বৃহস্পতিবার | ১৮ সেপ্টেম্বর | ২০২৫

মিথ্যা মামলায় নির্দোষ প্রমাণিত হলেন ইসলামিক স্কলার তারিক রমাদান; ক্ষতিপূরণ পেলেন দেড় লক্ষাধিক ডলার

ধর্ষণ ও যৌন হেনস্থার মিথ্যা মামলা থেকে খালাস পেলেন প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার তারিক রমাদান।

বুধবার (২৪ মে) অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কোনো ধরণের তথ্যপ্রমাণ না পাওয়ায় তাকে নির্দোষ সাব্যস্ত করে সুইজারল্যান্ডের একটি আন্তর্জাতিক আদালত।

মিথ্যা মামলার দায়ে উল্টো অক্সফোর্ডের এই সাবেক প্রফেসরকে ১ লক্ষ ৫১ হাজার সুইস ফ্রাঙ্ক বা ১ লক্ষ ৬৭ হাজার মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দেয় সুইস ক্যান্টন অফ জেনেভা।

জানা যায়, মামলাটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন প্রমাণিত হওয়ায় রায় শুনানোর সময় বিচারক মুচকি মুচকি হাসছিলেন। আর মামলা দায়েরকারী ৫৭ বছর বয়সী সুইস নারী ব্রিগিট্টি রায় সম্পূর্ণ পড়ে শুনানোর আগেই স্থান ত্যাগ করে আদালত থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন।

মূলত সুইস নারী ব্রিগিট্টি এই প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলারের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে মামলা দায়ের করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলো তিনি ২০০৮ সালে সুইজারল্যান্ডের এক হোটেলে তাকে ধর্ষণ করেছিলেন।

সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিগিট্টির আইনজীবীরা গত সপ্তাহে সুইজারল্যান্ডের আন্তর্জাতিক আদালতে তারিক রমাদানকে ৩ বছরের কারাদণ্ড প্রদানের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু কোনো ধরণের তথ্যপ্রমাণ না থাকায় মামলাটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও তারিক রমাদান নির্দোষ প্রমাণিত হোন।

এছাড়া ফ্রান্সেও তার বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার মামলা ছিলো। ব্রিগিট্টি সহ বেশ কয়েকজন নারী সেসব মামলা দায়ের করেছিলেন। সেসব থেকেও তিনি বেকসুর খালাস পান।

মামলা নিষ্পত্তির পর ব্রিগিট্টির আইনজীবী সংবাদমাধ্যমকে জানান, তারা জেনেভা ক্রিমিনাল কোর্টে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন।

আদালতের কাঠগড়ায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তারিক রমাদান বলেছিলেন, এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তার মাঝে ও ব্রিগিট্টির মাঝে কোনো ধরণের যৌন কার্যকলাপ হয়নি। তাকে মূলত ষড়যন্ত্র করে ফাঁদে ফেলা হয়েছে।

এছাড়াও তিনি বিচারকদের উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, আপনাদের আমি আমার বিরুদ্ধে পরিচালিত রাজনৈতিক ও মিডিয়া প্রোপাগাণ্ডায় মোটেও কান না দেওয়ার অনুরোধ করছি। আর আমার বাস্তব আদর্শ ও যে আদর্শ আমি অনুসরণ করি বলে অনুমান করে সবাই তাতেও প্রভাবিত না হওয়ার আহবান জানাচ্ছি। ক্ষনিকের জন্য ভুলে যান যে, আমিই তারিক রমাদান।

ধর্ষণ এবং যৌন হেনস্থার শিকার হওয়ার যে সময়ের কথা সে উল্লেখ করেছে তখন সে ছিলো ৪০ ছুই ছুই বয়সের। অথচ তখন অভিযোগ দায়ের করেনি সে। বরং ১০ বছর পর এসে অভিযোগ দায়ের করছে। আর বলছে এই ১০ বছর তার অভিযোগ দায়ের করার সাহস হয়নি! ফ্রান্সে যৌন হেনস্থা ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ায় সে এবিষয়ে মুখ খুলতে সাহস করেছে! এটা তো উদ্দেশ্য প্রণোদিত ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না।

তারিক রমাদানের আইনজীবীদের বক্তব্য থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালে “হেসট্যাগ মি-টু” (#MeToo) আন্দোলনের সময় ব্রিগিট্টিসহ আরো অনেক নারী ফ্রান্সে তারিক রমাদানের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও যৌন হেনস্থার অভিযোগ আনলে ফ্রান্সে তাকে গ্রেফতার হতে হয়েছিলো। পরবর্তীতে অবশ্য তিনি জামিন পান। কিন্তু সব ধরণের অভিযোগ তিনি শুরু থেকেই প্রত্যাখ্যান করে আসছিলেন।

তার আইনজীবীদের ভাষ্যমতে, পৃথিবীর অন্যতম সফল বিপ্লবী ইসলামী সংগঠন মিশরের ইখওয়ানুল মুসলিমীনের প্রতিষ্ঠাতার পরিবারের সদস্য হওয়ায় বিভিন্ন নারীবাদী সংগঠন ও পশ্চিমারা রমাদানফোবিয়ায় ভুগে থাকেন। যেমনটি ইখওয়ান বা মুসলিম ব্রাদারহুডের বেলায়ও আতঙ্ক কাজ করে তাদের। তাই তাকে ধরাশায়ী করতে পরিকল্পনা করে এসব মামলায় জড়ানো হচ্ছে এই মান্যগণ্য স্কলারকে।

উল্লেখ্য; অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির এই সাবেক প্রফেসর প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার তারিক রমাদান হলেন বিখ্যাত মুসলিম ব্যক্তিত্ব ও ইখওয়ানের প্রতিষ্ঠাতা হাসান আল বান্নার নাতী। ১৯৬২ সালের ২৬ আগস্ট সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

সুইজারল্যান্ডের জেনেভা ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করে ২০১৭ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বিশ্ববিখ্যাত অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির কন্টেম্পোরারি ইসলামিক স্টাডিজের প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

পরবর্তীতে ধর্ষণের মতো গুরুতর মিথ্যা অভিযোগের প্রেক্ষিতে অক্সফোর্ড থেকে তাকে সরে দাঁড়াতে হয়।

সূত্র: আল জাজিরা

spot_img
spot_img

এই বিভাগের

spot_img