সোমবার | ৮ সেপ্টেম্বর | ২০২৫

ভারতে ফিলিস্তিনের পক্ষে আন্দোলন করায় পুলিশের মামলা দায়ের

ভারতের কেরালায় প্রো-প্যালেস্টাইন আন্দোলনের ওপর দমন-পীড়ন অব্যাহত রেখেছে প্রশাসন। এরই অংশ হিসেবে কন্নুর জেলার পাঝায়াঙ্গাড়ি পুলিশ অনুমতিহীন বিক্ষোভের অভিযোগে গার্লস ইসলামিক অর্গানাইজেশন (জিআইও)-এর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, সংগঠনের সদস্যরা প্রো-প্যালেস্টাইন স্লোগান দিয়েছেন, পতাকা ও ব্যানার তুলেছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, এফআইআর-এ অভিযুক্ত করা হয়েছে জিআইও কেরালার সাধারণ সম্পাদক আফরা শিহাব এবং আরও ৩০ জন সদস্যকে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার (ভাড়াটিয়া ন্যায় সংহিতা) ১৮৯(২), ১৯১(২), ১৯২ ধারা পাঠসহ ১৯০ ধারা। অভিযোগ—অবৈধ জমায়েত, দাঙ্গা এবং দলের সদস্যদের অপরাধের দায় বহন করা।

পুলিশের দায়ের করা মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, গত শুক্রবার সংগঠনটি পরিবেশগতভাবে সংবেদনশীল মাদাইপ্পারা এলাকায় অনুমতি ছাড়া সমবেত হয়। অভিযোগ করা হয়, তারা অপরাধ সংগঠনের উদ্দেশ্যে এবং সমাজকে অশান্ত করার অভিপ্রায়ে” বিক্ষোভ করে। এ সময় দেওয়া স্লোগানের মধ্যে ছিল , “ফ্রি, ফ্রি ফিলিস্তিন,” “ডাউন উইথ অকুপেশন,” “ইসরাইল ইজ আ টেররিস্ট স্টেট।”

তবে পুলিশ জানিয়েছে, কিছু সংগঠন এ বিক্ষোভের বিরোধিতা করেছে, কিন্তু তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। এই ঘটনার প্রেক্ষাপট হলো গাজ্জার ভয়াবহ মানবিক সংকট। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে চলমান ইসরাইলি অবরোধ ও দুর্ভিক্ষের মধ্যে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬৪,৩০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। আহত হয়েছেন ১,৬২,০০৫ জন। সমালোচকরা বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন নেতৃত্বাধীন সরকার প্রকাশ্যে ফিলিস্তিনের সমর্থনে কথা বললেও বাস্তবে পুলিশি পদক্ষেপের মাধ্যমে ভিন্ন বার্তা দিচ্ছে।

সমালোচকদের বক্তব্য

জিআইও-র সাবেক সভাপতি আফিদা আহমেদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারের পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, এফআইআর দায়েরের ভিত্তি কী। তার মতে,
“যে পুলিশ আগেই প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পক্ষে স্কার্ফ পরে অংশ নিয়েছিল, তারা এখন কর্মীদের টার্গেট করছে।”
তিনি একে আখ্যা দিয়েছেন “রাজনৈতিক ভণ্ডামি” এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে আন্দোলন দমে যাবে না।

এসআইও কন্নুর জেলা সভাপতি নিধাল সিরাজ বলেছেন, এফআইআর হলো দ্বিচারিতা। প্রো-প্যালেস্টাইন কণ্ঠস্বর দমন করার চেষ্টা কখনো সফল হবে না। ন্যায়বিচারের দাবিতে যে কণ্ঠ উঠেছে, তা রাস্তায় ও ক্যাম্পাসে জ্বলতেই থাকবে।

পরবর্তী কর্মসূচি

জিআইও ঘোষণা করেছে, তারা আগামী রবিবার কন্নুরের পায়্যাম্বলম সমুদ্রসৈকতে সংহতি সভা করবে। এই ঘোষণার মাধ্যমে তারা সরকারের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ জানাল।

প্রেক্ষাপট

ভারতে এর আগেও প্রো-প্যালেস্টাইন কর্মীদের টার্গেট করা হয়েছে। গত আগস্টে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়-এর ছাত্র তালহা মান্নান এবং আরও ৮–১০ জন অজ্ঞাত শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। অভিযোগ ছিল, তারা ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদ এবং ছাত্র ইউনিয়ন পুনর্বহালের দাবির সময় প্রো-প্যালেস্টাইন স্লোগান দিয়েছিল।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, র‌্যালি আয়োজন, প্যালেস্টাইনের পতাকা প্রদর্শন বা সামাজিক মাধ্যমে সংহতির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার মতো কর্মকাণ্ডকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা উদ্বেগজনক। তাদের মতে, এতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং সংহতির আন্দোলন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে—যা ঘটছে জনশৃঙ্খলা বজায় রাখার অজুহাতে।

সূত্র: মুসলিম মিরর

spot_img
spot_img

এই বিভাগের

spot_img