হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির এক বিশেষ জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ রোববার (১১ এপ্রিল) ১১ টায় হাটহাজারী মাদরাসার মিলনায়তনে হেফাজতের প্রধান উপদেষ্টা আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর সভাপতিত্বে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সরকারের কাছে একাধিক দাবি তুলে ধরেছেন হেফাজত আমীর আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। এছাড়া আগামী ২৯ মে হাটহাজারী মাদরাসায় জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ সম্মলন ঘোষণা করেন তিনি।
হেফাজত আমীরের ঘোষিত দাবিগুলো হলো,
১.হেফাজতের নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। ২.অন্যায়ভাবে গ্রেফতারকৃত সকল নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে নিঃশর্তে মুক্তি দিতে হবে। ৩.করোনার অজুহাতে কওমী মাদরাসা বন্ধের ঘোষণা প্রত্যাহার করে কওমী মাদরাসা লকডাউনের আওতা মুক্ত রাখতে হবে। ৪.পবিত্র রমজান মাসে খতমে তারাবী, এতেকাফসহ কোন ধরনের ইবাদতে বাধা প্রধান করা যাবে না। এবং ধর্মীয় উপসনালয় মসজিদকে সম্পুর্ন লক ডাউনের আওতা মুক্ত রাখতে হবে। ৫.প্রশাসন কর্তৃক মাদরাসায় মাদরাসায় গিয়ে তথ্য সংগ্রহের নামে হয়রানি বন্ধ করতে হবে।
হেফাজতের জরুরি বৈঠক শেষে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, বিগত ২৬ই মার্চ হেফাজতের কোনো কর্মসুচি ছিলো না। কিন্তু ঢাকা বায়তুল মোকাররম মসজিদে মুসল্লিদের উপর পরিকল্পিতভাবে পুলিশ ও সরকার দলীয় হেলমেট বাহিনী কর্তৃক আক্রমনের প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্ষুদ্ধ জনতা মিছিল বের করে। হাটহাজারী ও বি-বাড়ীয়ায় মিছিল বের হলে পুলিশ বিনা উস্কানিতে গুলি করে পাঁচ জনকে শহীদ করে। এ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলাম ২৭ই মার্চ বিক্ষোভ ও ২৮ই মার্চ শান্তিপুর্ণ হরতালের কর্মসুচি ঘোষণা করে। কিন্তু হেফাজতের শান্তিপূর্ণ কর্মসুচিতে ২১ জনকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ ও সরকার দলীয় ক্যাডার বাহিনী। গত ২৬ মার্চ আমি মাদরাসায় ছিলাম না। অনেক দূরে ছিলাম। কিছু মানুষ মিছিল বের করেছে। তারা বলছে আমরা শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করেছি। কিন্তু পুলিশবাহিনী তাদের উপর গুলি চালিয়ে আহত ও নিহত করে। পুলিশ তাদের বুকে গুলি করেছে। পুলিশের দরকার ছিলো উত্তেচজনা কমাতে হাঁটুর নিচে গুলি করবে। আগুন জ্বলে ওঠলে আগুন নিভাতে হয়। কিন্তু পুলিশ আগুন বাড়িয়ে দিলো। এগুলো কোন আইনে আছে।
আল্লামা বাবুনগরী বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, হেফাজত কোনো তাণ্ডব চালায়নি; বরং ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের সন্ত্রাসীরদের দিয়ে গুপ্ত হামলার তাণ্ডব চালিয়ে রাজনৈতিকভাবে এখন হেফাজতকে দোষারোপ করা হচ্ছে। সরকারের লোকজন এবং কতিপয় ইসলাম বিদ্বেষী মিডিয়া এখন আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নিয়ে মিথ্যাচার করছেন।
