শুক্রবার | ৪ জুলাই | ২০২৫

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা ইসলামী শাসনব্যবস্থার মূল ভিত্তি: আফগান আমীরুল মু’মিনীন

spot_imgspot_img

ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের আমীরুল মু’মিনীন বা সর্বোচ্চ নেতা মাওলানা হেবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা বলেছেন, ন্যায়ের বিচারকাজ ইসলামী শাসনব্যবস্থার মূল ভিত্তি। তিনি বলেন, ন্যায়ের মাধ্যমে বিচারকাজ পরিচালিত হলে সমাজে ফিতনা-ফাসাদ দূর হয়, মানুষের জান-মাল ও ইজ্জত রক্ষা পায় এবং ইসলামী শাসনব্যবস্থা শক্তিশালী হয়।

কান্দাহারে বিচারক বা ক্বাজীদের  নিয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।

মালানা হেবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা বলেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই বিচারকাজ করতেন, শরিয়তের হুকুমসমূহ বর্ণনা করতেন, রায় কার্যকর করতেন এবং শারঈ সীমারেখা বাস্তবায়ন করতেন। বিচারকাজ ইসলামী শাসনব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। আদালতের মাধ্যমে মানুষের জীবন, সম্পদ ও সম্মান রক্ষা করা হয়। ন্যায়ের উদ্দেশ্যে এক ঘণ্টা বিচারকাজে বসা আল্লাহ তাআলা এক বছরের ইবাদতের সওয়াব দান করেন। বিচারকাজের মাধ্যমে ফিতনা ও ফাসাদ দূর হয়, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়, ইসলামী শাসনব্যবস্থা টিকে থাকে ন্যায়ের মাধ্যমে এবং আদালতের শক্তিই শাসনব্যবস্থার শক্তি।”

তিনি আরও বলেন, “যদি বিচারব্যবস্থা না থাকে, তাহলে জালিমরা অত্যাচার করবে, মজলুমের কণ্ঠ কেউ শুনবে না এবং সমাজে ফাসাদ, ফিতনা ও দুরাচার ছড়িয়ে পড়বে।”

আফগান আমীরুল মু’মিনীন বলেন, “আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে মানুষের চারিত্রিক ও আমলী সংস্কারের জন্য বিচারকগণকে নিযুক্ত করেছেন। যে বিচারক ন্যায়ের সাথে বিচারকাজ করে সে আল্লাহর কাছে প্রিয় হয় এবং আখিরাতে তার স্থান হবে জান্নাত। ইসলামী শাসনব্যবস্থায় বিচারক ইমামের প্রতিনিধি। ইমামের পক্ষ থেকে তাকে দায়িত্ব ও নীতি প্রদান করা হয়। বিচারকদের উপর বড় দায়িত্ব অর্পিত রয়েছে, যাতে ন্যায়ের মাধ্যমে জনগণের ইসলামী শাসনব্যবস্থার প্রতি আস্থা দৃঢ় হয় এবং জনগণের অধিকার রক্ষা পায়।”

তিনি বলেন, “এটি আল্লাহর এহসান যে তিনি ইসলামী ও শরিয়াহ শাসন বাস্তবায়নের সুযোগ করে দিয়েছেন। বর্তমান সময়ে দ্বীন, ইসলাম ও শরিয়াহকে পুনরুত্থান করতে ধৈর্য, সহনশীলতা ও অবিচলতা প্রয়োজন। আলেমগণ ও বিচারকগণ নিজেদের আমল দিয়ে দ্বীন, ইসলাম ও শরিয়াহকে মানুষের সামনে তুলে ধরুন।”

আফগান আমীরুল মু’মিনীন আরও বলেন, “জিহাদের লক্ষ্য বাস্তবায়নে আদালতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আদালত দ্বীন ও ইসলামের পুনর্জাগরণ করবে, ইসলামী আকিদা, শরিয়াহ-এর প্রয়োগ ও ইসলামী চরিত্রের প্রসার ঘটাবে। পুরো শাসনব্যবস্থা আদালতের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত হবে।”

তিনি তার বক্তব্যের বিচারকগণকে তাকওয়া, বিনয়, মানুষের প্রতি ন্যায়ের সাথে আচরণ এবং কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে বিচারকাজ পরিচালনার নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, “আপনারা ন্যায়ের সাথে বিচারকাজ করে মানুষের হেদায়েতের মাধ্যম হোন। যে বিচারক ন্যায়ের উপর অটল থাকে, আল্লাহ তাআলা তাকে সাহায্য করেন। আপনারা নিজেদের বিচার কার্যক্রম ও অভিজ্ঞতার উপর বই-পুস্তক লিখে প্রকাশ করুন, যাতে ভবিষ্যৎ বিচারকগণ আপনারা যেসব অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তা থেকে উপকৃত হতে পারে। যুবক বিচারকগণ অভিজ্ঞ আলেম ও বিচারকদের সান্নিধ্যে বসে তাদের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিক।”

তিনি আরও বলেন, “বিচারকাজের ক্ষেত্রে আলেম ও নতুন প্রজন্মকে গড়ে তুলুন, একে অপরকে স্মরণ করিয়ে দিন ও আলোচনা করুন। বন্দিদের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখুন, কোনো বন্দিকে অনিশ্চয়তায় কারাগারে ফেলে রাখবেন না। বাদী-বিবাদীর মধ্যে সমতা বজায় রাখুন, রায় প্রদানের ক্ষেত্রে কারও প্রতি পক্ষপাত করবেন না এবং সব দপ্তরের সঙ্গে সহযোগিতা করুন।”

সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন ইমারাতে ইসলামিয়ার সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি, বিচারপতিরা, সামরিক আদালতের বিচারপতিরা, আমর বিল মা’রূফ ও নাহি আনিল মুনকার বিষয়ক মন্ত্রী, প্রশাসনিক দপ্তরের প্রধান, বিজ্ঞান একাডেমির প্রধান, দারুল ইফতার প্রধান, সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগের প্রধানরা, সামরিক ও দেওয়ানি আদালতের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রধান ও ক্বাজীরা, জেলা পর্যায়ের ক্বাজী সাহেবগণ ও বিশেষ আদালতের ক্বাজীরা।

সূত্র : আরটিএ

সর্বশেষ

spot_img
spot_img
spot_img