এআই সামরিক ড্রোন নির্মাণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ঘোষণা দিয়েছে উ.কোরিয়া।
শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে একথা জানানো হয়।
দেশটির সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন বলেন, দেশের ক্রমবর্ধমান অত্যাধুনিক অস্ত্র প্রযুক্তির আধুনিকীকরণ এবং ড্রোন সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এর ব্যবহার আজ থেকে সরকারের ‘সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার’ বলে গণ্য হবে।
দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ) জানায়, বৃহস্পতিবার রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ে মানবহীন বিমান প্রযুক্তি কমপ্লেক্সে বহুমুখী ড্রোন এবং মানবহীন নজরদারি যানবাহনের পারফরম্যান্স পরীক্ষার একটি আয়োজন হয়। প্রেসিডেন্ট কিম এই অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন।
কেসিএনএর তথ্য অনুসারে, অনুষ্ঠানে উত্তর কোরিয়ার এই নেতা তার সেনাবাহিনীকে মনুষ্যবিহীন অস্ত্র ব্যবস্থা বৃদ্ধির জন্য নতুন প্রবর্তিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশের উপর জোর দিয়েছেন। এটিকে সরকারের সর্বাধিক অগ্রাধিকার বলে ঘোষণা করেছেন।
তিনি ড্রোনের ধারাবাহিক উৎপাদন ক্ষমতা সম্প্রসারণের প্রতি ও একে শক্তিশালী করে তোলারও আহ্বান জানিয়েছেন।
আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য ডিজাইন করা একটি নতুন কঠিন জ্বালানি রকেট ইঞ্জিনের পরীক্ষা তদারকি করার ঠিক এক সপ্তাহ পরেই বিমান কমপ্লেক্সে এই সফরটি অনুষ্ঠিত হলো, যাকে তিনি পিয়ংইয়ংয়ের পারমাণবিক ক্ষমতার গুরুত্বপূর্ণ সম্প্রসারণ হিসাবে প্রশংসা করেছেন ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা (ডিআইএ) এর তথ্য অনুসারে, উত্তর কোরিয়ার সামরিক শক্তির উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে, পারমাণবিক অস্ত্র, পরমাণু ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, পারমাণবিক অস্ত্রের ক্রমবর্ধমান মজুদ এবং একটি নতুন গুপ্তচর উপগ্রহ কর্মসূচি।
দেশটির এসব প্রকল্পে সক্রিয় কর্তব্যরত কর্মীদের সংখ্যা বর্তমানে আনুমানিক ১০ লক্ষ এবং তাদের পরিপূরক হিসেবে প্রায় ২.৫৬ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ৭ লক্ষাধিক রিজার্ভ সৈন্য রয়েছে।
স্বাধীন বিশ্লেষণ গ্রুপ ‘৩৮ নর্থ’ এর একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও উত্তর কোরিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার শিক্ষাবিদদের সাথে আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতামূলক এআই গবেষণায় লিপ্ত। যা প্রকাশ করে যে, দেশটি এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দৌড়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
৩৮ নর্থ রিপোর্টে আরো বলা হয় যে, উত্তর কোরিয়ার এসব প্রচেষ্টা মূলত বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী এআই খেলোয়াড় চীনের উপর নির্ভর করছে।
সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, পিয়ংইয়ং যদিও দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে চীনের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু কিমের অধীনে তারা রাশিয়ার সাথেও সম্পর্ক জোরদারে দৃঢ়ভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
গত বছর কিম এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একটি পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন, যা পশ্চিমা বিশ্বের ভ্রু কুঁচকানোর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো।
এই চুক্তি থেকে পিয়ংইয়ং মস্কোর মতো ব্যাপকভাবে লাভবান না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
একটি জার্মান থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সম্প্রতি জানিয়েছে যে, উত্তর কোরিয়া মস্কোকে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র সরবরাহ করেছে। পাশাপাশি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাশিয়ান বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য কয়েক হাজার সৈন্য পাঠিয়েছে। কিন্তু বিনিময়ে তারা মাত্র ৪৫৭ মিলিয়ন ডলার থেকে ১.১৯ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে।
দেশটিকে মস্কোর সাহায্যের মধ্যে রয়েছে মূলত খাদ্য, জ্বালানি, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং সম্ভবত কিছু যুদ্ধবিমান।
এই মাসের শুরুতে, কিম তার চীনা এবং রাশিয়ান উভয় সমকক্ষীয় প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে বেইজিংয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন। যা বিশ্ব মঞ্চে দেশটির স্থান করে নেওয়ার আকাঙ্ক্ষার স্পষ্ট বহি:প্রকাশ হিসাবে উল্লেখ করেছেন বিশ্লেষকরা।
গত মে মাসে ডিআইএ জানিয়েছে যে, উত্তর কোরিয়া কয়েক দশকের মধ্যে তার সবচেয়ে শক্তিশালী কৌশলগত অবস্থানে রয়েছে। উত্তর-পূর্ব এশিয়ায় মার্কিন বাহিনী এবং মার্কিন মিত্রদের ঝুঁকিতে রাখার জন্য সামরিক শক্তির অধিকারী দেশটি একই সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকি দেওয়ার ক্ষমতাও উন্নত করছে।
এছাড়াও দেশটির সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন আমেরিকা ও দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ সামরিক মহড়াকে তার দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসী যুদ্ধের মহড়া হিসেবেও অভিহিত করেছেন।