ভারতে গো-রক্ষার নামে ডেইরি ফার্ম ব্যবসায়ী ও তার বন্ধুকে গণপিটুনি দিয়ে হতাহত করেছে উগ্র হিন্দুত্ববাদী বজরং দলের সদস্যরা।
বুধবার (১৮ জুন) মুসলিম মিররের খবরে একথা জানানো হয়।
খবরে বলা হয়, মধ্যপ্রদেশের বিদিশা থেকে গরু নিয়ে ভোপাল যাওয়ার সময় ২ মুসলিম তরুণ উগ্র হিন্দুত্ববাদী বজরং দলের ২০-২৫ জনের একটি দলের গণপিটুনির শিকার হয়েছেন। গো-রক্ষার নামে দলটি ওই ২ তরুণকে ব্যাপক মারধর করে। মেহগাঁও গ্রামের নিকটে এই সন্ত্রাসবাদী ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে।
এই ঘটনায় গত ১৭ জুন চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজনের মৃত্যু হয় এবং অপরজন এখনো আশঙ্কাজনক অবস্থায় বেঁচে আছেন। স্থানীয়রা গত ৫জুন তাদের গুরুতর অবস্থায় ভোপালের হামিদিয়া হাসপাতালে এনে ভর্তি করিয়েছিলেন।
সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা মুসলিম তরুণটির নাম জুনায়েদ (২৪) ও এখনো আশঙ্কাজনক অবস্থায় থাকা অপর মুসলিম তরুণটির নাম আরমান (২১)। নিহত জুনায়েদ নিজেই গবাদিপশু ও ডেইরি ফার্ম ব্যবসায়ী ছিলেন। অপরদিকে আরমানের পরিবারও ডেইরি ব্যবসার সাথে যুক্ত ছিলো। গত ৫ জুন ১০টি গরু নিয়ে তারা বিদিশা থেকে ভোপাল যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে মেহগাঁও গ্রামের নিকটে পথরোধ করে তাদের উপর নৃশংসভাবে হামলা চালানো হয়। ২ লক্ষ টাকা লুট করা হয়। স্থানীয় সাঁচি থানার পুলিশও এতে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসী দলটিকে সহায়তা করে। গণপিটুনির শিকার ২ তরুণ থানায় থাকা অবস্থায় উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা থানায় গিয়ে পুলিশের সামনেই পুনরায় তাদের ব্যাপক মারধর করে।
স্থানীয়রা জানান, পুলিশ মামলা নিতে ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও গড়িমসি করে। পরবর্তীতে হালকা ধারায় অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা নেয়। অপরাধীরা অবাধে ঘুরে বেড়ালেও তাদের গ্রেফতার করতে প্রায় ২ সপ্তাহ দেরি করে। এফআইআরে নাম থাকা শুধু ৩ জনকে গ্রেফতার করে।
অভিযোগ অনুযায়ী, স্থানীয় বজরং দলের সদস্য চন্দন পুষওয়া ও সঞ্জু ধ্রুব মহারাজ ৫ জুন মধ্যরাতের হামলায় উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তবে এফআইআরে স্পষ্টভাবে ৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। তারা হলেন, ধ্রুব চতুর্বেদী, রামপাল রাজপুত এবং গগন দুবে। তাদের সকলেরই সহিংসতামূলক অপরাধের পূর্ব রেকর্ড রয়েছে। ঘটনার প্রায় ২ সপ্তাহ পর গতকাল তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। বাকি অভিযুক্তদের ধরতে পুলিশ তল্লাশি অভিযান অব্যাহত রেখেছে বলে জানায়।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া হামলার একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, মার খেতে থাকা দুই মুসলিম তরুণের একজন কাঁদতে কাঁদতে বলছেন, “ভগবানের জন্য আমাদের ছেড়ে দাও।”
আরেক ভিডিওতে দেখা যায়, হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া বজরং দলের সদস্য ও জননেতা হিসেবে পরিচিত ধ্রুব চতুর্বেদী দাবী করছেন যে, তারা গো-রক্ষা করতে এসেছেন। তাদের পাথরও মারা হয়েছে।
নিহত জুনায়েদের বাবা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “যদিও আমার ছেলে গরু নিয়ে যাচ্ছিলো, তাই বলে কি তারা তাকে মেরে ফেলার অধিকার পেয়ে যাবে? কে তাদের এই অধিকার দিলো? দেশটা কেমন থেকে কেমন হয়ে যাচ্ছে!