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে।
ঘোষণাপত্রে আহমদিয়া মুসলিম জামাত নামে পরিচিত কাদিয়ানীদের জন্য ধর্মীয় আচার-আচরণ সংক্রান্ত ছয়টি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দেওয়া হয়:
১. অমুসলিম ঘোষণা: আহমদিয়া মুসলিম জামাত নামধারী তথাকথিত কাদিয়ানী সম্প্রদায় ইসলামের দৃষ্টিতে কাফের সংখ্যালঘু অমুসলিম। তারা ‘আহমদিয়া মুসলিম জামাত’ নামে নিজেদের পরিচয় দিতে পারবে না এবং সব ক্ষেত্রে ‘কাদিয়ানি সম্প্রদায়’ নামে পরিচিত হবে।
২. ইসলামি পরিভাষা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা: কাদিয়ানীরা তাদের ধর্মকে ইসলাম আখ্যায়িত করতে পারবে না এবং কালিমা, নামাজ, রোজা, যাকাত, আজান, ঈদ, কোরবানি ইত্যাদি কোনো ইসলামী পরিভাষা ব্যবহার করতে পারবে না।
৩. উপাসনালয় ও নিদর্শন: কাদিয়ানীরা তাদের উপাসনালয়কে মসজিদ নামকরণ করতে পারবে না। সেটি ‘কাদিয়ানী উপাসনালয়’ হিসেবে পরিচিত হবে। এছাড়া সাহাবি, উম্মুল মুমিনিন-এর মতো কোনো ইসলামী বিশেষ নিদর্শন তারা ব্যবহার করতে পারবে না।
৪. বিবাহ সম্পূর্ণ হারাম: কাদিয়ানীদের সঙ্গে মুসলমানের বিবাহ ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণরূপে হারাম। পরিচয় গোপন করে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৫. জানাজা ও উত্তরাধিকার: কাদিয়ানীদের জানাজা পড়া যাবে না এবং কবরস্থানে তাদের লাশ দাফন করা যাবে না। কাদিয়ানি ও অমুসলমানের মাঝে কোনো উত্তরাধিকারের বিধান প্রযোজ্য হবে না।
৬. প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞা: কাদিয়ানীরা ইসলাম প্রচারের নামে কোরআনের বিকৃত অনুবাদ কিংবা কোনো বই, পুস্তিকা, লিফলেট ইত্যাদি ছাপতে বা প্রচার করতে পারবে না।
ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিকের ধর্ম ইসলামের সুরক্ষা, কাদিয়ানীদের সংখ্যালঘু অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রাখার স্বার্থে অবিলম্বে উপরোক্ত ঘোষণা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে।
ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়, মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানির অনুসারী এই সম্প্রদায়কে আন্তর্জাতিকভাবে অমুসলিম ঘোষণার নজির বহু নজির আছে। ১৯৭৪ সালে পাকিস্তান জাতীয় সংসদ সাংবিধানিকভাবে কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করেছে। একই সঙ্গে মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগ (রাবেতা আলমে ইসলামী) এবং ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) সর্বসম্মতিক্রমে কাদিয়ানীদের কাফের ও মুরতাদ অমুসলিম ঘোষণা করেছে। সৌদি আরব, মিশর, ইরান, কুয়েত, কাতারসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে কাদিয়ানি মতবাদকে কুফরি মতবাদ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। ব্রিটিশ ভারতের লাহোর হাইকোর্ট, পাকিস্তানের ফেডারেল শরিয়া কোর্ট এবং বাংলাদেশের উচ্চ আদালত একাধিক রায়ে কাদিয়ানী মতবাদকে ইসলামবিরোধী ঘোষণা করেছে।
সম্মেলন থেকে দেশবাসীসব সব মুসলমানের প্রতি এই সম্প্রদায়ের সঙ্গে মুসলিমসুলভ আচরণ পরিহার করার আহ্বান জানানো হয়। এর মধ্যে রয়েছে, তাদের উপাসনালয়ে নামাজ না পড়া, বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন না করা, সালাম না দেওয়া এবং তাদের পণ্য বয়কট করা।
খতমে নবুয়ত হলো ঈমানের ভিত্তি এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের কেন্দ্রবিন্দু—এই বিশ্বাসে দৃঢ় থেকে মহাসম্মেলন থেকে নেতৃবৃন্দ জানান, তারা শান্তিপূর্ণ ও সাংবিধানিক উপায়ে তাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখবেন। তারা কোনো সম্প্রদায় বা ব্যক্তির প্রতি বিদ্বেষ বা সহিংসতা নয়, বরং ন্যায় ও যুক্তির মাধ্যমে ইসলামের মূল আকিদা রক্ষার আহ্বান জানান।