হেফাজত আমীর বলেন, আমরা জানতে চাই, আমাদের শান্তিপূর্ণ হরতাল চলাকালীন কারা তাণ্ডব চালিয়েছিল? কারা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে, নিশ্চয়ই সেখানকার সিসি ক্যামেরাগুলোতে ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তির ব্যবস্থা করুন। কিন্তু নিরিহ আলেম, ওলামা, মাদরাসা ছাত্র ও তৌহিদী জনতাকে হয়রানি করবেন না। অবিলম্বে গণগ্রেফতার বন্ধ করুন। মিথ্যা ও হয়রানী মুলক মামলা প্রত্যাহার করুন। যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে অবিলম্ভে নিঃশর্তে মুক্তি দিন।
তিনি বলেন, করোনার অজুহাতে দেশের ঐতিহ্যবাহী কওমী মাদরাসা বন্ধ করার ষড়যন্ত্র দেশের তৌহিদী জনতা মেনে নেবে না। করোনা মহমারী থেকে মুক্তির জন্য মহান আল্লাহর দরবারে কুরআনের তিলাওয়াত, যিকির, তাসবী পাঠ ও দুআ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তাফসির, দুআ ইত্যাদী চললে আল্লাহর রহমত বর্ষিত হবে। মানুষকে রমজানে শান্তিপূর্ণভাবে রোজা রাখার সুযোগ দিতে হবে। মাহে রমজানে কওমী মাদরাসাগুলো খোলা রাখতে হবে। লকডাউন দিয়ে কওমী মাদরাসা বন্ধ করা যাবে না। কওমী মাদরাসা না থাকলে বাংলাদেশ স্পেনের মতো হয়ে যাবে। সুতরাং মহান আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার লক্ষে কুরআন ও হাদীসের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো চালু রাখ সরকারেরই নৈতিক কর্তব্য। এজন্য পবিত্র মাহে রমযানে হিফয খানা, নূরানী, মক্তব চালু রাখতে হবে। মসজিদে সুন্নাহ মুতাবেক নামায তারাবীহ, ইতিকাফ চলবে। লকডাউনের নামে শরীয়ত বিরোধী কোনো বিধি-নিষেধ আরোপ করা যাবে না। যথা নিয়মে তাফসীর, দাওয়াত ও তালীমের কাজ চালু রাখতে হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের যে বিষয়টি নিয়ে এখন সর্ব মহলে আলোচিত হচ্ছে এটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। আর হেফাজত থেকে তার অব্যাহতির বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।
তিনি আরো বলেন, হেফাজতে ইসলাম আগামী ২৯ মে হাটহাজারীতে জাতীয় উলামা মাশায়েখ সম্মেলন করবে। এখানে সারাদেশের পীর মাশায়েখ ও হেফাজতের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে এমন আলেম উলামা উপস্থিত থাকবেন, ইন-শা আল্লাহ।
সভায় দেশের সকল মাদরাসা ও মসজিদে করোনা মহামারী থেকে মুক্তি ও সমকালীন সঙ্কট থেকে উত্তরনের জন্য কুনূতে নাযেলার আমল চালু করার জন্য আহ্বান জানান আল্লামা বাবুনগরী।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন হেফাজতের নায়েবে আমীর মাওলানা হাফেজ তাজুল ইসলাম, মাওলানা আব্দুল আওয়াল, মাওলানা জুনায়েদ আল-হাবীব, মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া, মাওলানা সালাহ উদ্দিন নানুপুরী, মাওলানা শোআইব জমীরী, মাওলানা ওমর মেখলী, মাওলানা নাসির উদ্দিন মুনির, মাওলানা খুরশিদ আলম কাসেমী, মাওলানা জসিম উদ্দিন, মাওলানা মুনির হুসাইন কাসেমী, মুফতী সাখাওয়াত হুসাইন রাজী, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা মীর মুহাম্মদ ইদরীস, মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়জী, ড. নূরুল আবসার আজহারী, মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন. মাওলানা ফয়সাল আহমদ, মাওলানা ইলিয়াস হামিদী, মুহাম্মাদ আহসান উল্লাহ প্রমুখ।