ট্রান্সজেন্ডার ও নন-বাইনারি পরিচয়বাহী পাসপোর্ট নিষিদ্ধকরণ চালিয়ে যেতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে আমেরিকার ট্রাম্প প্রশাসন।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে একথা জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রান্সজেন্ডার ও নন-বাইনারি পরিচয়বাহী পাসপোর্ট নিষিদ্ধ কার্যক্রম চালিয়ে যেতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে আমেরিকার ট্রাম্প প্রশাসন।
শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টে ফেডারেল বিচারকের আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে একটি জরুরী অনুরোধ করা হয়, যে আদেশ মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরকে বাইনারি নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে ‘হয়তো পুরুষ নয়তো নারী’ ট্রাম্পের এই লিঙ্গ নীতি পাসপোর্টে কার্যকর করতে বাধা দিচ্ছিলো।
ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষে বিচার বিভাগের আইনজীবীরা এসময় নিজেদের অনুরোধের পক্ষে যুক্তিতে বলেন যে, সরকারি নথিতে ভুল লিঙ্গ (ট্রান্সজেন্ডার/নন-বাইনারী) দ্বারা কাউকে চিহ্নিত করতে সরকারকে বাধ্য করা যাবে না। কারণ, সরকারি সম্পত্তি ও বিদেশি সরকারগুলোর সাথে যোগাযোগ করার ক্ষেত্রে এটি প্রেসিডেন্টের সাংবিধানিক ও আইনি ক্ষমতার অংশ।
অপরদিকে বাদীপক্ষের (ট্রান্সজেন্ডার ও নন-বাইনারী) প্রতিনিধিত্বকারী নাগরিক অধিকার সংগঠন এসিএলইউ (ACLU) এর সিনিয়র কাউন্সিল জন ডেভিডসন বলেন, প্রশাসনের এই নীতি অন্যায্য। এটি বৈষম্যমূলক পদক্ষেপ, যা ট্রান্সজেন্ডার, নন-বাইনারি এবং ইন্টারসেক্স নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সীমিত করছে।
তিনি আরো বলেন, এই প্রশাসন সংবিধানের আওতায় ট্রান্সজেন্ডার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং অন্যান্য অধিকার সীমিত করতে ধারাবাহিকভাবে পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা সেই অধিকারগুলোর সুরক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাদের নিরাপদে ভ্রমণের স্বাধীনতা এবং প্রত্যেকের নিজের মতো থাকার স্বাধীনতাও এর অন্তর্ভুক্ত।
সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, ট্রাম্প প্রশাসন সাবেক বাইডেন প্রশাসন কর্তৃক ২০২২ সালে চালু করা একটি নীতি বাতিল করতে চাইছে। যে নীতির অধীনে পাসপোর্ট আবেদনকারীরা একটি নিরপেক্ষ লিঙ্গ চিহ্ন বেছে নেওয়ার সুযোগ পেতেন এবং যে কেউ ইচ্ছামতো নিজেকে পুরুষ (M) অথবা নারী (F) হিসেবে চিহ্নিত করতে পারতেন। যদিও তাদের প্রকৃত লিঙ্গ পরিচয় অন্যকিছু হোক না কেনো।
ইউসিএলএ’র উইলিয়ামস ইনস্টিটিউট-এর তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে আনুমানিক ১৬ লাখ মানুষ নিজেদের ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে চিহ্নিত করে থাকেন। এছাড়া নন-বাইনারি হিসাবে ১২ লাখ এবং ইন্টারসেক্স হিসাবে ৫০ লাখ।
নির্বাহী আদেশ:
পুনরায় আমেরিকার ক্ষমতায় আসা ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে তার বহু নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণের উদ্যোগ নেন। ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুটি এর অন্যতম।
ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের ফলে এই অভিশপ্ত কমিউনিটির লোকজন সেনাবাহিনীতে চাকরি বা সেবা প্রদানের সুযোগ হারায়। কারণ ট্রাম্প সাক্ষরিত নির্বাহী আদেশ সরকার ও প্রশাসনকে কেবল দুটি জৈবিকভাবে ভিন্ন লিঙ্গের স্বীকৃতি দিতে নির্দেশ দেয়, হয়তো পুরুষ নয়তো নারী।
ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে লিঙ্গকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে একজন ব্যক্তির অপরিবর্তনীয় জৈবিক শ্রেণিবিন্যাস হিসেবে, যা পুরুষ বা নারী হয়ে থাকে।
স্টেট ডিপার্টমেন্ট বা পররাষ্ট্র দপ্তরকেও এমন পাসপোর্ট ইস্যু করার নির্দেশ দেয়া হয়, যা এই সংজ্ঞার ভিত্তিতে ধারকের লিঙ্গ সঠিকভাবে প্রতিফলিত করবে।
এই আদেশের ফলে অনেক ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তি ভুল লিঙ্গ চিহ্নসহ পাসপোর্ট পাওয়ার অভিযোগ উঠিয়েছেন।
ট্রান্সজেন্ডার অভিনেত্রী হান্টার শ্যাফার ফেব্রুয়ারিতে জানান, তার নতুন পাসপোর্টে পুরুষ লিঙ্গ চিহ্ন দেওয়া হয়েছে, অথচ তিনি নারী লিঙ্গ চিহ্ন দিয়ে আবেদন করেছিলেন, যা তার ড্রাইভিং লাইসেন্স ও আগের পাসপোর্টেও ব্যবহার করা হয়েছিলো।
গত জুনে নন-বাইনারি ও ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিদের মামলার পর এক ফেডারেল বিচারক ট্রাম্প প্রশাসনের এই নীতি স্থগিত করে। একটি আপিল কোর্টও এই বিচারকের আদেশ বহাল রাখে।
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) ট্রাম্প প্রশাসন সুপ্রিম কোর্টকে অনুরোধ করে যে, মামলা চলমান অবস্থায় ফেডারেল বিচারকের আদেশটি যেনো স্থগিত রাখা হয়।
সোলিসিটর জেনারেল ডি জন সাওয়ার এই প্রসঙ্গে লিখেন, সংবিধান সরকারকে ব্যক্তির জৈবিক শ্রেণিবিন্যাসের ভিত্তিতে লিঙ্গকে সংজ্ঞায়িত করতে নিষেধ করে না।
তিনি উচ্চ আদালতের সাম্প্রতিক এক রায়ের দিকেও ইঙ্গিত করেন, যেখানে কিশোর-কিশোরীদের জন্য লিঙ্গ পরিবর্তনসংক্রান্ত স্বাস্থ্যসেবার ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখা হয়েছিলো। আদালত বলেছিলো, এটি লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যের শামিল নয়।