বৃহস্পতিবার | ১৮ সেপ্টেম্বর | ২০২৫

কুরআন পোড়ানোকে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দিলো জাতিসংঘ; পক্ষে-বিপক্ষে ভোট দিয়েছে যারা

পবিত্র কুরআন পোড়ানোকে ধর্ম বিদ্বেষী অপরাধ আখ্যা দিয়ে এর বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল ইউএনএইচআরসি।

সম্প্রতি জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ৫৭টি মুসলিম রাষ্ট্রের সমন্বয়ে গঠিত আন্তর্জাতিক ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা ওআইসির পক্ষে পাকিস্তান সুইডেনে কুরআন কুরআন পোড়ানো ও এর রাষ্ট্রীয় অনুমোদনের বিরুদ্ধে একটি নিন্দা প্রস্তাব পেশ করে।

ভোটাভুটির পর ইউএনএইচআরসি পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআন পোড়ানোকে ধর্ম বিদ্বেষী অপরাধ আখ্যা দেয় এবং কুরআন পোড়ানোর অনুমোদন দেওয়ায় সুইডেনের নিন্দা জানায়।

৪৭ সদস্য রাষ্ট্র বিশিষ্ট জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে ২৮ টি রাষ্ট্র এই নিন্দা প্রস্তাবের পক্ষে এবং ১২ টি রাষ্ট্র এর বিপক্ষে ভোট দেয়। বাকি ৭টি রাষ্ট্র ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে।

প্রস্তাবের পক্ষে ভোট প্রদানকারী দেশগুলো হলো, আলজেরিয়া, আর্জেন্টিনা, বাংলাদেশ, বলিভিয়া, ক্যামেরুন, চীন, আইভরি কোস্ট, কিউবা, ইরিত্রিয়া, গ্যাবন, গাম্বিয়া, ভারত, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, মালাউই, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মরক্কো, পাকিস্তান, কাতার, সেনেগাল, সোমালিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, সুদান, ইউক্রেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, উজবেকিস্তান এবং ভিয়েতনাম।

আর বিপক্ষে ভোট প্রদানকারী দেশগুলো হলো, বেলজিয়াম, কোস্টারিকা, চেক প্রজাতন্ত্র, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, লিথুনিয়া, লুক্সেমবার্গ, মন্টিনিগ্রো, রোমানিয়া, ব্রিটেন এবং আমেরিকা।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল ইউএনএইচআরসির পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র হওয়ায় এতে অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ ছিলো না তুরস্কের। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বে তাদেরও ভোট প্রদান থেকে বিরত থাকতে হয়েছে।

তবে ন্যাটো সম্মেলন শেষে বুধবার (১২ জুলাই) এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান কুরআন পোড়ানোর বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থানের কথা জানান দেন। জাতিসংঘে নিন্দা প্রস্তাবের বিরুদ্ধে অবস্থানকারীদের কঠোর সমালোচনা করেন। আর পক্ষে ভোট প্রদানকারী দেশ ও ইউএনএইচআরসির প্রশংসা করেন।

তিনি বলেন, “ভিলনিয়াসে ২দিন ব্যাপী ন্যাটো সম্মেলনে কেনো কুরআন পোড়ানো জঘন্য অপরাধ, কেনো সুইডেনকে তাদের দেশে এর অনুমোদন বাতিল করা উচিত এবিষয়ে আমরা যাবতীয় তথ্য নথি আকারে উপস্থাপন করেছি। তাদেরকে নিন্দা জানাতে ও অনুতপ্ত হতে বাধ্য করেছি।”

“জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের বৈঠকে কুরআন পোড়ানোর প্রতিবাদে জাতিসংঘে এর বিরুদ্ধে ওআইসি কর্তৃক উত্থাপিত নিন্দা প্রস্তাবের বিপক্ষে যারা অবস্থান নিয়েছে, তাদের উচিত নিজেদের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার নীতি নিয়ে পুনর্বিবেচনা করা। কেননা ধর্ম ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত কখনোই বাক স্বাধীনতা হতে পারে না, বরং তা বিদ্বেষ ও সন্ত্রাসবাদের একটি নিকৃষ্ট প্রকার।”

এছাড়া নিন্দা প্রস্তাব গৃহীত হওয়ায় ওআইসির পক্ষে কাউন্সিলে প্রস্তাব উত্থাপনকারী রাষ্ট্র পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফও ইউএনএইচআরসি ও এর পক্ষে অবস্থানকারীদের সাধুবাদ জানান।

এই পাক প্রধান এক টুইট বার্তায় বলেন, সুইডেনে কুরআন পোড়ানোর ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। যেকোনো ধর্মীয় প্রতীক, ধর্মগ্রন্থ ও ধর্মীয় পবিত্র ব্যক্তিত্ব (নবী-সাহাবীদের মতো ধর্মপ্রচারক) তাদের অনুসারীদের নিকট পবিত্র এবং শ্রদ্ধা ও সম্মানের পাত্র। যারা পবিত্র কুরআন পোড়ানোর মতো জঘন্য ও বিদ্বেষমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত তাদের আসল চেহারা বিশ্বের সামনে তুলে ধরা দরকার।

তিনি আরো বলেন, ধর্ম বৈচিত্র্য, সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা ও ধর্মীয় সহনশীলতার মূল্যবোধই হলো মানবতা রক্ষায় ঐক্যের সবচেয়ে ভালো রক্ষাকবচ।

সূত্র: আনাদোলু

spot_img
spot_img

এই বিভাগের

spot_img